Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা, ভ্যাটসীমা ১৫ থেকে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব

ঢাকা চেম্বারের বাজেট প্রস্তাবনা

| প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করার দাবি জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। একই সঙ্গে নতুন ভ্যাট আইনে হয়রানির আশঙ্কা প্রকাশ করে ভ্যাটের সীমা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা রয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা।
গতকাল মতিঝিলে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা বিষয়ক ঢাকা চেম্বারের এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আবুল কাসেম খান এ প্রস্তাব তুলে ধরেন। এ সময় চেম্বারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, আসন্ন বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নারী ও বয়স্ক (৬৫ বছর) করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। এটা আগে ছিল চার লাখ ২৫ হাজার টাকা। ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আয়কর সীমা বৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে, বর্তমানে মানুষের জীবন-যাত্রার ব্যয় বেড়েছে। ফলে করমুক্ত আয়ের সীমাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
এদিকে নতুন ভ্যাট আইনে হয়রানির আশঙ্কা প্রকাশ করে ভ্যাটের সীমা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। ডিসিসিআই’র সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ভ্যাটের পরিমাই বৃদ্ধি করা হলে দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে। যে সব পণ্যে ভ্যাট নেই, সেসব পণ্যেও ভ্যাট যুক্ত হবে। ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন এবং দ্রব্যের উৎপাদন কমে যাবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ৭ শতাংশ ভ্যাটের দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত ফাইট করে যাবো।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম থেকে অর্থাৎ আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ব্যবসায়ীদের অনুরোধের পরও এখন পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্তে অনড় তিনি। কিন্তু ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হলে দেশের বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে উল্লেখ করেন আবুল কাসেম খান।
তিনি বলেন, আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৩০ শতাংশের বেশি অবদান রাখে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত। বেসরকারি খাতের ৭৫ শতাংশই এই খাতের অন্তর্ভুক্ত। ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হলে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৭৫ শতাংশই এসএমই খাতের মাধ্যমে হয়। শিল্প খাতে মোট কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশই এসএমই খাতের। নতুন ভ্যাট আইনের মাধ্যমে খুচরা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি কার্যকর হলে খুচরা পর্যায়ে সব পণ্যের দামই বেড়ে যাবে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে ডিসিসিআই’র সেক্টরভিত্তিক কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিল্প ও জিডিপির হার ২৯ শতাংশ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো; শিল্প কর্মসংস্থানের হার ১৮ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো; শিল্পনীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন। আয়কর, আইন ও বিধি সংক্রান্ত প্রস্তাব : পারকুইজটি সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত করা। নন-ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে লেনেদেনে ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ টাকা করা। নগদ যানবাহন ভাতা ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত সুবিধা প্রদান।
বাজেট প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, বড় ব্যবসায়ীদের বর্তমানে টার্নওভার ট্যাক্স লিমিট বর্তমানে ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার শূন্য থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত ও ৫০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি ২০ লাখ পর্যন্ত ৩ শতাংশ করা হোক। এছাড়া প্রত্যেক ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন হোল্ডারদের সরকারি খরচে ইসিআর মেশিন স্থাপনসহ ভ্যাট স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করতে হবে।
নীট সম্পদের মূল্য সারচার্জের হার : ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত শূন্য শতাংশ; ৫-১৫ কোটি টাকার মধ্যে ১০ শতাংশ; ১৫-২৫ কোটি টাকার মধ্যে ১৫ শতাংশ; ২৫-৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ২০ শতাংশ এবং ৩৫ কোটি টাকার বেশি হলে ২৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ী সংগঠনটি।
এছাড়া অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ মোট জিডিপি-বিনিয়োগের অনুপাত ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে ডিসিসিআই। আগামী অর্থবছরে বাজেট এডিপিতে বরাদ্দ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন আবুল কাসেম খান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টাকা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ