Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপক‚লভাগের জনজীবন বিপর্যস্ত তরমুজ-গোল আলুর পরে বোরো ও আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : গ্রীষ্মের লাগাতার দাবদাহের পরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা ধেয়ে এসে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবনকে মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। গত দুদিনের প্রবল বর্ষণে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলসহ উপক‚লভাগে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। বুধবারের দু’দফায় ১শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরে শুক্রবার তিন দফায় আরো প্রায় ১শ’ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে। গতকাল দুপুর ৩টা পর্যন্ত বরিশালে আরো ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের বিশেষ বুলেটিনে আগামীকাল (সোমবার) পর্যন্ত বরিশাল বিভাগসহ উপক‚লভাগ জুড়ে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবলা নদী বন্দরে ২ নম্বর হুশিয়ারি সংকেত বহাল রয়েছে। ফলে অনধিক ৬৫ ফুট দৈর্ঘের সব যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ রয়েছে। পায়রাসহ সবকটি সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতির কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনের কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। সাগর মাঝারি মাত্রায় উত্তাল রয়েছে।
এবারের গ্রীষ্মের শুরুতে এ লাগাতর বর্ষণে মাঠে থাকা বোরো ও আউশ ধানসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির ক্ষতির পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। এবারের বসন্তের অকাল অতি বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজ ও গোল আলুর ক্ষতির পরিমাণ ৫ শতাধিক কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র তরমুজের ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা। ভয়াবহ ক্ষতি সহ্য করতে না পেরে ভোলার এক গোল আলু চাষী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
গতকাল সকালে দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় সূর্যোদয় দৃশ্যমান না হলেও ৮টার পরে রোদের ঝলকানিতে অনেকেই আশাবাদী ছিলেন ভালো আবহাওয়ার। কিন্তু সকাল ১০টার মধ্যেই আকাশ কালো করে বৃষ্টির আগমন শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই গগনবিদারী গর্জনের সাথে বজ্রপাতে জনমনে ভীতিতে সঞ্চার হয়। একটানা ঘণ্টাখানেকের লাগাতর ভারী বর্ষণে বরিশাল মহানগরীর বেশিরভাগ রাস্তাঘাটই পানির তলায় চলে যায়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে বরিশাল মহানগরীর বিপর্যস্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আরো একবার জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে। গতকাল দিনভরই উপক‚লভাগ জুড়ে কম-বেশি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। দুপুর দেড়টা থেকে পুনরায় বজ্রপাতের সাথে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ শুরু হলেও বিকেল ৩টার পরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটে। তবে আকাশ পরিষ্কার হয়ে বিকেল ৪টা পরে রোদের ঝলকানি চোখে পরলেও তা খুব স্থায়ী হয়নি।
তবে আবহাওয়া বিভাগের বিশেষ বুলেটিনে বজ্রের ঘনঘটা বৃদ্ধি পাওয়ায় বরিশালসহ সমগ্র উপক‚লীয় এলাকায় ২২ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি লঘু চাপের বর্ধিত অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে জানিয়ে এর একটি বর্ধিত অংশ উত্তর বঙ্গপসাগরে অবস্থান করছে বলে জানান হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বরিশালসহ সমগ্র উপক‚লভাগ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণের কথাও বলা হয়েছে। তবে আজ সরকারের পরবর্তি ৪৮ ঘণ্টা পরে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাসসহ আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়ার দীর্ঘ মেয়াদি বুলেটিনে চলতি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের কথা জানান হয়েছে। গত মার্চেও বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫২% বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গত চারদিনে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে গতকাল ২৮ ডিগ্রিতে স্থির ছিল। যা এসময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ ডিগ্রি কম।
গত দুদিনের দফায় দফায় ভারী বর্ষণে বরিশাল মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোড, বগুড়া রোড ও নবগ্রাম রোডসহ বেশিরভাগ রাস্তাঘাটই গতকাল ছিল পানির তলায়। নগরীর বেশিরভাগ ড্রেনই নানা ধরনের বজ্যদ্রব্যে ভরাট হয়ে যাবার পাশাপাশি তা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার না করায় বিগত দুটি বছর ধরে এ পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে। অথচ মাথা ভারী প্রশাসনের কারণে বরিশাল সিটি করপোরেশন তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন ভাতাও পরিশোধ করতে পারছে না। রাস্তাঘাটসহ মহানগরী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল রাখতেই বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রায় ১ হাজার ছয়শ’ দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকসহ পরিচ্ছন্ন কর্মী পুষছে। নগরবাসীর করের টাকায় এবিপুলসংখ্যক শ্রমিকের বেতন দেয়া হলেও তাদের অর্ধেকই কোনো কাজ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রবল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ