হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
কামরুল হাসান দর্পণ
সত্তর, আশি ও নব্বই দশক পর্যন্ত এসএসসি পাস করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হতো না। আমার পরিচিত একজন তো পাঁচ বার পরীক্ষা দিয়ে ফেল করে পড়ালেখায় ইস্তফা দেয়। অথচ তাকে দেখেছি, প্রায় সারা দিনই বই নিয়ে পড়ে থাকতে। যার ঝুড়িতে চার চারবার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তার তো পাস না করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। ফার্স্ট ডিভিশন না পাক অন্তত থার্ড ডিভিশনে হলেও তো পাস করার কথা। তারপরও করেনি। এমন ব্যর্থ ছাত্রের কথা বাদ দেয়া যাক। সে সময় মধ্যম মানের অনেক ছাত্র-ছাত্রীকেও ফেল করতে দেখা গেছে। এমনকি যার ফার্স্ট ডিভিশনে পাস করার কথা, সেও ফেল মেরে বসেছে। এ ধরনের ছাত্র-ছাত্রীরা যদি এ সময়ে পরীক্ষা দিত, তবে নিশ্চিত করেই বলা যায় তারা হাসতে হাসতে জিপিএ-৫ পেত। বিগত এক দশক ধরে এসএসসি পরীক্ষায় যেভাবে পাসের হার বেড়েছে এবং জিপিএ-৫ এর ছড়াছড়ি হয়েছে, এখনও হচ্ছেÑসে সময় তা কল্পনাও করা যেত না। পাশের হার ২৫-৩০ শতাংশের উপর উঠানোই দায় হয়ে পড়ত। এখন নিদেন পক্ষে ৮০ শতাংশ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের উপরও হয়ে থাকে। পাসের হার গড়ে ৮০ শতাংশ হওয়া ডালভাতে পরিণত হয়েছে। এর কম হলে ফলাফল খুবই খারাপ হয়েছে বলে আফসোসের সীমা থাকে না। এই যেমন এবার নাকি কড়াকড়িভাবে খাতা দেখা হয়েছে। যার ফলে পাসের হার কমেছে। এ নিয়ে চারদিকে তুমুল হইচই। কেন কমল, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু হয়েছে। অথচ দশ বোর্ড মিলিয়ে গড় পাসের হার ৮০.৩৫ শতাংশ। এই হার নাকি কম! ৯০ শতাংশের নিচে নামলেই ফলাফল খুবই বাজে হয়েছে বলে ধরা হয়। যে তিন দশকের কথা বলেছি, সেই সময়ে পাসের হার এখন হলে বোবা হয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করার থাকত না।
দুই.
একটা সময় ছাত্রদের জায়গির বা লজিংয়ে থেকে পড়াশোনা করার খুব প্রচলন ছিল। যারা একটু ভাল ছাত্র এবং পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার আশা থাকত, তাদের অস্বচ্ছল বাবা-মায়েরা সন্তানকে লজিংয়ে থাকতে দিত। লজিংয়ে যারা থাকত, তাদের কাজ হতো থাকা-খাওয়া ফ্রির বদলে উক্ত বাসা-বাড়ির ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের পড়ানো। ফলে নিজে পড়া এবং লজিং বাড়ির ছেলে- মেয়েদের পড়ানোই তার মূল কাজ ছিল। এর বাইরে তেমন কিছু করত না। এখন যারা বিভিন্ন পেশায় বড় বড় অফিসার বা ব্যক্তিত্ব, তাদের অনেকেই লজিংয়ে থেকে পড়াশোনা করেছেন। গরীব ঘরের ভাল ছাত্রটির পড়াশোনার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য কষ্ট করে হলেও বাবা-মা লজিংয়ে দিতেন। তবে লজিং থাকা কোনো সুখের বিষয় ছিল না। নাস্তা-পানি ও খাবার-দাবার লজিং বাড়ির কর্তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করত। যা দেয়া হতো তাই খেতে হতো। কোনো উচ্চবাচ্য করা বা খাব না বলার সুযোগ থাকত না। যখন তখন খাওয়ারও কোনো সুযোগ ছিল না। পেটে ক্ষুধায় খিল ধরে থাকলেও কিছু করার ছিল না। এছাড়া বাজার-সদায় বা অন্যান্য কাজও তাদের করতে হতো। এতটাই কষ্ট করে তারা পড়াশোনা করত। পাস না করলে তো আরও বিপদ। লজিং ছুটে যাবে। ফলে পাস করতেই হতো। এখন সময় বদলেছে। অর্থনৈতিক অবস্থাও বদলেছে। লজিং প্রথা নেই বললেই চলে। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখা করার সুযোগ-সুবিধাও অনেক বেড়েছে। অসংখ্য স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পড়ালেখা কিছুটা হলেও সাধ্যের মধ্যে এসেছে। শহরাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীরা তো যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। তবে শিক্ষার মানে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিগত এক দশক ধরে এই মান নিয়ে শিক্ষাবিদরা বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা করছেন। একটাই কথা, শিক্ষার মান কমে গেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের ঢালাওভাবে পাস করিয়ে দেয়া হচ্ছে। যার পাস করার কোনো যোগ্যতাই নেই তাকেও পাস করিয়ে দেয়া হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়ার উপযুক্ত না হলেও, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই তাকে পাস করিয়ে দেয়ার প্রবণতা রয়েছে। ফেল না করানোর এমন এক অলিখিত প্রক্রিয়ায় মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চলে এসেছে। এমনও দেখা গেছে, খাতায় কিছু না লিখেই অনেকে পাস মার্ক পেয়ে গেছে। উত্তর সঠিক হলে ভাল, বেঠিক হলেও তাকে নম্বর দেয়া হয়েছে। একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। যেমন পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছে হাজী মুহম্মদ মুহসীনকে কেন দানবীর বলা হয়? উত্তরে এক ছাত্র লিখেছে, তিনি দানব ও বীর ছিলেন, এ জন্য তাকে দানবীর বলা হয়। পরীক্ষক তাকে নম্বর দিয়েছেন। আবার কোনো পরীক্ষার্থী হয়তো একটি বিষয়ে ৭৭, ৭৮ বা ৭৯ পেল (প্রান্তিক নম্বর), তাকে অতিরিক্ত নম্বর যোগ করে ৮০ নম্বর দেয়া হয়েছে। এতে জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেড়ে গেছে। এভাবে বিগত ৮-১০ বছর ধরে প্রান্তিক নম্বর দিয়ে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে পাস নম্বর পাওয়ার জন্য ২-৩ নম্বর কম পেলে তা পূরণ করে দেয়া হয়েছে। এতে পাসের হারও বেড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ এসএসসি পরীক্ষা এতটাই সহজ করে দেয়া হয়েছে যে পাসের হার যেমন ৮০ শতাংশের নিচে নামেনি, তেমনি গোল্ডেন ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও হাজার হাজার হয়ে পড়েছে। এবার যে এত কড়াকড়িভাবে খাতা দেখা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, তাতেই জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। আগে এসএসসি পরীক্ষায় সেরা শিক্ষার্থীদের স্টার ও স্ট্যান্ড-এর মাধ্যমে স্বীকৃতি দেয়া হতো। যারা স্ট্যান্ড করতো তাদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তকে ফার্স্ট স্ট্যান্ড ধরা হতো। এরপর নম্বর প্রাপ্তির ধারাবাহিকতায় ২০ জন পর্যন্ত একটা সীমারেখা টেনে দেয়া হতো। এসব স্ট্যান্ড করা শিক্ষার্থী আক্ষরিক অর্থেই অত্যন্ত মেধাবী। এমনকি ভাল কোনো কলেজে তাদের ভর্তির বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হতো। ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হতো না বললেই চলে। কলেজগুলো এসব শিক্ষার্থী ভর্তি করে নেয়ার জন্য অনেকটা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতো। কারণ এসব স্ট্যান্ড করা শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারলে কলেজগুলোরও সুনাম বজায় থাকত। এখন জিপিএ-৫ ধারী শিক্ষার্থীদের ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা করতে হয়। অনেকে তার পছন্দের কলেজে সুযোগও পায় না। কলেজগুলোর মধ্যেও তেমন প্রতিযোগিতা দেখা যায় না। বরং পর্যাপ্ত আসন সংখ্যা নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, আমাদের শিক্ষার মান কোথায় গিয়ে নেমেছে।
তিন.
এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল বিগত বছরগুলোর তুলনায় খারাপ হওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, এতদিন পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে কোনো পদ্ধতি ছিল না। শত শত বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে। আমাদের খাতা দেখা ত্রæটিপূর্ণ ছিল। এবার একটা মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করেছি। পরীক্ষকদের খাতার সঙ্গে মডেল উত্তরও দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী খাতা মূল্যায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া এতদিন প্রধান পরীক্ষকরা খাতা না দেখেই মতামত দিতেন। এবার প্রধান পরীক্ষককেও ১২ শতাংশ খাতা দেখতে হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ নীতিটি আরও ৫-৭ বছর আগে কেন করা হয়নি? করা হলে তো কেবল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই পাস, এমন একটি সর্বনাশা প্রবণতা বন্ধ হতো এবং শিক্ষার্থীরাও যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হতে পারত। বিগত আট-দশ বছর ধরে শিক্ষাবিদরা যে বারবার বলে আসছেন, শিক্ষার মান হারিয়ে যাচ্ছে। মান বলতে কিছু থাকছে না। পাসের নামে কেবল সার্টিফিকেটধারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, এসব কথা হতো না। এ অভিযোগও উঠত না, সরকার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থেকে শুরু করে এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত পাসের হার বাড়িয়ে এক ধরনের কৃতিত্ব নিতে চাচ্ছে। ফলাফলকে রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ হাসিল করার জন্য ব্যবহার করছে। সরকার দেখাতে চাচ্ছে, তার সময়ে শিক্ষার হার হু হু করে বাড়ছে। অর্থাৎ শিক্ষার মানকে খর্ব করে সরকারের কৃতিত্বকে বড় করে তুলে ধরা হচ্ছে। এ অভিযোগ যে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না, তা পাসের হার বৃদ্ধি থেকে বোঝা যায়। এমনও অভিযোগ উঠেছে, খাতা দেখার ক্ষেত্রে পরীক্ষকদের উদার হতে হবে এবং কাউকেই ফেল করানো যাবে না বলে সরকারের তরফ থেকে অলিখিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশে শিক্ষাকে ব্যবহারের এই যে প্রবণতা, তা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কোথায় নিয়ে ঠেকিয়েছে, তা সকলেই দেখতে পাচ্ছে। বিগত আট-দশ বছর ধরে শিক্ষাবিদরা এ নিয়ে বলতে বলতে মাথা ঠুকলেও, সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। বরং পাসের হার নিয়ে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছে। সরকারের এমন উদাসীনতায় ইতোমধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় অসুস্থ পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি সামাজিক সমস্যাও সৃষ্টি করেছে। যাদের পাস করার কথা নয়, তারা পাস করেও হতাশ হয়ে পড়ছে। মেধাবীরাও যখন দেখে তার চেয়ে পিছিয়ে থাকা একজনও জিপিএ-৫ পেয়েছে, তখন তার নিজের মূল্যায়ণ নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ে। এতে হতাশাও সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার ব্যবধান। এ কথা অনস্বীকার্য, শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। আবার মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার মানেও যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এর ফলে গ্রামাঞ্চলের যে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উদার খাতা দেখার নীতির মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে পাস করে আসছে, তাতে মেধারও ঘাটতি থাকা অস্বাভাবিক নয়। শিক্ষার মানেও বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিশাল একটি অংশ অগোচরেই সমাজের বোঝা হয়ে উঠছে। এর কারণ হচ্ছে, এসব শিক্ষার্থীর সবার পক্ষে সমানভাবে মানসম্মত শিক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। এর ফলে, তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা এবং পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ হারানো স্বাভাবিক। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমরা কেবল ভাল কলেজের কথা বলি। ভাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা করি। এটা কেন করতে হবে? দেশে তো অসংখ্য কলেজ রয়েছে। সেগুলোকে কেন ভাল কলেজে পরিণত করা হয় না? সেগুলোর পড়ালেখার মান কেন উন্নত করা হয় না? ভাল কলেজগুলো যেভাবে এবং যে প্রক্রিয়ায় ভাল হয়েছে, সে প্রক্রিয়া কেন অন্যান্য কলেজে অবলম্বন করা হয় না? সরকারের তো উচিত সব কলেজ না হোক, বেশিরভাগ কলেজে মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কেবল ঢালাওভাবে পাস করানোর দিকে মনোযোগ দিয়ে শিক্ষার হার বাড়ানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা আত্মঘাতী ছাড়া কিছু হতে পারে না। লামসাম ভাবে উদারভাবে খাতা দেখার মাধ্যমে পাসের হার বৃদ্ধির দিকে দৃষ্টি না দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিলে, এমনিতেই পাসের হার বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষার মানও বজায় থাকবে।
চার.
দেশের উন্নতি ও অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে মেধার বিকল্প নেই। মেধার ধারাবাহিকতা বজায় রাখাও অপরিহার্য। আমরা দেখেছি, বিগত প্রায় এক দশক ধরে মানসম্মত শিক্ষার পরিবর্তে পাসের হারের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এভাবে লাখ লাখ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এদের বেশির ভাগই সরকারের উদার নীতির মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়েছে। এই বিরাট অংশটির কত ভাগ সাফল্যের সাথে এগিয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। দেখা গেছে, যে শিক্ষার্থী উদার নীতির কারণে এসএসসি পাস করেছে, পরবর্তীতে সে খারাপ ফলাফল করেছে। অনেকে ঝরেও গেছে। পাসের সার্টিফিকেট পেলেও, তা শুধু সার্টিফিকেট সর্বস্ব হয়ে রয়েছে। এর জন্য দায়ী কে? দায়ী নিশ্চিতভাবেই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সরকারের কৃতিত্ব দেখাতে গিয়ে অস্বাভাবিকভাবে পাসের হার বৃদ্ধির মতো অপনীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে যে মানহীন শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এবং শিক্ষার্থী ও দেশের মেধার ধারাবাহিকতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করা হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। যে শিক্ষার্থী না চাইতেই পেয়ে গেছে, সে যখন উচ্চশিক্ষার দিকে ধাবিত এবং ব্যর্থ হয়, তখন তার চেয়ে হতাশ আর কেউ হতে পারে না। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, হতাশ হওয়া এমন অসংখ্য শিক্ষার্থী রয়েছে। এ হতাশা শুধু তার পরিবারের উপরই বোঝা হয়ে উঠছে না, সমাজ ও দেশেরও বোঝা হয়ে উঠছে। এটা কখনোই কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না, সঠিকভাবে মেধার মূল্যায়ন না করে শুধু পাসের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃতিত্ব নেয়া। আশার কথা, দেরিতে হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় উদারভাবে খাতা দেখার পদ্ধতির পরিবর্তে মেধার মূল্যায়ণের দিকে জোর দিয়েছে। যার ফলে পাসের হার বিগত বছরগুলোর তুলনায় কমেছে। আমরা প্রত্যেকেই চাই, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভাল করুক। তবে তা অর্জন করুক প্রকৃত মেধা দিয়ে। ঢালাও পাসের প্রক্রিয়ায় নয়। সরকারকেও উপলব্ধি করতে হবে বহুল সমালোচিত ‘মেধার বিস্ফোরণ’ ঘটিয়ে নয়, যে পরীক্ষার্থীর যতটুকু যোগ্যতা এবং মেধা রয়েছে, তার ভিত্তিতে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হোক।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।