২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মাঝে মধ্যে মনের ভিতরটা বড্ড ফাঁকা লাগে। মনে হয় যেন পৃথিবীতে কেউ নেই কিছু নেই অনন্ত এক শূন্যতা। সূর্য ডোবা দেখলে মনে হয় তার সঙ্গে আমারও বুঝি যাবার সময় হলো। এমনটা হতে পারে দীর্ঘদিন কোমর ব্যথায় ভোগা মানুষের ক্ষেত্রে। তবে যথাযথ আধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি বদলে দিতে পারে এমন দুঃসহ অবস্থা। প্রিয় পাঠক, আপনাদের কিছুটা হলেও সুস্থ রাখার প্রয়াস নিয়ে শুরু করছি আজকের এই লেখা।
মিসেস মাহেরা, বয়স ৪১ বৎসর। এসেছিলেন আমার কাছে তার-কোমর ব্যথার চিকিৎসার জন্য। তিনি গত মার্চ ২০১৪ সাল থেকে কোমর ব্যথায় ভুগছেন। ব্যথা হলে মাঝে মাঝে বিভিন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কখনও একটু ভাল থাকেন আবার কখনও ব্যথা বেড়ে যায়। এভাবে পার হয়েছে জীবনের বেশ কিছু দিন। এখন আর বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না কিন্তু বেশিক্ষণ হাঁটতে পারে। আমি যখন তার সঙ্গে রোগের ইতিহাসের কথা জিজ্ঞাসা করছিলাম, এক পর্যায় তিনি কেঁদেই ফেললেন। কারণ বেশিক্ষণ বসে আমার সঙ্গে রোগের বর্ণনা করতে পারছে না। এমআরআই এবং এক্স-রে রিপোর্টে বলা হয়েছে কোন অসুস্থতা নেই। কিন্তু তার ফিজিক্যাল পরীক্ষা করে দেখা গেল- চিৎ হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু বুকের দিকে টানলে ব্যথা পায়। কোমরের নিচের দিকে এল৪-৫এস-১ লেভেল-এ চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হয়। তার কোমরের লংগীসিমাস, স্পাইনালিস মাসেল-লাম্বার রিজিওনে ব্যথা এবং টেনডার। পেটের নিচের মাসেল দুর্বল ও চাপ দিলে ব্যথা পায়। এই মাংসগুলো আমাদের শরীরের পেছনের দিকে মাজায় বা কোমরে, পেঁট, লোয়ার লাম্বার ও ফিমারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। রোগীর ঐ মাংসগুলোর শক্তি কমে গেছে এবং লাম্বার রিজিওনের এল৪-৫ এস১ লেভেল-এ লিগামেন্ট ইঞ্জুরি আছে। সে কারণে বসা অবস্থায় অনেক ব্যথা হয়।
উপরোক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে বলতে পারি যে চিকিৎসা শুরুর পূর্বেই সঠিক এ্যাসেসমেন্ট অত্যান্ত জরুরি, যা কিনা সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন। কোমরের অসুস্থতা বের করার জন্য এক প্রকার এ্যাসেসমেন্ট আছে যা, কোমর ব্যথার বিভিন্ন কষ্ট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নির্ণয় করা যায়। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকগণ মনে করেন, এই এ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী উপরোক্ত রোগীর জন্য সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা করালে তার রোগের উপশম হবে। তারপর মিসেস মাহেরাকে ফিজিওথেরাপির চিকিৎসার অন্যতম মোডালিটিস, লো-লেভেল লেজার এবং আলট্রা সাউন্ড দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। সেই সঙ্গে ওয়াক্সপ্যাক দিয়ে সুন্দর করে ব্যাক রিজিওনে বা কোমরের অংশে স্ট্রোকিং করতে হবে। তারপর মনোযোগ সহকারে সময় নিয়ে সফট টিস্যু মোবালাইজেশন করতে হবে। এরপর উপুর করে শুয়াইয়ে বুকের নিচে একটি বালিশ দিয়ে কোমরের ডিপ-কোর মাসেলের অন্যতম মাসেল মাল্টিফিডাস এবং চিৎ হয়ে শুয়ে টেনেসভার্সাস এ্যাবডোমিনিস-এর চিকিৎসা করতে হবে। সাধারণত তিনটা ধাপে মাল্টিফিডাস ও টেনেসভার্সাস এ্যাবডোমিনিসকে শক্তিশালী ও স্ট্যাবেলাইজ করতে হবে। ঠিক সে নিয়মেই বিভিন্ন ভঙ্গিতে ঐ মাংসগুলোর শক্তি বাড়ানোর চিকিৎসা করতে হবে। তারপর কোমরের সুপার ফিসিয়াল গ্রুপ-এর তিনটি মাংসের শক্তি বাড়াতে হবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, যে লিগামেন্ট এবং মাসেল অসুস্থ হয়েছে ও যে মাসেলগুলোর লেন্থ(লম্বা হওয়া) কমে গেছে এবং শক্তি কমে গেছে ঐ মাসেলগুলোর লেন্থ বাড়ানোর এবং শক্তি বাড়ানোর ফার্মাকোলজিক্যাল বা প্রেসক্রিপশন মেডিকেশন নাই বল্লেই চলে। সুতারাং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমেই শুধুমাত্র লম্বা বাড়ানো যেতে পারে এবং দুর্বল মাংশকে শক্তিশালী করতে পারে। তারপর লাম্বার রিজিওনের মায়োফেসিয়াল রিলিজ করতে হবে। ঐ টিস্যুগুলোর এভাবে চিকিৎসা করলে তার কোমরের কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে। এই চিকিৎসার জন্য তাকে অনেক সময় দিতে হবে। অল্প সময় চিকিৎসা করে, চিকিৎসা বন্ধ করলে চিকিৎসা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। সেক্ষেত্রে কোমর ব্যথা পুনরায় হতে পারে।
খাদ্য তালিকায় একটু পরিবর্তন আনতে হবে যেমন- প্রচুর পানি বা জুস, চেরী ফল দিনে ৬টা, দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার, ১/৪ চা চামচের আদার রস নিয়মিত, সালমন মাছ, হেরিং মাছ ও সার্ডিন মাছ ও এক চিমটে কালজিরা কাঁচা পেঁপের সঙ্গে খেতে হবে। প্রতিদিন সকালে খালি পেঁটে এক কাপ উষ্ম পানি খাবেন, সেই সঙ্গে প্রতিদিন গড়ে একটানা ৮ঘণ্টা ঘুমালে এই রোগ থেকে আরও দ্রুত আরোগ্য পাওয়া যায়। বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আমরা যারা উপরোক্ত কষ্টে(কোমর ব্যথায়) ভুগছি তারা যেন অতি শীগ্রই সঠিক চিকিৎসা নেয়। কেননা দেরিতে চিকিৎসা নিলে আমাদের কষ্ট আরও বেড়ে যেতে পারে, কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেক বেশি সময় লাগতে পারে, আরও অন্যন্য শারীরিক অসুস্থতা হতেই পারে, জীবনের অনেক মূলবান সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং অনেক আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
কোমর ব্যথার চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা অবশ্যই ভাল। সেজন্য সামনে ঝুঁকে ও ডানে-বামে বাঁকা হয়ে কাজ করার সময় বেশি সতর্ক থাকবেন এবং পেটের মাংস শক্ত করে কাজ করবেন। দৈনিন্দন জীবনে কাজ-কর্ম এবং চলেফেরায় সঠিক ভঙ্গি মেনে চলবেন। একই অবস্থায় বেশিক্ষণ কাজ করবেন না। মাংসের ট্রিগার পয়েন্ট রিলিফ করতে হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলবেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকগণ-এর পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক বিছানায় সঠিক নিয়মে ঘুমাবেন। ধকল বা কঠিন চাপ মুক্ত থাকুন- বি রিলাক্স। কোমরের মাংসের নিয়মিত স্ট্রেসিং ও স্ট্রেন্দেনিং করুন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকগণ-এর পরামর্শ অনুযায়ী এক্সারসাইজ করুন। ধূমপান বর্জন করুন।
ফিজিওথেরাপি বিজ্ঞানী এবং নন সার্জিকেল সলিউশন ফর দ্যা স্পাইন-এর বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও এমন ওষুধ তৈরি হয় নাই যে ওষুধ খেলে আপনার মাংস পেশী লম্বা হবে, শক্তিশালী হবে এবং আপনার জয়েন্ট মবিলিটি বেড়ে যাবে। তবে ফিজিওথেরাপি বা এক্সারসাইজ- ইজ এ মেডিসিন যা আপনাকে উক্ত কষ্টগুলো থেকে মুক্তি দেবে। সুতারাং সম্পূর্ণ চিকিৎসা পেতে হলে আপনাকে সঠিক মোবালাইজেশন, মেনুপুলেশন, স্ট্রেসিং এবং স্ট্রেন্দেনিং এর মতো চিকিৎসা করতেই হবে।
ষ প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার
ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার
৪৪/৮, পান্থপথ, ঢাকা। ০১৭৬৫ ৬৬ ৮৮ ৪৬, ০১৭৮৫ ৯৯ ৯৯ ৭৭
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।