গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
সায়ীদ আবদুল মালিক : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা-মাশায়েখ সমাবেশকে ঘিরে গতকাল রাজধানীতে কোথায়ও যানজট আবার কোথায় যানবাহন সঙ্কট দেখা দেয়। এতে নগরবাসী পড়ে চরম ভোগান্তিতে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ সমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা ওলামা মাশায়েখরা পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে যান। জানা গেছে, সমাবেশের কারণে পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে বেশ কিছু সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করায় পলাশী, চানখারপুল, রূপসীবাংলা, কাঁটাবন ও বাংলামোটর এলাকায় তৈরি হয়েছে যানজট। এর প্রভাবে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি ধীর গতিতে চলার কারণে এ যানজট ছড়িয়ে পড়েছে নগরের বিভিন্ন এলাকায়। যে কারণে সমাবেশস্থলের আশপাশের এলাকায় যানজটের কারণে সাধারণ যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা গণপরিবহনে বসে থাকতে হয়েছিল। আবার অনেক জায়গায় যানবাহন না পেয়ে বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়েছিল। বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাসহ স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং অফিস আদালতগামী মানুষ কোথায়ও যানজট উপেক্ষা করে আবার কোথায়ও যানজট সঙ্কটে পড়তে হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে রাজধানীর ২৫ রুটে যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে রাজধানীর এ ২৫টি পয়েন্টে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত।
ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন ক্রসিং পর্যন্ত এবং শাহবাগ থেকে টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বর ক্রসিং পর্যন্ত দুই পাশের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুষ্ঠানে আগতদের চলাচল নির্বিঘœ করতে বিজয় সরণি, খামারবাড়ী, বাংলামোটর, মগবাজার, পরীবাগ, সাকুরা গলি, পুলিশ ভবন, সবজি বাগান, মিন্টো রোড পূর্ব প্রান্ত, অফিসার্স ক্লাব, কাকরাইল চার্চ, শিল্পকলার গলি, দুদক গলি, কার্পেট গলি, মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট, শহীদুল্লাহ হল, বকশীবাজার, পলাশী, নীলক্ষেত, রুমান চত্বর, কাঁটাবন, শাহবাগ এবং আজিজ সুপার মার্কেট ক্রসিং এলাকায় যানচলাচল বন্ধ রাখা হয়। এতে এসব এলাকায় চলাচলকারী যাত্রীরা পড়ে বিপাকে। হেঁটেই গন্তব্যে যেতে হয়েছে তাদের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সকালেই কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অনেককেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া শ্যামলী, কলেজগেট এলাকায় অনেককেই হেঁটে যেতে দেখা গেছে। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে গণপরিবহন চলছে হাতেগোনা মাত্র কিছু যানবাহন।
মিরপুর পল্লবী, সায়েদাবাদ থেকে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। পূর্বঘোষণা থাকায় অফিসগামী যাত্রীরা নিজেদের মতো করে রিকশা বা সিএনজিতে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
ফারম গেটে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন বেসরকারী ব্যাংক কর্মচারী আব্দুল আওয়াল বলেন, অফিসের কাজে গুলিস্তান যাব। কিন্তু যানবাহনের অভাবে যেতে পারছি না। তাই দাঁড়িয়ে আছি।
একই স্থানে ফাতেমা নামের আরও একজন জানান, তেজগাঁও এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা শেষে হেঁটে ফার্মগেট পর্যন্ত এসেছি এখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাবেন কিন্তু পরিবহন শূন্যতার কারণে দাঁড়িয়ে আছি।
এদিকে হাইকোর্ট থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত তীব্র যানজটে আটকা বাসযাত্রী বেলাল হোসেন বলেন, পুলিশ বলছে রাস্তায় নাকি ডাইভারশন চলছে। যে কারণে যানবাহন চলাচল গতিহীন। তাই কিছুটা দুর্ভোগ তো পোহাতেই হচ্ছে। সমাবেশের উদ্দেশ্যে আসা ওলামা-মাশায়েখদের যানবাহন আগারগাঁও আবহাওয়া অফিসের পাশে এবং ঢাকার বাইরে থেকে ভাড়া করে আনা বাস রাখা হয় আগারগাঁওয়ের বাণিজ্য মেলা মাঠে। সেখান থেকে মুসল্লিদের দল বেঁধে হেঁটে বা রিকশায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশস্থলে যেতে দেখা যায়।
এদিকে শহরের কেন্দ্রস্থলে পুলিশ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করায় ফার্মগেইট, মহাখালী, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন দেখা গেছে একেবারেই কম।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকরা দুই লাখের বেশি মানুষের উপস্থিতির আশা করায় এবং ঢাকার বাইরে থেকে ওলামা-মাশায়েখদের নিয়ে প্রায় আড়াই হাজার যানবাহন ঢাকায় আসায় এবং রাস্তা বন্ধ রাখার পাশাপাশি ২৫টি স্থানে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়ে আগের দিনই নগরবাসীকে সতর্ক করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ।
গতকাল দুপুরে রমনা এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মশিউর রহমান বলেন, সোহরাওয়ার্দীতে সম্মেলন ঘিরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ডাইভারশনের কথা থাকলেও ওই এলাকায় তা শুরু হয়েছে বেলা সোয়া ১টার পর। তার পর থেকে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে ধীরগতি দেখা যায়। বেলা ২টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আনন্দ রায় জানান, যান চলাচল স্বাভাবিক থাকায় তার এলাকায় তখনও ডাইভারশনের দরকার হয়নি।
মোহাম্মদপুর থেকে মহাখালী যাওয়ার পথে আসাদ গেইট পর্যন্ত তীব্র যানজটের পর কিছুটা ফাঁকা রাস্তা পেলেও বিজয় সরণিতে গিয়ে আবার যানজট পড়ার কথা জানা যায়।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বেলা পৌনে ৩টায় বলা হয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে পলাশী, চানখারপুল, রূপসীবাংলা, কাঁটাবন ও বাংলামোটর এলাকায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।