পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ‘আগে যদি জানতাম’, ‘এই নীল মনিহার’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’, ‘কে বাঁশি বাজায়রে’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘মামনিয়া’, ‘লিখতে পারি না কোনও গান’, ‘বিতৃঞ্চা জীবনে আমার’, ‘কি করে বললে তুমি’ এমন অসংখ্য কালজয়ী গানের নির্মাতা লাকী আখন্দ আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ইন্তেকাল করেন তিনি। তার মেয়ে মামিন্তি আখন্দ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গতকাল (শুক্রবার) দুপুরে তার বাবার শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায় দ্রæত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানে সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) টানা আড়াই মাস চিকিৎসার পর গত সপ্তাহে আরমানিটোলার নিজ বাসায় ফিরেছিলেন লাকি আখন্দ। তিনি বাসায় থাকাকালীন ‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’ সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী এরশাদুল হক টিংকু দেখভাল করছিলেন। তিনি জানান, লাকী আখন্দ হাসপাতাল থেকে ফিরে ক’দিন বেশ ভালোই ছিলেন। তবে গতকাল দুপুর নাগাদ তার শরীরিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। যে কারণে তাকে আবারও হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন লাকী আখন্দ। ২০১৫ সালের শেষ দিকে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে কেমোথেরাপি নেয়ার পর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। ছয় মাসের চিকিৎসা শেষে ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ ব্যাংকক থেকে দেশে ফেরেন তিনি। একই বছরের জুনে আবারও কেমোথেরাপির জন্য ব্যাংকক যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আর্থিক সংকটের পরে আর সেখানে যাওয়া হয়ে উঠেনি। দেশের শীর্ষ শিল্পীদের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে চাইলেও বিনয়ের সঙ্গে লাকী আখন্দ তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ অভিমানী এই সঙ্গীতস্রষ্ঠা অন্যের সাহায্য-সহযোগিতায় নিজের চিকিৎসা চালাতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। তবে ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রীয় এই সহযোগিতায় তিনি কোনো আপত্তি করেনি। সরকারের পাশাপাশি পরবর্তীতে এরই মধ্যে লাকীর পাশে দাঁড়িয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
লাকী আখন্দের জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৮ জুন। শৈশব পেরোতেই তিনি সুযোগ পেয়ে যান রেকর্ড লেভেল প্রতিষ্ঠান এইচএমভিতে। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ছন্দ-লয়ের টানে তিনি ভেসে চললেন সুরদরিয়ায়। ১৯৮৪ সালে সারগামের ব্যানারে লাকি আখন্দের প্রথম সলো অ্যালবাম লাকী আখন্দ প্রকাশ পায়। তিনি ব্যান্ড দল হ্যাপি টাচ-এর সদস্য ছিলেন। তার পারিবারিক সূত্র জানায়, রাতে তার লাশ বারডেমের হিমঘরে। আজ বেলা ১১টায় প্রথম জানাজা হবে আরমানিটোলা জামে মসজিদ মাঠে।
প্রধানমন্ত্রীর শোক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ লাকী আখন্দের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গতকাল এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী সঙ্গীতাঙ্গন ও মুক্তিযুদ্ধে লাকী আখন্দের অবদানের কথা স্মরণ করেন। শেখ হাসিনা মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তথ্যমন্ত্রীর শোক
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী লাকী আখন্দের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতরাতে এক শোকবার্তায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘লাকী আখন্দের মৃত্যুতে দেশ একজন খ্যাতনামা শিল্পীকে হারাল।’ তিনি বলেন, লাকী আখন্দের কণ্ঠে পরিবেশিত সঙ্গীতের মূর্ছনা এ দেশের মানুষকে অনাগতকাল মুগ্ধ করে রাখবে।
এর আগে তথ্যমন্ত্রী দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত কণ্ঠশিল্পী লাকী আখন্দকে দেখতে কয়েকবার হাসপাতালে যান। হাসানুল হক ইনু লাকী আখন্দের রূহের শান্তি কামনা করেন ও শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মির্জা ফখরুলের শোক
আশির দশকের তুমুল জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী লাকী আখন্দের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কণ্ঠশিল্পী লাকী আখন্দের মৃত্যু সংবাদে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও ব্যথিত হয়েছি। লাকী আখন্দ ছিলেন দেশের গুণী কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি শুধু কণ্ঠশিল্পীই ছিলেন না, বরং একাধারে সঙ্গীত পরিচালক, সুরকার ও গীতিকার হিসেবেও সঙ্গীত ভুবনকে করেছিলেন সমৃদ্ধ। সঙ্গীত জগতে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মরহুম লাকী আখন্দ ছিলেন এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তার মৃত্যুতে দেশ হারাল একজন বরেণ্য গুণী শিল্পীকে, যার অভাব সহজে পূরণ হওয়ার নয়’।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কণ্ঠশিল্পী মরহুম লাকী আখন্দের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারবর্গ, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হবেন
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হবেন গীতিকার, সুরকার লাকী আখন্দ। আজ সকালে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠে প্রথম জানাজার পর তার লাশ নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেয়া হবে।
গার্ড অব অনার দেয়ার পর কিংবদন্তী এই শিল্পীর লাশ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানান শিল্পীর ঘনিষ্ঠজন এরশাদুল হক টিংকু।
শিল্পীর পরিবারের পক্ষ থেকে গীতিকার আসিফ ইকবাল জানান, আজ শনিবার সকালে বারডেমের হীমঘর থেকে লাকী আখন্দের লাশ নিয়ে যাওয়া হবে তার আরমানিটোলার বাসায়। তারপর সকাল ১০টায় আরমানিটোলা জামে মসজিদের মাঠে তার প্রথম জানাজা হবে।
এরপর সরকারি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে শিল্পীর লাশ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে গার্ড অব অনার দেয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শিল্পীর লাশ রাখা হবে।
বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করার বিষয়টি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও মেয়র আনিসুল হক পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন বলে জানান এরশাদুল হক টিংকু।
এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা. রুবায়েত রহমান বলেছিলেন, জীবিত অবস্থায়ও রাষ্ট্রের কাছে কোনো কিছু দাবি করেননি লাকী আখন্দ। ফলে এখনো তার পরিবার রাষ্ট্রের কাছে এই বিষয়ে কোনো দাবি করছে না। তবুও যদি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাতেও তাদের আপত্তি থাকবে না।
প্রেস ব্রিফিংয়ে লাকী আখন্দের ভাগ্নে দীপ আখন্দ তার মামার রূহের মাগফিরাত কামনা করেন সবার কাছে।
১৯৮৭ সালে ছোট ভাই হ্যাপী আখন্দের মৃত্যু পরপর সঙ্গীতাঙ্গন থেকে অনেকটাই স্বেচ্ছায় নির্বাসনে গিয়েছিলেন ৬১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা এই গুণী শিল্পী। মাঝখানে প্রায় এক দশক নীরব থেকে ১৯৯৮-এ ‘পরিচয় কবে হবে’ ও ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ অ্যালবাম দু’টি নিয়ে আবারো শ্রোতাদের মাঝে ফিরে আসেন লাকী আখন্দ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।