Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দাবদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৭ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭

নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে : চলতি মাসজুড়ে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে : শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি
হাসান সোহেল : প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা। একই সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ। দেশের কোথাও কোথাও বইছে তীব্র দাবদাহ। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৃষ্টি না হওয়ায় কোনভাবেই কমছে না গরমের মাত্রা। এমনকি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। গরমের কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনজীবন অচল হওয়ার উপক্রম। বিশেষ করে দুস্থ দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট চরমে পৌঁছেছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমতে পারে অন্যথায় তাপমাত্রা কমার কোনো আশঙ্কা নেই। বরং তাপমাত্রা বাড়তে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। কয়েকদিন ধরেই ৩৭ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ওঠা-নামা করছে। এছাড়া বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা গতকালও ছিল ৯১ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় (সোমবার) ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আগামী সপ্তাহে তা ৪০ ডিগ্রী ছাড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন এক আবহাওয়াবীদ। এদিকে তীব্র গরমে হাসপাতালে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বেশি বেশি পানি পান, স্যালাইন ও লেবুর শরবত খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
গতকাল রাজধানীর মানুষকে গরমে হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে। শষা, তরমুজ, ডাব, সরবত ও কোমল পানীয় বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়েছে অসুখ-বিসুখ। আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টি না হওয়ায় তাপমাত্রার চেয়ে একটু বেশিই গরম অনুভূত হচ্ছে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এ বছর বৃষ্টির সম্ভাবনা অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সারা দেশেই দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। প্রচÐ গরমের কারণে হাসপাতালে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। রাজধানীর মহাখালী আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত ৫শ’ রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত বুধবার ৪৯৪ রোগী ভর্তি হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬৭ রোগী ভর্তি হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর প্রকোপ বাড়ছে বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও রোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাখাওয়াত হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৬৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে দেশের ২০টি জেলায় ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আবহাওয়া অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সারা দেশে এ ধরনের পরিস্থিতি এপ্রিল মাসজুড়ে থাকবে। তবে আগামী ২১ এপ্রিলের পর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এদিকে দু’একদিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ শুরু হবে। তাই গরম আড়ও বাড়বে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবীদরা। একই সঙ্গে সারাদেশে মৃদু তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে।
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ায় তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো যশোরে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, যশোর, কুষ্টিয়া ও খুলনা অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে মৌসুমের প্রথম তাপ প্রবাহ। আবহাওয়া হাওয়া অফিস জানায়, মৌসুমের প্রথম তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু আগেই তাপমাত্রা ও বাতাসে আদ্রতার মাত্রা বেড়েছে। এ মাসজুড়ে তা অব্যাহত থাকবে।
এপ্রিল মাসের দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) এবং অন্যত্র এক থেকে দুটি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি (৩৮ এর চেয়ে বেশি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের ডায়রিয়াল ডিজিজ ইউনিট প্রধান ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, দেশে বর্তমানে ডায়রিয়ার পিক মওসুম (বছরে দুই বার মার্চ-এপ্রিল ও আগস্ট-সেপ্টেম্বরকে ডায়রিয়ার পিক সিজন ধরা হয়) চলছে। তিনি জানান, গত সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়েছে। অন্যান্যবারের মতো এবরো যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও ও বাড্ডা এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে। বিশেষ কোনো কারণে ওই সব এলাকা থেকে বেশি সংখ্যক রোগী আসছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। বিপুলসংখ্যক নিম্ন আয়ের লোক এসব এলাকায় বসবাস করে।
ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ এবং মূলত বিশুদ্ধ পানির সংকটের কারণেই ওই সব মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণে খাবারে দ্রæত পচন ধরছে। সেই খাবার খেয়েও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গরমে অতিষ্ঠ মানুষ রাস্তাঘাট ও ফুটপাতে অস্বাস্থ্যকর শরবত পান করেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন। নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। খোলা বা বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। রাস্তা বা ফুটপাতের সরবত ও এ ধরনের পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সবার ঘরে খাবার স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি রাখতে হবে। তবে রোগী বাড়লেও এখনো ডায়রিয়াজনিত কারণে কোন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি চলে যায় এবং গরমের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই যত দ্রæত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা গেলে শুধু ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। বারবার পাতলা পায়খানা হলে সঙ্গে সঙ্গে খাবার স্যালাইন খাওয়া শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বর্তমান সময়ে স্কুলগামী শিশুদের বাড়তি পরিচর্যা নিতে বাবা-মাকে অনুরোধ করেন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ