Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঠিক পরিসংখ্যান গুরুত্বপূর্ণ

| প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:২৯ এএম

পরিসংখ্যান দিয়ে দেশের যে উন্নয়নচিত্র তুলে ধরা হয়, তার সাথে বাস্তবের যথেষ্ট অমিল। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা বারংবার বলছেন। সরকার তাতে কান দিচ্ছে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর ও অধিদফতর প্রায়ই উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে। এসব পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অর্থনীতিবিদরা দ্বিমত পোষণ করেন। সরকারের দেখানো উন্নয়নচিত্রকে তার কাগজ-কলমের উন্নয়ন বলে অভিহিত করে থাকেন। এর মূল কারণ হিসেবে তারা মনে করেন, পরিকল্পনার সাথে পরিসংখ্যানের কোনো সমন্বয় নেই এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের যথেষ্ট অদক্ষতা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাব রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টর ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘ফিজ্যিক্যাল ডাটা ফর ম্যাকিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বলা হয়েছে, সরকারের আর্থিক খাতের তথ্য-উপাত্ত সরবারাহে বড় ধরনের স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে। যথাসময়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় না। বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কত টাকা বরাদ্দ করা হয়, তা জানা যায় না। রাজস্ব আয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে অর্থ বিভাগ ও এনবিআরের মধ্যে গরমিল রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়ে আইএমইডির দেয়া তথ্যের সঙ্গে অর্থ বিভাগের মিল নেই। এমনকি অডিট রিপোর্টও ঠিকমতো প্রকাশ করা হয় না। এমন আরও অসঙ্গতির কথা তুলে ধরা হয়। অর্থনীতি এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ ধরনের অসামঞ্জস্যতা দেশের উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি কি, তা অস্পষ্টই থেকে যাচ্ছে।

সরকার তার উন্নয়নের নানা কর্মসূচি এবং চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে তা বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও যথাযথ হওয়া জরুরি। আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি, উন্নয়ন নিয়ে সরকারের মধ্যে পরিসংখ্যানের উন্নতিকে বড় করে দেখানোর প্রবণতা বেশি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানভিত্তিক উন্নতির চিত্র সুশোভিত করে তুলে ধরে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাসহ নানা উন্নয়নচিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়। অথচ এর প্রত্যেকটির সাথে বাস্তবতার যথেষ্ট ব্যবধান রয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকার যে পরিসংখ্যান তুলে ধরে তার সাথে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ দেশের অর্থনীতিবিদদের হিসাবে বিস্তর ব্যবধান থাকে। মাথাপিছু আয়ের বিষয়টি গোলকধাঁধার মধ্যে আটকে আছে। অনেকে পাটিগণিতের মতো হিসাব করে সরকার ঘোষিত মাথাপিছু আয়ের হিসাটিকে ভুল প্রমাণ করে দিচ্ছে। করোনায় কোটি কোটি মানুষের দরিদ্র হওয়া এবং নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি খালি দৃষ্টিতেও দেখা যায়। সরকার তা স্বীকার করে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিষয়টিও এখন শুভংকরের ফাঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, সরকারকে মজুদ বাড়াতে লাখ লাখ টন চাল আমদানি করতে হচ্ছে। খাদ্যে যদি দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণই হবে, তাহলে চাল আমদানি করতে হবে কেন? এক্ষেত্রেও সরকার পরিসংখ্যানগত উন্নয়নে আটকে পড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সংক্রান্ত খাতের সাথে যারা জড়িত, তারা প্রকৃত বাস্তবতা এড়িয়ে সরকারকে খুশি করার জন্য পরিসংখ্যান বাড়িয়ে উপস্থাপন করছে। এটাকে ‘উন্নয়নের ফানুস’ বলা হয়ে থাকে। দেশে খাদ্যসংকটের অন্যতম কারণ হচ্ছে, দেশের জনসংখ্যার সঠিক হিসাব না করা। দেশে জনসংখ্যা কত রয়েছে, তাদের কি পরিমাণ খাদ্য প্রয়োজন, কি পরিমান উৎপাদন সক্ষম জমি রয়েছে, তা হিসাব না করেই পরিসংখ্যান করা হচ্ছে। প্রতি ৫ বছর অন্তর আদমশুমারি করা হলেও বিগত ১০ বছরে আদমশুমারি করা হয়নি। ফলে এই দশ বছরে জনসংখ্যা কত বৃদ্ধি পেয়েছে, তা অজানা। বর্ধিত এই জনসংখ্যা হিসাব না ধরেই জিডিপি, মাথাপিছু আয়, ক্রয়ক্ষমতা, খাদ্যের হিসাব করা হচ্ছে। এতে সঠিক পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। দেশে এখন বিদ্যুৎ চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। অথচ এই বিদ্যুৎ সরবরাহের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। সরবরাহের সুব্যবস্থা না করে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনার সুস্পষ্ট অভাব রয়েছে।

দেশে উন্নয়নের পরিসংখ্যান অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এতে সমন্বয়ের যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। দেখা গেছে, এক খাতের পরিসংখ্যান, সূচক ও তথ্য নিয়ে একেক মন্ত্রীরা একেক ধরনের তথ্য উপস্থাপন করছেন। দেশে অর্থের ঘাটতি নেই বলে এক মন্ত্রী বললেও আরেক মন্ত্রী বলেছেন আমাদের আরও অর্থের প্রয়োজন। এমন বিপরীতমুখী তথ্যের জন্য দেশের প্রকৃত উন্নয়নের সঠিকচিত্র পাওয়া দুষ্কর। আমরা মনে করি, কাগজে-কলমে পরিসংখ্যানগত উন্নয়নের চিত্র না তুলে ধরে উন্নয়নের তথ্য নির্ভর চিত্র তুলে ধরা উচিৎ। এতে সরকারের উন্নয়নের বিশ্বাসযোগ্যতা মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সঠিক পরিসংখ্যান

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
আরও পড়ুন