Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গঙ্গাচড়ায় পাট অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক অবরুদ্ধ

| প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গঙ্গাচড়া (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পাট অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ড. শেখ মুহা. রেজাউল ইসলাম, ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকল্প পরিচালক মোশাররফ হোসেনসহ পাট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে স্থানীয় পাট চাষিরা। গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পাট অফিস পরিদর্শনে এলে পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। পরে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাংবাদিকের মধ্যস্থতায় তাদেরকে উদ্ধার করে।
জানা যায়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় অধীন পাট অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত উচ্চ ফলনশীল (উফসী) পাট ও পাট বীজ উৎপাদন এবং উন্নত পাট পচন প্রকল্পের আওতায় দেশের ২০০টি উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় রংপুর বিভাগে ৮ জেলার ৪৮টি উপজেলায় কার্যক্রম চলছে। গত অর্থ বছরে এ প্রকল্প থেকে রংপুর অঞ্চলে অর্ধকোটি টাকা লোপাট হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছর (২০১৬-২০১৭) প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক উপজেলায় ২৫০ জন চাষির মাঝে ৫০ একর জমিতে নাবী পাট বীজ উৎপাদনের লক্ষে ৮৭ কেজি ভিত্তি পাট বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়াও রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বাবদ প্রত্যেক উপজেলায় ১ লাখ ১ হাজার ৪০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকল্প পরিচালকসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ২-১টি উপজেলায় ১০-১৫ জন চাষির জমিতে পাট বীজ উৎপাদন করে অধিকাংশ উপজেলায় কোন প্রকার বীজ উৎপাদন না করে বীজ উৎপাদনের ভুয়া তথ্য দাখিল করে সমূদ্বয় টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি উপজেলায় প্রকল্প পরিচালক ড. শেখ মুহা. রেজাউল ইসলাম ১০ হাজার টাকা ও ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকল্প পরিচালক ৫ হাজার টাকা উৎকোচ নেন। এছাড়ও চলতি পাট চাষ মৌসুমে প্রত্যেক উপজেলায় নির্বাচিত ১ হাজার চাষির মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দেশী ১ হাজার ও তোষা জাতের পাট ১ হাজার ৬৫০ কেজি হিসেবে প্রত্যেক উপজেলায় ২ হাজার ৬৫০ কেজি পাট বীজ সরকারিভাবে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। বরাদ্দকৃত পাট বীজ হিসেবে অনুযায়ী প্রত্যেক চাষি ৩ প্যাকেট (প্রতি প্যাকেট ৭৭৫ গ্রাম) করে পাট বীজ পাওয়ার কথা। কিন্তু পাট অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নামমাত্র কিছু চাষির মাঝে ১-২ প্যাকেট করে পাট বীজ বিতরণ করে সমূদ্বয় পাট বীজ কালো বাজারে বিক্রি করে আত্মসাৎ করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩১ মার্চ রাতে রংপুর অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকল্প পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেনের কার্যালয় থেকে অটোযোগে ১১ বস্তা (৮৮০ প্যাকেট) প্রায় ১ মেট্রিক টন পাট বীজ সিটি কর্পোরেশন বাজারে বীজের দোকানে বিক্রির সময় স্থানীয় জনতা আটক করে। গঙ্গাচড়া উপজেলা উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আশীষ কুমার ভৌমিক বিএডিসি থেকে পাট বীজ উত্তোলন করে রংপুর অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ে আনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি গঙ্গাচড়া উপজেলার বরাদ্দকৃত পাট বীজ উত্তোলন করতে গেলে ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকল্প পরিচালক মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে বিভিন্ন উপজেলা থেকে সংগৃহীত বিএডিসি থেকে আমার ট্রাকে করে পাট বীজ তার কার্যালয়ে নামিয়ে দেই।
গঙ্গাচড়া উপজেলার পাট চাষি জমিদার ও সাজেদুলসহ অনেকে জানান, আমাদের নামে বরাদ্দকৃত পাট বীজ, সার ও কীটনাশক ভুয়া মাস্টার রোল দাখিল করে উত্তোলন করে পাট অধিদপ্তরের লোকজন ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। তাদের জন্য সরকারের একটি গুরুতপূর্ণ প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে। দুর্নীতি বাজ কর্মকর্তাদের কারণে সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভাবমর্যাদা নষ্ট হচ্ছে। আমরা গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকল্প পরিচালকের গঙ্গাচড়া আসার খবরে পাট চাষি উপজেলা পরিষদ মাঠে জড়ো হয়ে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি অশোভন আচরণ করেন। পরে বিক্ষুপ্ত পাট চাষিরা তাকে অবরুদ্ধ করে পাট বীজ ও সার আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাই।
ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকল্প পরিচালক মোশাররফ হোসেন বীজ বিক্রির কথা অস্বীকার করে বলেন, বিএডিসি’র বীজের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। চক্রান্ত করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। পাট অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ড. শেখ মুহা. রেজাউল ইসলাম তাকে অবরুদ্ধ করার সত্যতা স্বীকার করেন। বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি রেগে যান এবং বলেন, এটা আমার ডিপার্টমেন্টাল ব্যাপার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনিয়ম

২৩ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ