Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাটছে না রাজশাহী বিএনপির শনির দশা

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : শনিরদশা কাটছেনা রাজশাহী বিএনপির। এক সময়ের বিএনপির দূর্গখ্যাত রাজশাহী অঞ্চল এখন রাজনৈতিক সিডরে তছনছ। সেই ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে একের পর এক নির্যাতনের স্টীম রোলার ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে এ দূর্গ। হাজারো মামলায় জর্জরিত। আর পুলিশী দাবড়ানীতে পারছেনা মাঠে নামতে। এত দুর্যোগের মধ্যে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও ঘরের শ্রত্রু বিভীষনদের কারনে তা আর হয়ে উঠছেনা। নেতৃত্বের বলয় কব্জায় রাখতে চলছে একে অপরকে সাইজ করার খেলা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কেন্দ্রের একটা অংশ। এদের ম্যানেজ করে কিংবা ভুল বুঝিয়ে যেসব কমিটি করা হচ্ছে তাদের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে ক্ষোভের শেষ নেই। বঞ্চিতরা নানাভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। মাস চারেক আগে কেন্দ্র হতে বিএনপির জেলা ও মহানগর কমিটি (আংশিক) ঘোষণা করা হয়। এনিয়ে শুরু হয় ক্ষোভ। জেলার এক নেতার নারী কেলেংকারীর বিষয় নিয়ে নগরীতে পোষ্টার লাগিয়ে চলে নোংরা খেলা। নগর বিএনপি কমিটি প্রত্যাখান করে বিএনপি বাঁচাও ব্যানারে একটি পক্ষ নগর বিএনপি কার্যলয়ের তালা ঝুলিয়ে দেয়। জেলা কমিটি উপজেলায় সংগঠন করতে গিয়ে পড়ে বিড়ম্বনার মুখে। নগর কমিটি নিয়ে শুরু হয় দ্ব›দ্ব। রাজশাহী বিএনপির রাজনীতি ভাই কেন্দ্রীক বলয়ে বন্দি বহু বছর ধরেই। সতের বছরের মেয়র ও এমপির সুবাদে প্রতাপশালী মিজানুর রহমান মিনু ভাই গ্রুপ। ব্যারিষ্টার আমিনুল হক গ্রুপ, নাদিম মোস্তফা গ্রুপ, আর কবির হোসেন ভাই গ্রুপ। এখানে চলে দলের নয় ভাই কেন্দ্রীক বলয়ের রাজনীতি। এনিয়ে নেতায় নেতায় ঠান্ডা লড়াই কম নয়। এর সাথে সঙ্গত ভাবে যুক্ত হয়ে গেছে টিন ইমেজের সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলও। তাকে ঘিরেও একটা বলয় সৃিষ্ট হয়েছে। নগর সভাপতি হবার পর তাকে সাইজ করার জন্য তৎপরতা কম নয়। এমনিতে সরকারের রোষানলে পড়ে মেয়র বুলবুল তার পদে বেশি দিন থাকতে পারেননি। কারাগার আর আদালত পাড়ায় দৌড়াদৌড়ি করে নিজের অধিকার আদায়ে তৎপর ছিলেন দীর্ঘ প্রায় দু’বছর। অবশেষে সফল হয়েছেন মেয়রের আসনটি ফিরে পেতে। কিন্তু হাইকমান্ড তাকে নগর সভাপতির দায়িত্ব দিলেও তা পালন করতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন বার বার। দলের ভেতরের একটা অংশ পেছন থেকে টেনে ধরার চেষ্টা করছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর সাথে বর্তমান মেয়র বুলবুলের শীতল সর্ম্পক চলছে। দীর্ঘ সময় মেয়র ও এমপি থাকার কারনে সংগঠনের তৃনমুলে তার একটা শক্ত অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। যুবদল থেকে আসা বুলবুলও চেষ্টা করছেন। তার অবস্থান করার। এদের মাঝখানে একটা পক্ষ দুজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। হাইকমান্ড সব বিরোধ মিটিয়ে একসাথে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। দলের এমন বেহাল অবস্থায় সাধারন নেতাকর্মীরা দু’নেতাকে নিয়ে একসাথে কর্মসুচি পালনের চেষ্টা করলেও মহল বিশেষের তৎপরতায় তা হয়ে উঠছেনা। বিগত ২১ ফেব্রæয়ারীতে একসাথে কর্মসুচি পালন করার জন্য সোনাদীঘি মোড়ে জড়ো হলেও কর্মীরা ছিল আনন্দিত। তবে সুবিধাভোগী মহলটির কুটচালে মুহুর্তের মধ্যে বদলে যায় চিত্র। ফুল নিয়ে দুজন নেতার নেতৃত্বে দুদিকে চলে যায়। এতে আশাহত হয় সাধারন কর্মীরা। আইনী লড়াইয়ে জেতার পর দায়িত্ব নেবার জন্য বুলবুল নগর ভবনে আসেন। সেদিন যদি কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে মিনু-বুলবুল হাত ধরাধরি করে নগরভবনে প্রবেশ করতেন এতে রাজশাহী বিএনপির চিত্র পাল্টে যেত। সরকারী দলের কাছেও একটা বার্তা দেয়ার সুযোগ ছিল। বিএনপির দুর্গ এখনো আছে। বরং ব্যাপারটি হলো উল্টো। খোদ বিএনপি পন্থি কাউন্সিলরদের অনেককে দেখা যায়নি সে সময়। অভিযোগ রয়েছে নগরভবনে যে তালা নাটক হয়েছিল তার সাথে নাকি বিএনপির একটা অংশ নেপথ্যে ছিল। অবশ্য সেদিন কর্মীরা কোন কোন কাউন্সিলরের নাম ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করছিল। ২৭ ডিসেম্বর জেলা ও মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণার পর থেকে শুরু হয় আরেক খেলা। কমিটিতে নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য। এনিয়ে নগর বিএনপির কমিটি গঠন ঝুলে রয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘ চার মাসপর ২৭ এপ্রিল রাজশাহী বিএনপির ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়। শুরুতে যে ৩৭ জনের কমিটি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সময় এদের মধ্যে থেকে বারোজন বাদ পড়েছেন। এজন্য তারা দুষছেন দুইনেতা ব্যারিষ্টার আমিনুল হক আর এ্যাড: নাদিম মোস্তফাকে। এরাই হাইকমান্ডে কলকাঠি নেড়ে তাদের কমিটি থেকে বাদ দিয়েছেন। যারা বাদ পেড়েছেন তারা দলের প্রবীন ও ত্যাগি নেতা ছিলেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন আমাদের বাদ দেওয়া হলো কাদের প্রভাব বলয় ঠিক রাখতে। এতে আমাদের রাজনৈতিকভাবে অমর্যদা করা হয়েছে। এনিয়ে মাঠ পয্যায়ের কর্মীরা ভীষন ক্ষুব্ধ। আবারো দলের নয় ভাইয়ের রাজনীতির বলয়ে পড়লো দল। যার মাশুল গুনতে হবে। নগর বিএনপির পুর্নাঙ্গ কমিটি নিয়ে সামনে কি খেলা হয় তা দেখার অপেক্ষায়। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বলছেন দলকে ধ্বংসের জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সরকারের এজেন্টরা। যারা মুখে বড় বড় কথা বললেও ভেতরে ঠিক আঁতাত করে সুযোগ সুবিধা নেয়। অতীতে এদের আাঁতাতের কারনে যেমন আন্দোলন সংগ্রাম ব্যার্থ হয়েছে। এবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বিঘœ ঘটবে। বিএনপির জেলা ও মহানগরের এমন টান পোড়নের মধ্যে সদ্য ঘোষিত যুবদলের কমিটি নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছ্।ে এই কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেছে পদবঞ্চিতরা। তাদের অভিযোগ একই মহল্লায় তিনজনকে নেতৃত্বে আনা হয়েছে। তাছাড়া এরা বির্তকিত। নির্যাতিত নিপীড়িত ত্যাগি পরীক্ষিত যুবদল নেতা কর্মীবৃন্দর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয় অযোগ্য সরকারের সাথে আঁতাতকরাীদের নিয়ে কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। যারা ওয়ানইলেভেন পরবর্তী সময়ে সুযোগ সুবিধা নিয়ে কাটিয়েছেন। সরকার বিরোধী আন্দোলনে তাদের মাঠে পাওয়া যায়নি। তাদের ঘাড়ে আবার নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে। এতে করে দ্ব›দ্ব আরো চরমে পৌছাবে। যা বিএনপির স্থানীয় ও জাতীয় ভোটের রাজনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলবে। পদ বঞ্চিতরা প্রতিবাদ জানিয়ে সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, কবির হোসেনের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছে। বিএনপির সূত্র জানায়, ঘোষিত যুবদলের কমিটিতে নগর সভাপতি সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পন্থিদের ঠাঁই হয়নি। এতে প্রাধান্য পেয়েছে সাবেক মেয়র বিএনপির চেয়ারপার্শনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও নগর সেক্রেটারী শফিকুল হক মিলনের অনুসারীরা। এ ব্যাপারে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও কবির হোসেন ক্ষুব্ধ পদবঞ্চিতদের জানিয়েছেন কমিটি গঠনের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। মুলদলের পাশপাশি যুবদলের কমিটি নিয়ে এখানকার বিএনপিতে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এত দূর্যোগের পরও এসময় বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠন নিয়ে অশুভ তৎপরতায় ক্ষুব্ধ বিএনপির প্রবীন ত্যাগি নেতাকর্মী ও সাধারন সমর্থকরা। কর্মীরা দুষছেন কেন্দ্রে বসে কলকাঠি নাড়া কজনকে। যারা দলের নয় নিজেদের প্রভাব আর বলয় ঠিক রাখার জন্য এমন অশুভ তৎপরতা চালাচ্ছেন। অনেকের ক্ষুব্ধ মন্তব্য টাকার খেলাও চলছে। এ উত্তপ্ত অবস্থার মধ্যে আগামী সপ্তাহে রাজশাহীতে হতে যাচ্ছে বিএনপির কর্মীসভা। সেদিকে তাকিয়ে আছে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ