Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফিরে দেখা স্বাধীনতার মাস

প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : আজ ৫ মার্চ। আন্দোলনে উত্তাল মার্চের আরেকটি অগ্নিঝরা দিন। ঐতিহাসিক ’৭১-এ এই দিনগুলো ছিলো বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে ডাকা লাগাতার হরতাল ও বিক্ষোভে উত্তাল। ১ মার্চ যে আন্দোলন শুরু হয়, চারদিনে তা ক্রমান্বয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর থেকে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর কোন নির্দেশ আর পালন করতো না বাঙালিরা। পাকিস্তানীদের শোষণ থেকে মুক্তি পেতে সব স্তরের মানুষ একাত্তরের ৫ মার্চ রাস্তায় নেমে আসেন। মার্চে আন্দোলন শুরুর পর থেকে প্রতিদিন পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রাণ হারাতে
থাকেন। কিন্তু কোনো মানুষ ভয়ে ঘরে ফিরে যান নি। বরং রাজপথে যত রক্ত ঝরেছে, আন্দোলন তত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বাংলার বীর সন্তানদের কাছে পাকিস্তান শাসকের সকল চক্রান্ত ও চেষ্টা ব্যর্থতায় পরিণত হয়। স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে গত ক’দিনে নিহতদের জন্য ৫ মার্চ সারাদেশের মসজিদ ও মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে আরও তীব্র হয়ে ওঠে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য এদিন ঢাকায় একটি কন্ট্রোল রুম চালু হয়।
একাত্তরের এই দিনে হরতাল পালনকালে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে চট্টগ্রামে নিহত হন ৩ জন। টঙ্গীতে নিহত হন ৪ শ্রমিক, আহত হন আরও ১৮ জন। যশোরে মারা যান একজন। মুক্তির ঢেউ এদিন আছড়ে পড়েছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেও। একদল স্বাধীনতাকামী মানুষ বেরিয়ে আসেন কারাগারের দেয়াল ভেঙে। দেয়াল ভাঙার সময় কারারক্ষীদের গুলিতে প্রাণ হারান ৭ জন; আহত হন আরও ৩০ জন। বেরিয়ে আসা ৩২৫ বন্দি চলে আসেন শহীদ মিনারে। যোগ দেন আন্দোলনরত জনতার সঙ্গে। টঙ্গীতে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রতিবাদে নিহত শ্রমিকদের লাশ নিয়ে রাজধানীতে মিছিল বের করা হয়। এদিন বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয় চট্টগ্রামেও। চট্টগ্রামের মিছিলেও গুলি চালায় পাকিস্তানি সেনারা। এতে আহত হন তিনজন। টঙ্গী, চট্টগ্রাম ছাড়াও গুলিতে খুলনায় দুই, রাজশাহীতে একজন মৃত্যুবরণ করেন।
পূর্ব পাকিস্তানে হানাদার বাহিনীর এই হত্যাযজ্ঞ সমর্থন করেননি পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারণ জনতা। পাঞ্জাবিদের দ্বারা নিগৃহীত বেলুচিস্তানের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ইয়াহিয়ার সিদ্ধান্তকে অনাকাক্সিক্ষত ও অগণতান্ত্রিক বলে ঘোষণা করে। আন্দোলনে নিহতদের গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের লাহোরে। সেখানের বিভিন্ন মসজিদে দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে সংহতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণাকে বেলুচিস্তান ন্যাপ অবাঞ্ছিত ও অগণতান্ত্রিক ঘোষণা করে। এছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশের সংহতি রক্ষা করা অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন এয়ার মার্শাল (অব) আসগর খান।
অন্যদিকে ঢাকা শহর থেকে এদিন সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজনমত গঠনের লক্ষ্যে বিবৃতি দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। আর নিউমার্কেটে মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে ন্যাপ ওয়ালীর জনসভায় আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করা হয়। রাতে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আসগর খান আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার ধানমন্ডির বাসভবনে দেখা করেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে যে ভাষণ দেবেন তা সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানান তোফায়েল আহমেদ। এদিকে রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে সারাদেশে যেভাবে নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন। অবিলম্বে এই নরহত্যা বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি। অপরদিকে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে পিপলস পার্টি প্রধান ভুট্টোর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে দলটির মুখপাত্র আবদুল হাফিজ পীরজাদা বলেছেন, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার কারণে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া যেভাবে বিচার করা হোক না কেন, তা আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়। এভাবে দেশ-বিদেশের বিবেকবান কোন মানুষ পাকিস্তানীদের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত এবং নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর গুলি করে হত্যাকে সমর্থন করতে পারেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফিরে দেখা স্বাধীনতার মাস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ