Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২০ মে’র আগে আম কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে

প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের এক বার্তায় জানানো হয়েছে, ক্রেতারা যদি কেমিক্যালমুক্ত পাকা আম পেতে চায় তবে ২০ মে’র আগ পর্যন্ত তাদের আম কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিএআরসি’র  নিউট্রেশন ইউনিটের পরিচালক মনিরুল ইসলামের মতে, মানুষের মধ্যে আগাম ফল বিশেষ করে আম কেনার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আম পরিপক্ব হয়েছে, কি হয়নি সেটা তারা আমলে নিতে চায় না। তার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সাতক্ষীরাতে কিছু আমের জাত দেখা যায়, যেগুলো মে’র ২০-২৫ তারিখের মধ্যে পেকে যায়। এর আগে যদি পাকা আম পাওয়া যায়, ধরে নিতে হবে তা কারবাইড দিয়ে পাকানো। আম এ দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি ফল। পাকা আম পছন্দ করে না এমন মানুষ বিরল। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের আরো বহু দেশে আমের জনপ্রিয়তা ও কদর রয়েছে। বাংলা সাহিত্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন সাহিত্যে আমের গুণকীর্তন বর্ণিত হয়েছে। পাকা আমের মধুর রসে মুখ রঙিন করার আকাক্সক্ষা সবাই পোষণ করে। একবার এই রসালো ফলটি যে খেয়েছে, তার পক্ষে এই অভিজ্ঞতা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। আমকূটনীতির কথাও আমরা জানি। আম একটি বাণিজ্যিক পণ্যও বটে। আমাদের দেশে কয়েকশ’ জাতের আম হয়। সবচেয়ে বেশি হয় রাজশাহীতে। রাজশাহী আমের জন্য খ্যাতি পেয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর আমের মওসুমে বিভিন্ন দেশ থেকে আম আমদানিও হয়ে থাকে।  জৈষ্ঠ্য মাসকে মধুমাস হিসেবে অভিহিত করা হয় যদিও জুন মাসেই সবচেয়ে উন্নত জাতের ও খ্যাতিমান আমগুলো বাজারে আসে। এক সময় সারাদেশেই কিছু জাতের আম পাওয়া যেত যেগুলো বৈশাখ মাসেই পেকে যেত। সেসব জাতের আম আর এখন খুব একটা দেখা যায় না। সুতরাং ভালো আম খেতে হলে মে’র শেষ দিক থেকে জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উচিত।
এখন রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আম গাছে বউল আসছে। কোথাও কোথাও বউল থেকে গুঁটিও দেখা দিচ্ছে। বউল ও বউল থেকে গুঁটিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর্যায় অতিক্রম করে আম পরিপক্ব হতে প্রায় তিন মাস লেগে যাবে। অতীতের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, তার আগেই পাকা আমে বাজার ভরে গেছে। একশ্রেণীর উৎপাদক ও ব্যবসায়ী আপরিপক্ব আম পেড়ে কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বাজারে তুলেছে। কেমিক্যালমিশ্রিত আমে যেমন কোনো স্বাদ থাকে না তেমনি ফল হিসেবে  এর  যে নিউট্রেশন ভ্যালু, তাও থাকে না। উপরন্তু এ আম স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। গত কয়েক মওসুমে প্রচুর কেমিক্যাল মিশ্রিত আম জব্দ করে ধ্বংস করে দিতে দেখা গেছে। গত বছর গাছ থেকে আম পাড়ার ক্ষেত্রে একটা বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছিল। এতে কেমিক্যাল মুক্ত মিশ্রিত আম পাওয়া সম্ভব হলেও উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল, তারা ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। যে কোনো মূল্যে কেমিক্যালমুক্ত আমের নিশ্চয়তা বিধান করা আবশ্যক হলেও অন্যান্য দিকও দেখতে হবে। এ ব্যাপারে উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের মোটিভেট করার কাজটি গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। তারা যাতে উৎপাদন ও বাজারজাত করার পর্যায়ে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার থেকে বিরত থাকে, আম পরিপক্ব হলেই যেন পাড়ে ও বাজারজাত করে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বেশি দিন থাকলে পাকা আমে পচন ধরার যেহেতু আশঙ্কা রয়েছে, কাজেই বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া দ্রুতায়িত করতে হবে। এভাবেই কেমিক্যালমুক্ত আম পাওয়া ও খাওয়া সম্ভব হতে পারে।
এখনই ঢাকার ফলবাজারে পাকা আম পাওয়া যাচ্ছে। দেশের অন্যত্রও হয়তো পাওয়া যাচ্ছে। তবে পরিমাণে কম এবং দাম আকাশচুম্বী। আম আমদানিকৃত এবং প্রধানত ভারত থেকেই আমদানি করা। আম দেখতে মনলোভা হলেও স্বাদ-গন্ধহীন। এর নিউট্রেশন ভ্যালু কতটা বিশেষজ্ঞরাই তা ভালো বলতে পারবেন। আগাম জাতের এ আম কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো কি না সে ব্যাপারে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে কি না আমাদের জানা নেই। শুধু আমই নয়, অন্যান্য আমদানিকৃত ফল নিয়েও ক্রেতাদের মধ্যে প্রশ্ন ও সন্দেহ রয়েছে। এই প্রশ্ন ও সন্দেহ দূর করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথোপযুক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কেমিক্যাল মিশ্রিত, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো ফল যাতে বাজারে ঢুকতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। প্রাসঙ্গিকভাবে বলা দরকার, আমের মওসুমে প্রচুর পরিমাণে আম আমদানি হয়। এতে প্রতি বছরই উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ে। বলার অপেক্ষা রাখে না, উৎপাদকরা আমের উপযুক্ত মূল্য না পেলে আম চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। দেশে আম চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে এমন কিছু জাতের আম উদ্ভাবন করেছেন যা উচ্চ ফলনশীল এবং রোগ-বালাই থেকে অনেকটাই নিরাপদ। বারোমাসি একটি জাতের উদ্ভাবন তারা করেছেন যা স্বাদে-গন্ধে-মানে অতুলনীয়। এই জাতটির বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্প্রসারিত হলে সারা বছরই আম পাওয়া যাবে। এক বছরে এই জাতের গাছ থেকে চারবার পাকা আম পাওয়া যাবে। এসব দিক খেয়াল রেখে ভরা মওসুমে আমদানির বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিতে হবে। আমদানি যতটা সম্ভব কমাতে হবে এবং প্রয়োজনে শুল্ক বাড়িয়ে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ২০ মে’র আগে আম কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে
আরও পড়ুন