Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তদন্ত রিপোর্টে কি ফেঁসে যাচ্ছে ক্লাব?

| প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : ৪ বলে ৯২ রান ! গত ১১ এপ্রিল সিটি ক্লাব মাঠে দ্বিতীয় বিভাগ সুপার লীগে এক্সিউম-লালমাটিয়ার পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংয়ের প্রতিবাদ জানাতে লালমাটিয়া ক্লাবের বোলার সুজন মাহমুদের ১৩ ওয়াইড,৮ নো বলের বোলিং মিডিয়াকে উঠে আসায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে প্রকৃত কারন অনুসন্ধানে নেমেছে বিসিবি। এই ঘটনার ৫ দিন পর বিসিবি’র এন্টি করাপশান ইউনিট লালমাটিয়া ক্লাবের প্রতিবাদী বোলার সুজন মাহামুদ এবং দলটির কোচ আসাদুজ্জামান বিপ্লব এবং ডেকে তাদের শুনানী করেছেন। তবে সেই শুনানীও বিসিবি’র কাছে যথেস্ট মনে হয়নি। বিসিবি’র পরিচালনা পরিষদের সভায় শেখ সোহেল,জালাল ইউনুস এবং আকরাম খানকে দিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ৩ দিনের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন বিসিবি সভাপতি। তবে ৪ বলে ৯২ রানের ওই আলোচিত ঘটনায় ক্লাবের ইন্ধন খুঁজে দেখতে ক্লাবটির সেক্রেটারী আদনান রহমান দীপনকেও তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হতে হয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত করতে যেয়ে এমন ঘটনার প্রথম দৃস্টান্ত স্থাপনের কারনও খুঁজছে তদন্ত দল। গত ১০ এপ্রিল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে ইন্দিরা রোড-ফেয়ারফাইটার্স ম্যাচে ফেয়ারফাইটার্স বোলার তাসনিমের ৭ বলে ৬৯ রান খরচার কারনও উদঘাটনে নেমেছে বিসিবি’র তদন্ত দল। যে দুই আম্পায়ার পর পর দু’দিন ২টি ম্যাচকে কলুষিত করেছেন, সেই সামছুর রহমান জ্যাকি এবং আজিজুল বারী বাবুর বক্তব্যও নিয়েছে তদন্ত দল। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে গতকাল রিপোর্টটি জমা দেয়া হয়েছে বিসিবি’র আম্পায়ার্স কমিটির নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান শেখ সোহেলকে।
তদন্ত কমিটির প্রশ্নে ক্লাব ২টির কর্মকর্তা,কোচ এবং অভিযুক্ত ২ বোলারই পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংয়ের বিচার চেয়েছেন। লালমাটিয়া এবং ফেয়ারফাইটার্স সাধারন সম্পাদক অভিন্ন বক্তব্যই দিয়েছেন। লালমাটিয়া ক্লাবের সাধারন সম্পাদক আদনান রহমান দীপন জানিয়েছেন ‘ টস দেখতে দেয়নি আম্পায়ার। বলেছে তোমরা ব্যাটিং করবে আগে ! আমার অধিনায়ক আকসুকে এ কথা বলেছে। ঘটনার দিন আমি মাঠে ছিলাম না। তারপরও আমাকে ডেকেছে তদন্ত কমিটি। ’ ফেয়ারফাইটার্স সাধারন সম্পাদক সালাউদ্দিন হায়দার খোকন বলেছেন ‘ বিসিবি’র ভাবমূর্তি কেন ক্ষুন্ন করা হলো ? তদন্ত কমিটি বার বার একটা প্রশ্নই করেছে। আমার বোলার (তাসনিম) বলেছে মাঠে ম্যানেজমেন্টের কেউ ছিল না, কোচ কিছুই বলেনি আমাকে। তারপরও আমাদের কোন ইন্ধন আছে কি না, সে প্রশ্ন তদন্ত কমিটির। আমি বলেছি এটা দেখার দায়িত্ব তো বিসিবি’র। আমার অধিনায়ককে টস দেখতে না দিয়ে বলা হলো তোমরা আগে ব্যাটিং কর,১১টার মধ্যে ম্যাচ শেষ করতে হবে। যে দুই আম্পায়ার এমনটা করল, তাদের বিচারই তো আগে হওয়া উচিত। সিসিডিএমকে বার বার বলেছি চিহ্নিত আম্পায়ারদের বাদ দিয়ে ম্যাচ পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য। জ্যাকিও কানা বাবু ( আজিজুল বারী বাবু) কে যখন আমাদের ম্যাচে আম্পায়ারিং দেয়া হয়েছে,তখন ধরে নিয়েছি,আমাদের পরিনতি কি হতে যাচ্ছে ?’
একজন বোলার একটি বল বীমার করলে তাৎক্ষনিকভাবে সতর্ক করবে আম্পায়ার,এটাই স্বাভাবিক,দ্বিতীয়বার বীমার করলে বহিস্কৃত হবেন সেই বোলার। অথচ, এক ওভারে ১৩টি ওয়াইড,৫টি নো ডেলিভারী প্রতিটিই আবার বাউন্ডারি ! এমন বোলারকে শুরুতে থামিয়ে না দিয়ে কেন তাকে এমন বোলিংয়ের অনুমতি দেয়া হলো ? আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে এ প্রশ্ন তুলেছেন লালমাটিয়ার সাধারন সম্পাদক ‘ ২ টি ডেলিভারী বীমার করার পর মাঠে আমার বোলার সুজন বমি করেছে, তখনো তাকে থামানো হয়নি। আম্পায়ার বলেছে তাড়াতাড়ি খেলা শেষ কর।’
ফেয়ারফাইটার্স কোচ আনোয়ারুল মুস্তাকিম টরেও আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ‘ আগে এই আম্পায়াররা প্যাডে লাগলে আপীল করলেই এলবিডাব্লু দিয়ে দিত। এখন ব্যাট লিফট করলেও কট বিহাইন্ডের সিদ্ধান্ত দেয়।’
তবে আম্পায়ারিং নিয়ে অভিযোগের সতত্য খুঁজে পাননি আম্পায়ার্স কমিটির সদস্য সচিব সয়লাব হোসেন টুটুল ‘ আম্পায়ারিং নিয়ে কোন অভিযোগ থাকলে তারা তো সিসিডিএম কিংবা আম্পায়ার্স কমিটিকে চিঠি দিতে পারতো। তাদের অভিযোগ সত্য নয়। কারন এই সব আম্পায়ারের আম্পায়ারিংয়েই গাজী গ্রæপের অর্থায়নে পরিচালিত দল ২টি দ্বিতীয় বিভাগের সুপার লীগে খেলেছে। তাছাড়া শুনানীর সময়ে আম্পায়ারদেরও মুখোমুখি করানো হয়েছিল।’ ক্লাব অফিসিয়ালদের আপত্তিতে বিশেষ ক’জন আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে সিসিডিএমকে যে আপত্তি জনানো হয়েছে, সেই চিঠির ভিত্তিতে সিসিডিএম একটা প্যানেল আম্পায়ারের প্রস্তাব দিয়েছিল। তা স্বীকার করেছেন আম্পায়ার্স কমিটির সদস্য সচিব। তবে তাদের এই দাবি প্রত্যাখান করেছেন ট’র্নামেন্ট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম নাজমুল করিম টিংকু, এমনটাই বলেছেন আম্পায়ার্স কমিটির সদস্য সচিব ‘ সিসিডিএম থেকে এ ধরনের দাবি তোলা হয়েছিল। আম্পায়ার্স কমিটির এখতিয়ার সিসিডিএম কি করে নেয়, তাই আমাদের মরহুম চেয়ারম্যান তা প্রত্যাখান করেছেন। কোন ম্যাচে কোন আম্পায়ার ম্যাচ পরিচালনা করবে,তা ম্যাচের আগে সন্ধার মধ্যে সিসিডিএমকে জানিয়ে দেয়া হয়।’
যে সব ম্যাচে ভিডিও ক্যামেরার প্রয়োগ নেই, নেই ম্যাচ রেফারী সেই সব ম্যাচে পোয়ারবারো পক্ষপাতদুস্ট আম্পায়ারদের। সম্মানী বাবদ দ্বিতীয় শ্রেনীর আম্পায়ার হিসেবে ম্যাচ প্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা পাচ্ছেন। তার সঙ্গে বিসিবি’র সঙ্গে সীমিত সংখ্যক চুক্তিবদ্ধ আম্পায়ারের তালিকায় থেকে বেতন পাচ্ছেন। অভিযুক্ত দুই আম্পায়ার আজিজুল বারী বাবু এবং সামছুর রহমান জ্যাকি আছেন এই সুবিধাভোগীদের তালিকায়। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের দিকে তাই তাকিয়ে ঢাকার ক্লাবসমূহ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তদন্ত


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ