Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সামিট

| প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সামিট-এ যোগ দিতে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সউদী আরব যাচ্ছেন। সউদী বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সউদের আমন্ত্রণে তাঁর এই সফর। সামিটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ আরব ও বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান যোগ দেবেন। এদের মধ্যে রয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, ইরাকের প্রেসিডেন্ট ফুয়াদ মাসুম প্রমুখ। আগামীকাল সউদী আরবের রাজধানী রিয়াদে এ সামিট শুরু হবে। এতে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় নতুন অংশীদারত্বমূলক জোট গঠন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সউদী নেতৃত্বাধীন সেনা জোটে বাংলাদেশ যুক্ত হয়। তখন এ জোটে বাংলাদেশের সৈন্য পাঠানো নিয়ে এক ধরনের বিতর্ক দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা মত দেন, যুদ্ধ করার জন্য জোটে সৈন্য পাঠানো সঠিক হবে না। বাংলাদেশ সরকারও সৈন্য পাঠানোর ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেয়। বলা হয়, বাংলাদেশ গবেষণা কার্যক্রম ও তথ্য আদান-প্রদানের কাজে সীমাবদ্ধ থাকবে। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সউদী সফর উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. এইচ. মাহমুদ আলী স্পষ্ট করেই বলেছেন, বাংলাদেশ তার আগের অবস্থানেই রয়েছে। তবে বিশ্বের মুসলমানদের সবচেয়ে আবেগপূর্ণ ও পুণ্য স্থান মক্কা ও মদীনা যদি কখনো কারো দ্বারা আক্রান্ত বা হুমকির সম্মুখীন হয়, তখন সৈন্য পাঠানো হবে। এছাড়া এ জোটের মাধ্যমে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, সন্ত্রাসবাদ আজ একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা মোকাবেলায় মুসলিম দেশগুলোর সমন্বয়ে সউদী নেতৃত্বে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় মূলত এ জোট গঠন করা হয়। এতে বিভিন্ন মুসলমান দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশও এতে যোগ দিয়েছে। এর অপরিসীম স্ট্র্যাটিজিক গুরুত্বও রয়েছে। এটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির একটি উজ্জ্বল দিক।
বিশ্বের শীর্ষ পরাশক্তি দেশসহ মুসলমান দেশগুলোর এ সামিটে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে নতুন এক ওয়ার্ল্ড অর্ডার হতে যাচ্ছে, যেখানে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় মুসলমান দেশগুলোর নেতৃত্বের শক্তিশালী অবস্থান স্পষ্ট হবে। এ সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ দেয়া অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং গৌরবের। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ জোটে যোগ দেয়ার একক সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর দূরদর্শী চিন্তাভাবনা এবং কৌশলী পররাষ্ট্র নীতির সুফলের কারণেই জোটে যোগ দেয়া সম্ভব হয়। এটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির একটি বড় সাফল্য হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা এবং অর্থনৈতিক জোট গঠনের প্রক্রিয়া নতুন কিছু নয়। বিষয়টি উপলব্ধি করে মুসলমান দেশগুলোর স্বার্থ ও নিরাপত্তা জোরদার করতেই সউদী আরবের নেতৃত্বে এ জোট আত্মপ্রকাশ করে। এতে বিশ্বে মুসলমানদের যে একতা ও শক্তি, তার প্রকাশ ঘটেছে। বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলোও বুঝতে পেরেছে, এ জোটকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিষয়টি যথাযথভাবে উপলব্ধি করেই জোটে যোগদান করেছেন। এতে মুসলিম বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্ক যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও ব্যাপক সুযোগ লাভ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথেও যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সুসম্পর্ক সৃষ্টির প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। সম্মেলনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাইড লাইন বৈঠক হবে। এতে দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের যেমন উন্নয়ন হবে, তেমনি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রও প্রস্তুত হবে। বলা বাহুল্য, পুরো বিশ্ব এখন একটি গেøাবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। অঞ্চল ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশ জোটবদ্ধ হয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির পন্থা অবলম্বন করছে। নিজেদের শক্তিশালী করে বিশ্বে অবস্থান সুসংহত করছে। পরিবর্তনশীল এই বিশ্বধারা থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকতে পারে না। আমাদেরও সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বিভিন্ন জোটের সাথে শামিল হতে হবে। সউদী নেতৃত্বাধীন সেনাজোটে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছে। যুদ্ধে না জড়ানো বা এড়িয়ে এ জোটে যুক্ত হওয়া নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অনেকটা একমুখী হয়ে পড়েছে বলে এক ধরনের অভিযোগ ছিল। আশার কথা, দিন যাওয়ার সাথে সাথে এবং বিশ্বের ক্রমবর্ধমান মেরুকরণের কারণে বাংলাদেশ এই পররাষ্ট্রনীতি থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে চলেছে। ভাবমর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সউদী জোটে আমন্ত্রণ এবং যোগ দেয়া, তার অন্যতম উদাহরণ। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তিধর দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের বিষয়টি ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। দেশগুলো বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং বিনিয়োগও করছে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল বিষয় হচ্ছে, কারো সঙ্গে শত্রæতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্ব। এ নীতির পথ ধরে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলেছে বলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে। সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমান দেশ হিসেবে আমাদের যে আত্মপরিচয়, এ পরিচয় নিয়েই সবার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা কাম্য। আমাদের দেশের মতো উন্নয়নকামী দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতি এমনই হওয়া উচিত যে, প্রত্যেকের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়া। আমরা মনে করি, আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সামিট-এ প্রধানমন্ত্রীর যোগ দেয়ার মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের সাথে যেমন সম্পর্ক গভীর হবে, তেমনি শক্তিধর দেশগুলোর সাথেও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠবে।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আরব-ইসলামিক
আরও পড়ুন