পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ার ব্যক্তিগতভাবে ব্যথিত-রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী : সাঈদীকে বাঁচাতে পেরেছি, এতেই খুশি- আসামী পক্ষের আইনজীবী : ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি -সাঈদীর ছেলে
মালেক মল্লিক : মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আমৃত্যু কারাদন্ড প্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় (পুনর্বিবেচনা) রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে তাকে আপিলে দেয়া আমৃত্যু কারাদন্ডের সাজা বহাল থাকল। গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষ আসামী পক্ষের দুটির আবেদন খারিজ করে দেন। রিভিউ আবেদনে সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দিয়ে ট্রাইব্যুনালের রায় পুনর্বহাল চেয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ। অপরদিকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন করেছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। আবেদন করার দেড় বছর পর দুই কার্যদিবসেই শেষ হল সব আইনি প্রক্রিয়া। ৭৭ বছর বয়সী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বর্তমানে আছেন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। ২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে তিনি কারাবন্দি।
এর আগে গত রোববার প্রথম দিনের শুনানি হয়। পরে সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করেন। গতকাল প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল শুনানি শেষে আমৃত্যু কারাদন্ডের সাজা বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। অন্য চার বিচারপতি হলেন, বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হুসেইন হায়দার। রায়ে প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, অপরাধীদের শিরোমণির ফাঁসি হয়নি, ব্যথা থাকবেই। আর আসামী পক্ষের আইনজীবী বলেছেন, মনে করিছিলাম সাঈদীর সাজা মওকুফ হবে। তিনি আরো বলেন, সাঈদীকে বাঁচাতে পেরেছি, এতেই খুশি।
সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ শুনানি শুরু। এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন, সঙ্গে ছিলেন এস এম শাহজাহান ও তানভীর আল আমিন। এছাড়াও আদালতে শতাধিক সাধারণ আইনজীবী এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আদালতের ভিতরে পিনপন নিরবতা ছিল। একের পর এক করে পাঁচজন বিচারপতি নিজ আসনে বসেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহবুবে আলম তার বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হলে পরে সাঈদীর পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটরদের পর্যবেক্ষণ বাতিলের জন্য আইনজীবী এম আমিন উদ্দিন আবেদন জানালে প্রধান বিচারপতি বলেন, ট্রাইব্যুনালের কিছু প্রসিকিউটর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভায় গিয়ে মিসকন্ডাক্ট বা অসদাচরণ করেছেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বেলা ১১টা ৫ মিনিটে শুনানি শেষে ডিসমিস বলে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।
রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য: রায় দেয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দুটি হত্যার দায় এড়াতে পারেন না। এর আগে আপিল বিভাগের দেয়া রায়ে বলা হয়েছিল, তাঁর নির্দেশে হত্যাকান্ড ঘটানো হয় এবং তিনি ছিলেন হুকুমের আসামি। মানবতাবিরোধী অপরাধে হত্যার দায়ে অন্য আসামিদের ফাঁসি হলেও হুকুমের আসামির ফাঁসি না হওয়ায় আমার মনে চিরদিনের মতো একটা ব্যথা থেকেই যাবে। কারণ, সাঈদীর মতো অপরাধীদের শিরোমণির ফাঁসি হলো না। যেসব যুদ্ধাপরাধী ছিলেন, তাদের মধ্যে সাঈদী ছিলেন অনেক ধুরন্ধর। তিনি মামলার তথ্য-ডকুমেন্ট সরিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন।
আসামী পক্ষের বক্তব্য: সাঈদীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, সাঈদীর মুক্তি চেয়ে আবেদন করেছিলাম। আমি আশা করেছিলাম সাঈদীর সাজা মওকুফ হবে। প্রমাণ-দলিলাদি দিয়ে বলেছিলাম, ঘটনার সময় তিনি পিরোজপুরে ছিলেন না। একাত্তরে নিহত পিরোজপুরের বিশা বালি হত্যার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার ভাইকে হত্যায় সাঈদী জড়িত ছিলেন না। এর পর তাকে তুলে নিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এসব বিষয় আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি। তিনি বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ রায় আমাদের মেনে নিতে হবে। তিনি বলেন, মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত কারো আপিল বিভাগে এসে সাজা কমেনি। সাঈদীর সাজা কমেছে। তাঁকে মৃত্যুদন্ডের হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছি, এতেই খুশি।
সাঈদীর ছেলের বক্তব্য: সাঈদীর ছেলে মাসুদ বিন সাঈদী বলেন, আপিল বিভাগের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির জন্য যেসব প্রমাণ-দলিল দাখিল করেছি, তাতে তাঁর একদিনের দন্ড ও হওয়ার কথা নয়। তারপরও সর্বোচ্চ আদালতের রায় আমাদের মানতে হবে, শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। সাঈদীর ছেলে আরো বলেন, চার দিন আগে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি সুস্থ আছেন, স্বাভাবিক আছেন। তিনি দেশবাসীকে সালাম জানিয়েছেন। তিনিও তাঁর মুক্তি আশা করেছিলেন।
বিচার প্রক্রিয়া: ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের রায় দেন। এরপর সাঈদী আপিল করলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো.মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেয়। তাতে সাজা কমে আমৃত্যু কারাদন্ডের আদেশ আসে। রায়ের ১৫ মাস পর ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালত এর পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করলে বিষয়টি রিভিউয়ের পর্যায়ে আসে। এরপর গতবছর ১২ জানুয়ারি সাঈদীর আমৃত্যু কারাদন্ডের রায় রিভিউ আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন সাঈদী। দুটি আবেদনই খারিজ হয়ে যাওয়ায় আমৃত্যু কারাদন্ডের সাজাই বহাল থাকল।
তিন অপরাধে আমৃত্যু দন্ড : আপিলের রায়ে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে হত্যা, নিপীড়ন, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরে বাধ্য করায় সাঈদীকে ‘যাবজ্জীবন’ কারাদন্ড দেয়া হয়। যাবজ্জীবন বলতে ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর সময় পর্যন্ত’ কারাবাস বোঝাবে বলে ব্যাখ্যা দেয় আদালত। এছাড়া ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ৭ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদন্ডের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু স¤প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল।
ছয় মামলার নিষ্পত্তি: ২০১০ সালে বিচার শুরুর পর এ নিয়ে যুদ্ধাপারের মোট ছয়টি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হল সর্বোচ্চ আদালতে। এই ছয় মামলার সাত আসামির মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদন্ডের রায় দেয় আপিল বিভাগ। রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তাদের সবার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কবল সাঈদীর মামলাতেই আপিলের রায়ে সাজা কমেছে এবং এ মামলাতেই আসামির পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষও রিভিউ চেয়েছে। আবেদন করার দেড় বছর পর দুই কার্যদিবসেই শেষ হল সব আইনি প্রক্রিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।