Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আন্দোলন-নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপির

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চার শ’ কেন্দ্রীয় নেতার তৃণমূল সফর কর্মসূচি
আফজাল বারী : শর্ট টাইমে মাঠ গরম করা প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। তাতে আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও থাকছে। রাজনৈতিক প্রতিক‚ল পরিস্থিতেই দলকে সুসংগঠিত করতে ইতোমধ্যে নানমুখী কৌশল গ্রহণ করেছেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ লক্ষ্যে মাত্র ১৫ দিনের সময় বেধে দিয়ে মাঠে নামিয়েছেন দলের চার শতাধিক নেতাকে। এদের মাধ্যমেই দেশের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলায় দলের হাল-হকিকত জানতে চান তিনি। এরপর কর্মকৌশল নিয়ে মাঠে নামবেন বিএনপি প্রধান। দলের নীতি নির্ধারক ও সিনিয়র একাধিক নেতার সাথে আলাপ করে এমন তথ্য জানা গেছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং আন্দোলনের বিষয়টি মাথায় রেখেই বিএনপি সারা দেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করছে।
এদিকে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত নতুন-পুরোনো মামলাসহ পরোয়ানা নিয়ে পাল্টা মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গণগ্রেফতার শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সারা দেশে সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই একটি মামলায় নিন্ম আদালতে জামিনের আবেদন করলে না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। দেশের অন্তত ২০ জেলায় পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে বিএনপির দাবি।
দলীয় সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে দলের সুস্থ ও কর্মোদ্দম ৫১ সিনিয়র নেতার নেতৃত্বে ৫১টি টিম গঠন করেছেন। টিম লিডারদের মধ্যে অনেকেই মাঠে। বাকিরাও যাচ্ছে। তারা প্রতিটি জেলায় কর্মীসভা করবেন, কেন্দ্রে দিকনির্দেশনা দেবেন। উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশে বাধাগ্রস্ত হলে নেতার বাসা-বাড়িতেই বৈঠক করবেন। এসব সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের অবস্থান, দলের ঐক্য, জোটের ঐক্য, আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে কথা বলবেন। একই সাথে সরকারের নেতিবাচক কর্মকাÐ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে বিলি করা হবে লিফলেট ও পোস্টার। আগামী ৭ মের মধ্যে এই ঝটিকা সফর শেষ করে দলীয় প্রধানের কাছে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করবেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক চিফ হুইপ জয়নূল আবদীন ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নে দলের নেতাকর্মীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সিনিয়র নেতারা হাত গুটিয়ে বসে আছে। সমালোচকরা অপপ্রচার করছে, আমাদের জোটে অনৈক্য দেখা দিয়েছে। কমিটি গঠন নিয়ে কোথাও কোথাও দলীয় দ্ব›দ্বও রয়েছে। সব মিলিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতেই এমন একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন চেয়ারপারসন।
গতকাল মঙ্গলবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ৫১ দলের  নেতৃবৃন্দ বৈঠকে এর কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ৫১টি দল সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় যাবেন এবং সেখনে আমাদের নেতাকর্মীদের সাথে মিলিত হবেন আনুষ্ঠানিকভাবে ও অনানুষ্ঠানিকভাবে। তারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। আন্দোলন, নির্বাচনসহ সকল বিষয় সেখানে আলোচনা হবে। আমরা আশা করছি, এই সফরে আমাদের দলের শক্তি আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ভবিষ্যতের কাযর্ক্রমের জন্য নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে। বিএনপি মহাসচিব জানান, পক্ষকালব্যাপী এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে ২২ এপ্রিল, শেষ হবে ৭ মে।
বৈঠকে নেতৃবৃন্দকে নির্ধারিত জেলা সফর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার তাগিদও দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল সোয়া ১০ থেকে দেড় ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে সারাদেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থা ও টিম প্রধানদের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমাদের জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাদেশে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে সাংগঠনিক সফরের জন্য ৫১টি টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম বিভিন্ন জেলায় যাবে। নেতাকর্মীদের সাথে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে কথা বলবে।
একাধিক নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ের সংগঠনের বর্তমান অবস্থা, আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে মাঠ নেতাদের সাথে টিম প্রধানরা ঘরোয়া আলোচনা করবেন। যেখানে যেখানে কমিটি নিয়ে বিরোধী ও গ্রæপিং আছে সে সম্পর্কেও অবহিত হবেন নেতৃবৃন্দ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল নোমান, কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভ‚ঁইয়া, অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, মনিরুল হক চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, নাজমুল হক নান্নু, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আসাদুল হাবিব দুলু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ টিম প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, বিলকিস জাহান শিরিন, আনোয়ারুল আজীম, মাহবুবুর রহমান শামীম প্রমুখ ছিলেন।
এদিকে গত কয়েকদিনে বিএনপি ও মিত্র দলের সহস্রাধিক নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহম্মেদ অভিযোগ করেছেন, মহানগর ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহসহ  দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ বিশেষ অভিযানের নামে ব্যাপক ধড়পাকড় ও হয়রানি-নির্যাতন করছে।
গত রোববার নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর কার্যালয় থেকে ফেরার পথে ৯ নং ওয়ার্ড নেতা শামসুদ্দিন বকুল ও  মো. হারুন,  জামালপুরে ১৮৯ জন, সাতক্ষীরায় ৪১ জন, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরে শতাধিক, বাগেরহাটে ৩৯ জন, পঞ্চগড়ে চারজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টঙ্গি থেকে ২০ দলীয় জোটের ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। মেহেরপুরে ২০০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও সাতজনকে আটক করা হয়। সর্বশেষ গতকাল মুন্সীগঞ্জ বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাইকে জেলে প্রেরণ করা হয়।



 

Show all comments
  • তানিম ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ৩:৫৯ এএম says : 0
    কবে যে প্রস্তুতি শেষ হবে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ