বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আবু হেনা মুক্তি : মহানগরীসহ বৃহত্তর খুলনার ৩৪টি উপজেলার আনাচে-কানাচে এখন ফেনসিডিল, গাঁজা ও ইয়াবার কালো থাবা পড়েছে। এসব অঞ্চলের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান কিম্বা পৌর চেয়ারম্যানরা মাদকের বিরুদ্ধে কার্যত ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন জনপ্রতিনিধিরা এবং প্রশাসন আন্তরিক হলে ভয়াবহ মাদকের আগ্রাসন থেকে নিস্তার পাওয়া যেত। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধছে না কেউ। মাদক নামের ভয়ানক বিষ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের সর্বস্তরে। মাদক বিক্রেতাদের এখন প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে খুলনার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর সর্বনাশা এই মরণ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শুধু খুলনা মহানগরীতে প্রায় ৩০ হাজার মাদক সেবনকারী রয়েছে। যাদের মধ্যে ৯০ ভাগই তরুণ। আর ইয়াবা নামের ছোট্ট আকারের এই মাদক সেবনকারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবার সর্বনাশা থাবায় বিপন্ন হতে বসেছে ভবিষ্যত প্রজন্ম। অভিজ্ঞজনের মতে, মাদক নিয়ন্ত্রণে শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দিকে তাকিয়ে থাকার সময় এখন নয়। মাদকের করাল গ্রাস থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। প্রত্যেকটি পরিবার থেকে শুরু করতে হবে এই আন্দোলন। এ ছাড়া মাদক বিক্রেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয়ার সুষ্পষ্ট অঙ্গীকার আসতে হবে রাজনীতিকদের মধ্য থেকে।
এদিকে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে যেমন বাড়ছে মাদক নিরাময় কেন্দ্র তেমনি বাড়ছে মাদক আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। তবে অধিকাংশ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার চেয়ে বাণিজ্য চলছে বেশি। নামমাত্র চিকিৎসক, ঘুমের ইঞ্জেকশন বা ট্যাবলেট আর রুটিন মাফিক খাওয়া দিয়েই রোগীদের কাছ থেকে কর্তৃপক্ষ হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। চিকিৎসাকেন্দ্রের নামে এ এখন মাদক নিরাময় ব্যবসাকেন্দ্র।
সূত্রমতে, মাদক ব্যবসার সাথে খুলনার শতাধিক মাদক সম্রাট জড়িত। মাদক সম্রাটদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ মহিলা। মহিলা মাদক ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের টাকার মালিক হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে তারা প্রশাসনের অনেকের সাথে সখ্যতা রক্ষা করে চলে। তবে জনবল সঙ্কটের কারণে দৃশ্যত গত এক দশকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সংস্থাটির অর্জন আশানুরূপ নয়। আবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কেউ কেউ নিজের পকেট ভারী করায় মাদকের সহজলভ্যতা এখন চোখে পড়ার মতো।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাথে সংশিষ্ট সূত্র জানায়, এখানে ইয়াবার ব্যবসা জমজমাট। এর পাশাপাশি ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, চোরাই মদ ও দেশি মদের ব্যবসা চলে নগরীসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। গ্রামাঞ্চলেও ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলের চাহিদা বেশি। ইয়াবার চাহিদা নগরীর তরুণদের মধ্যে। এই সূত্র মতে, বৃহত্তর খুলনায় প্রতি মাসে ২৫ কোটি টাকা মূল্যের মাদক বিকিকিনি হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সারা দেশে মাদক সেবনকারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। যার মধ্যে খুলনায় প্রায় ৩০ হাজার মাদকাসক্ত রয়েছে। এর মধ্যে শুধু মহানগরীতে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার। আর বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা মিলে এর সংখ্যা প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক।
মাদক সেবনকারী বেশির ভাগই তরুণ-যুবক। তালিকায় তরুণীরাও রয়েছে। এদিকে, মাদকের বাজার ধরে রাখতে বিক্রেতারা এখন স্কুল-কলেজকে টার্গেট করেছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের স্কুলব্যাগে করে মাদক বহন ও বিক্রি করতে পারে। যে কারণে মাদক বিক্রেতাদের এখন প্রধান টার্গেট শিক্ষার্থীরা। মেয়েরাও টার্গেটের বাইরে নয়। মাদকের মধ্যে ইয়াবা ও ফেনসিডিল সেবনকারীর সংখ্যা বেশি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, রাজনীতিক, সরকারি চাকরিজীবী এমনকি চিকিৎসকরাও মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়েছেন। একাধিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এ খবর জানা গেছে।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য মতে, সমাজে সংঘটিত অধিকাংশ অপরাধের সাঙ্গে জড়িতদের বয়স ১৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। যার অধিকাংশ স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী। এরা প্রত্যেকেই মাদকাসক্ত। মাদকের মারণ নেশায় আসক্ত হয়ে এসব তরুণ-যুবক চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকতি এমনকি খুনের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে।
উল্লেখ্য, খুলনায় সাধারণত গাঁজা, হেরোইন ও ফেনসিডিল সেবনকারীর সংখ্যা বেশি। তবে গত তিন-চার বছর ধরে ইয়াবা নামের টেবলেট (মাদক) মাদকের মার্কেট দখল করে নিয়েছে। মাদকের রাজ্যে ইয়াবাই এখন সর্বনাশা নীল নেশার রাজা। বিশেষ করে অভিজাত ধর্ণাঢ্য পরিবারের তরুণ-তরুণীদের কাছে ইয়াবা নামের মাদক খুবই জনপ্রিয়। খয়েরি রঙয়ের ছোট আকারের ট্যাবলেট যা ইয়াবা বা বাবাসহ নানা নামে পরিচিত। খুলনায় তিন ধরনের ইয়াবা পাওয়া যায়। গায়ে ‘ওয়াই’ লেখা ইয়াবা খুচরা বাজারে প্রতি পিস ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা,‘আর-সেভেন’ লেখা ইয়াবা ৫০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা। হেরোইন এক পোটলা ৫০ টাকা, গাঁজা এক পোটলা ৫০ টাকা এবং ফেনসিডিল ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ‘এম-কে’ এবং ‘এসপি’ লেখা দুই ধরনের ফেনসিডিল এখন বাজারে পাওয়া যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।