পঞ্চায়েত হাবিব : ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ইসি। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রমজানে রোডম্যাপ চূড়ান্ত হবে এর পরে দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে।
গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ও রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির পরিচিতি অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা এ কথা বলেন। প্রধান কমিশনার জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যে (ইমিডেয়েটলি) ইভিএম ব্যবহার করার সুযোগ নেই। ছোট ছোট নির্বাচনে পরীক্ষা করতে হবে ব্যবহার করা যাবে কিনা। তা রাজনৈতিক দল ও সরকার চাইলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন করা সম্ভব। নূরুল হুদা বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে (ইমিডেয়েটলি) ইভিএম ব্যবহার করার সুযোগ নেই । ছোট ছোট নির্বাচনে পরীক্ষা করতে হবে ব্যবহার করা যাবে কিনা। তার আগে রাজনৈতিক দলগুলো এটা চায় কিনা জানতে হবে। আমরা কারো ওপর এটা চাপিয়ে দিতে চাই না। প্রযুক্তিটির বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি পেলে এবং সরকার চাইলে আগামী সংসদেও ইভিএম ব্যবহার সম্ভব। এ জন্যে বড় ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ নিতে হবে। এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠিত হওয়ার পর থেকে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। ২০১০ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির মুখে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু ওইকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি ক্রটি ধরা পড়ে। এ নিয়ে মামলাও হয়। ইভিএম নিয়ে সবচেয়ে বেশি জটিলতা হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। জটিলতার কারণে ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করতে হয়েছিল ইসিকে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও একটি কেন্দ্রে ইভিএম বিকল হয়ে যায়। এসব কারণে ২০১৩ সালের পর থেকে আর কোনো নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়নি। সেই সময়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১শ ইভিএম তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে এসে বিগত কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন আগের প্রযুুক্তিটি বাদ দিয়ে নতুন প্রযুক্তির একটি ভোটিং মেশিন তৈরি করে, যার নাম দেয়া হয় ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিভিএম)। ওই মেশিনটি কমিশনের সামনে উপস্থাপন করা হয়।
জানা গেছে, নতুন এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র আঙ্গুলের ছাপ সনাক্ত হওয়ার পরেই ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। এটি জাল ভোট ঠেকানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন। মেশিন ভেঙে ফেললেও বা পানিতে ডুবিয়ে দিলেও বøাকবক্সের মাধ্যমে প্রদত্ত ভোটের হিসেব পাওয়া যাবে। এনআইডির সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিন জানান, বর্তমান যারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের আঙ্গুলের ছাপ রয়েছে। আঙ্গুলের ছাপ নিশ্চিত হওয়া ছাড়া কেউ ভোট দিতে পারবেন না। তিনি বলেন, আগের ইভিএমের বিভিন্ন ক্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে ব্যাপক গবেষণার পর এই নতুন ইভিএম তৈরি করা হয়েছে। তার দাবি, এটি হ্যাক করাও সম্ভব থাকে। কিন্তু এ ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের। ড. অ্যালেক্স হালডারমেন নামে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ইভিএমের ওপর গবেষণা করে প্রমাণ পেয়েছিলেন, আমেরিকায় ইভিএম টেম্পারপ্রæফ নয়। ফলে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যেও ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। আমেরিকায় ২২টির বেশি অঙ্গরাজ্যে এটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং বাকিগুলোতেও তা নিষিদ্ধ হওয়ার পথে। পৃথিবীর শতকরা ৯০ ভাগ দেশে ই-ভোটিং পদ্ধতি নেই। যে কয়েকটি দেশ এটি চালু করেছিল তারাও এখন এটি নিষিদ্ধ করেছে। ২০০৬ সালে আয়ারল্যান্ড ই-ভোটিং পরিত্যাগ করে। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে জার্মানির ফেডারেল ভোট ইভিএমকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দেয়। ২০০৯ সালে ফিনল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্ট ৩টি মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনের ফলাফল অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করে। নেদারল্যান্ডে ই- ভোটিং কার্যক্রমের প্রয়োগ হয়। তবে, জনগণের আপত্তির মুখে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় ডাচ সরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, জালিয়াতির সুযোগ থাকায় এতে এক চাপে ৫০টি ভোট দেয়া সম্ভব। বিদেশের মাটিতে বসেও ইভিএম হ্যাকিং করা যায় এবং একটি ইভিএম হ্যাকিং করতে এক মিনিটের বেশি লাগে না।
জুলাইয়ে রাজনৈতিক দলের সংলাপের পরিকল্পনা
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোডম্যাপ চূড়ান্ত করে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করা হবে বলে জানিয়েছে সিইসি। তিনি বলেন, রমজানের পরে রোডম্যাপ চূড়ান্ত হবে। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একশন প্লান বা রোডম্যাপ তৈরি করছে ইসি সচিবালয়। আমরা এটা নিয়ে বসব, চূড়ান্ত করে কাজ শুরু করব। তিনি জানান, নির্বাচনী বিষয়ে রোডম্যাপের কাজ ধরে এগোনো হবে। সেক্ষেত্রে সবার মতামত নেওয়া হবে। মধ্য জুলাইয়ের মধ্যে সংলাপের পরিকল্পনা রয়েছে। আগাম কিছু বলবো না, চূড়ান্ত হলেই আপনাদের জানাব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত শতাধিক সদস্যের সংগঠন আরিএফইডির সঙ্গে পরিচিতি অনুষ্ঠানের আগে নির্বাচন কমিশনে ইভিএম নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন করা হয়। আরএফইডি সভাপতি সোমা ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মঈনুল হক চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামানসহ এ বিটের সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।