Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপর্যয়গ্রস্ত মানবিক বৈশিষ্ট্য - মুক্তির উপায় কি?

মুফতি জাকারিয়া মাসউদ

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মহা বিশে^র মহাবিষ্ময় মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; ফলে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা আর রুম ৩০ আয়াত নং ৪১)

দিন দিন পৃথিবীটা কেমন যেন অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে, মানুষের জান মালের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই মানুষরে মাঝে হতাশা আর অশান্তির এক প্রবাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সকল কাজের মধ্যে থেকে উঠে যাচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত বারাকাহ। যে কারনে দিন পেরিয়ে রাত আসছে আবার রাতের পালা শেষে ফিরে আসছে প্রতিনিয়ত চিরচেনা সেই সূর্য্যে ঘেরা দিন। তবে নাই তার মধ্যে কোন রকম প্রাপ্তি আর আশার আলো। সকল মানুষই কাজ করছে কোনমতে নিজ দ্বায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে । নিজের প্রয়োজন মিটাতে যা খুশি তাই করছে মানুষ, আবার উপার্জনের ক্ষেত্রে মানছেনা কোন বিধিনিষেধ। হালালের চেয়ে হারাম যেন মজাদার আর সহজলোভ্য ব্যপার হয়ে দাড়িয়ে গেছে। কেউবা পেটের দায়ে আবার কেউ উপার্জনের মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছে, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি বিষয়কে। সাংস্কৃতিক অবক্ষয় নিয়ে আলোচনা করতে গেলেতো ভিন্ন আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা করতে হবে তারপরও যতটুকু এখানে প্রয়োজন, তা হলো আমাদের মুসলিম সমাজ আজ ভুলতে বসেছে যে, মুসলিমদের ভিন্ন সাং¯কৃতি রয়েছে আর তা মহান আল্লাহ ও তদীয় রাসুল সাল্লল্লাহু আলআইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত।কিছু মানুষ যেমন খুশি তেমন করে নিজেদের মনকে আনান্দ দেওয়ার মিথ্যা চেষ্টায় মেতে আছে। তাইতো সারারাত নাইট ক্লাবে বিনোদন করার পরে সকাল বেলা পারিবারিক কলোহে সংসারে ফাটল এমনকি ডিভোর্স পর্যন্ত হয়ে যায়। তাহলে এই বিনোদনের কি অর্থ হলো? অপরদিকে হারাম গান বাজনা আর নৃত্য যেন হয়ে গেছে তরুন তরুনীদের ঘুমের ঔষুধ, ইসলামিক আয়োজন বা সামাজিক/রাষ্টীয় কোন আয়োজনই পারি দেওয়া যায়না হারাম (ইসলাম নিষিদ্ধ) সংস্কৃতি ব্যতিরেখে।

তবে মানুষ যতই নিজেদেরকে বিনোদনমুখী করার চেষ্টা করছে ততই যেন অশান্তি আর অনিরাপত্তার চাদরে বেষ্টিত হচ্ছে। কোথাও শান্তির লেশ মাত্র খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে হঠাৎ মৃত্যুর মিছিল, সরক দুর্ঘটনা যেন প্রতিদিেিনর পাঠ্য সংবাদ, আত্তহত্যা হয়ে গেছ পরিচিত শব্দ, সংসার ভাঙ্গার বিষয়টি তো একেবারে সোজা ব্যাপার, পরকীয়া যেন ভোগ্য সামগ্রী, বাবা মা চিন্তায় থাকে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান বাড়ি থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক ভাবে ঘরে ফিরবে কিনা? আমি এ অবন্থার কারন উন্মোচন করতে চাই পরে কুরআন সুন্নাহ নির্দেশিত উত্তোরনের পথ উল্যেখ করে শেষ করবো ইনশাআল্লাহ।

অশান্তির কারন : এ সকল অশান্তি আর দুর্ভোগ ও বিপর্যয়ের কারন হিসেবে একমাত্র কারন হিসেবে কুরআন সুন্নাহর আলোকে খুজে বের করা যায় হলো আল্লাহর অবাধ্যতা। কারন হলো মহান মালিক মহা বিশে^র মহাবিষ্ময় মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন যে, “মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; ফলে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা আর রুম ৩০ আয়াত নং ৪১) সুতরাং এটি এখন স্পষ্ট যে আমাদের কৃতকর্মের কারনেই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সতর্ক বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এর পরেও যদি আমরা নিজেদেরেকে সুধরে নিতে না পারি তাহলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ আযাব । যা মোকাবেলা করার ক্ষমতা কোন সৃষ্টিজীবের নেই। আরও ক্লিয়ার করে বলতে হলে বলতে হবে সকল প্রকারের আল্লাহর অবাধ্যতা ছেড়ে তার নির্দেশিত পথে ফিরে আসার সময় এখনই। আসুন আমরা নিরাপত্তার চাদরে বেষ্টিত হতে চাইলে করনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেই । এবং অশান্ত পৃথিবীতে শান্তির নীড় খুজে বের করি।

মুক্তির উপায় : এ পথ থেকে মুক্তির সহজ উপায় হলো, আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া এবং তার নিকটে গভরি মনোযোগিতার সহতি ক্ষমা প্রার্থনা করা। কেননা এ সকল বিপর্যয় যেহেতু আমাদের কৃত কর্মের ফসল সেহেতু একমাত্র মুক্তির উপায় হলো তার দরবারে ফিরে যাওয়া এবং তওবা করা। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা কর কেননা তিনি ক্ষমাশীল। (সুরা নুহ৭১, আয়াত - ১০) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, অতপর তোমার রবের প্রশংসা সহ পবিত্রতা বর্ণনা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।( সুরা নাসর ১১০. আয়াত ৩) আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, হে ইমানদারেরা তোমরা আলআহর কাছে খাঁটি তওবা কর।আশা করা যায় তোমাদেরর ব তোমাদরে পাপ সমুহ মোচন করবেন এবং তোমাদের এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে ঝরনা সমুহ প্রবহমান। (সুরা তাহরিম ৬৬, আয়াত নং ৮) এ সকল আয়াতের দ্বারা স্পষ্ট বুঝতে পারি যে আল্লাহর দরবারে তওবার মাধ্যমে ফিরে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে নিশ্চয়ই তা সঠিক পদ্ধতিতে খাঁটি তওবা হতে হবে। নচেৎ কোন উপকার হবেনা। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যার জীবনে কোন গুনাহ নাই তিনিও ’তওবা করতেন । আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে মানব সকল! তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে আসো অর্থাৎ তওবা কর। কেননা আমি প্রতিদিনি ১০০ বার ইস্তিগফার করি। (মুসলিম) তিনি আরও বলেন সকল আদম সন্তানই গুনাহগার আর গুনাহগারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তওবাকারীরা। ( তিরমিজী, ইবনে মাজাহ)

হে মুসলিম বাই ও ভগ্নিগন আসুন সকল অনাচার থেকে ফিরে একমাত্র মহান আল্লাহর পথকে আকড়ে ধরি তবেই যদি এ অশান্ত ধ:রাতে আবার শান্তির নীড় খুজে পাওয়া যায়। তাছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা আমার জহানা নাই আপনার গবেষনাতেও আশা করি এর ব্যতিক্রম হবেনা । তাই আসুন এই ধরনরে অনিরপত্তা হীনতায় আর কত ভুগবো আর কত অশান্তির দীর্ঘ নিঃশ^াষ ছাড়বো ? আর নয় ফিরে আসবো ইনশাআল্লাহ আল্লাহর নির্দেশিত পথে, ছড়িয়ে দিবো এ দাওয়াত প্রতিটি ;মুসলিম ভাই ও বোনদের কর্ণ কুহরে যাতে করে তাদরে দিলে আঘাত করে এবং সকল অশ্লীলতা ছেড়ে ফিরে আসে সঠিক পথে। আমিন

লেখক : ইসলামি গবেষক, দাঈ ও কলামিষ্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন