Inqilab Logo

শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে আরএসএস’র মুসলমান ধ্বংসের ডাক

প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি’র পৃষ্ঠপোষক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) আবারো মুসলমানদের ধ্বংসের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। গত রোববার ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কর্মীর জন্য আয়োজিত শোক সভায় আরএসএস নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করার ডাক দেন। উল্লেখ্য, জনৈক হিন্দু শ্রমিকের সাথে কতিপয় মুসলমান যুবকের ঝগড়ার পর সে অপমৃত্যুর শিকার হলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাকে নিজেদের কর্মী বলে দাবী করে। তার স্মরণে শোক সভার আয়োজন করে হিন্দুদের মধ্যে মুসলমান বিদ্বেষী উগ্রতা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে সংঘ পরিবারের সদস্যরা। শতকোটি মানুষের দেশ ভারতের আজকের অবস্থান শত শত বছর ধরে হিন্দু-মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মকা- ও সহাবস্থানের ফসল। ভারতে মুসলমানরা সংখ্যালঘু হলেও যে কোন বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের চেয়ে ভারতে মুসলমানের সংখ্যা বেশী। বৃহত্তর ভারত গঠনের পাশাপাশি ভারতের ঐতিহাসিক ক্রমবিবর্তনে সেখানকার মুসলমানদের ভূমিকা অসাধারণ। হিন্দু-মুসলমানসহ সব ধর্মের, সব ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের জাতীয় ঐক্য ও সংহতিপূর্ণ সহাবস্থান ছাড়া অখ- ভারতের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায়না। এ কারণেই ভারতীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার শুরুতেই ধর্মনিরপেক্ষতাকে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রীয় আদর্শ বা মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল।
ভারতে শত শত বছরের মুসলমান শাসনের ইতিহাসে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে না। একবিংশ শতকে এসে ধর্মনিরপেক্ষতা ও মাল্টি কালচারালিজমের উপর ভিত্তি করে গড়েওঠা আধুনিক, গণতান্ত্রিক ভারতে হিন্দুত্ববাদের দোহাই দিয়ে মুসলিম নিধন ও মুসলমানদের ধ্বংসের ডাক, দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির মাধ্যমে নারকীয় রক্তপাতের ঘটনা ভারতকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা’ সচেতন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী ভারতীয়দের ভাবতে হবে। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কালে ভারতের হিন্দু নেতারা ধর্মীয় উস্কানী দিয়ে হিন্দু-মুসলমানদেরকে রক্তাক্ত সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। সেই সংঘাতের ধারাবাহিকতা পরে আর বন্ধ হয়নি। হিন্দুত্ববাদী নেতৃবৃন্দ সব সময়ই মুসলমান বিদ্বেষী, উত্তেজক বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের প্রয়াস চালিয়েছেন। বাবরী মসজিদ ধ্বংস, গুজরাট দাঙ্গা থেকে শুরু করে ২০১৩ সালে মুজাফফর নগরের দাঙ্গা পর্যন্ত বেশীরভাগ দাঙ্গার পেছনে হিন্দুত্ববাদী নেতাদের অসহিষ্ণুতা এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক বক্তব্য বড় ভূমিকা পালন করেছে। ভারতের এক শ্রেণীর রাজনীতিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তার মানুষ প্রায়শ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কাল্পনিক অভিযোগ তুলে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপের পক্ষে মত দিয়ে থাকেন। বহু ধর্ম, মত ও সংস্কৃতির দেশ ভারতে মুসলমান, খ্র্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ শত শত বছর ধরেই গরুর গোশত খাচ্ছে। পাশাপাশি এ কথাও ঠিক যে, গরুর গোশত রফতানীকারক দেশ হিসেবেও ভারত বিশ্বের অন্যতম প্রধান দেশ। ভারতের পালিত কোটি কোটি গরু যদি খাওয়াই না হয় তাহলে এ সবের পরিণতি কি হবে। গো রক্ষার নামে মুসলমান হত্যার ধারাবাহিক উস্কানী কোন সচেতন ও দেশপ্রেমিক ভারতীয়র কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, মুজাফফর নগরে ধর্মীয় দাঙ্গা সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত বিধায়ক সঙ্গীত সোমকে সর্বোচ্চ জেড ক্যাটাগরির রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে বিজেপি সরকার। আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান, কারো জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দিলে রাষ্ট্র তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে, এটা তার অধিকার। কিন্তু জাতিগত ঐক্য ও সংহতি বিনষ্টকারী এবং শত শত নিরীহ মানুষ হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এ ধরনের উস্কানী ও দাঙ্গার ঘটনা কখনো বন্ধ করা যাবেনা। গণবিরোধী নেতাদের নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরেই জীবন কাটাতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে গো-রক্ষার নামে ভারতে অনেক নিরপরাধ মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করেছে উগ্র হিন্দুরা। কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে আরএসএস আবারো ভারতে মুসলমানদের ধ্বংসের ডাক দিল। এ ধরনের উস্কানীমূলক বক্তব্যে ভারতীয় মুসলমানরা উদ্বিগ্ন হবে, তারা নিজেদের নিরাপত্তাহীন বোধ করবে। তাছাড়া বেসরকারী হিসাবে ৩০ কোটিরও অধিক মুসলমানকে ধ্বংস করার ঘোষণা কোন সভ্য সমাজের পক্ষে কতটুকু শোভনীয় সেটিও দেখার বিষয়। এ ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে ভারতীয় আদালত, মানবাধিকার সংস্থা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয় ও ইতিবাচক ভূমিকা পালনের কোন বিকল্প নেই। আমরা এ ধরনের বক্তব্যের নিন্দা জানাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতে আরএসএস’র মুসলমান ধ্বংসের ডাক
আরও পড়ুন