পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : প্রেম, পরকীয়া অতঃপর অভিসারের ফাঁদ পেতে খুন। নিষিদ্ধ প্রেমের নির্মম বলি হয়েছেন সেই মো: আলাউদ্দিন আলাওল (২৪)। খুনি তারই সাবেক প্রেমিকা, তার স্বামী, আর দুই দেবর। পুলিশের জালে আটকা পড়েছে তারা। স্বীকার করেছে খুনের দায়ও। আর এর মধ্য দিয়ে এক সপ্তাহের মাথায় চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাÐের রহস্যও উদঘাটন হয়েছে। প্রেমিকা ও তার স্বামীর পরিকল্পনায় আলাওল খুন হয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান সমাজে সর্বগ্রাসী নৈতিক অবক্ষয়ের বড় দৃষ্টান্ত এ খুনের ঘটনা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র আলাউদ্দিন আলাওল। গত ২২ মার্চ রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার পশ্চিম শহীদনগর এলাকার ওমান প্রবাসী আবু সৈয়দের চারতলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে অজ্ঞাত যুবক হিসেবে আলাউদ্দিনের লাশ উদ্ধার করা হলেও পরদিন মর্গে স্বজনরা তার লাশ শনাক্ত করেন।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ। আলাওলের মোবাইল রেকর্ডের সূত্র ধরে তার প্রেমিকা ইয়াসমিন আক্তার রুম্পাকে (২২) জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। একপর্যায়ে রুম্পা লোমহর্ষক এ হত্যাকাÐের দায় স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রুম্পার স্বামী মো: ইকবাল হোসেন (২৭), তার দুই সৎ ভাই মো: তৈয়ব (৩২) ও মো: হেলালকে (১৯) গ্রেফতার করে পুলিশ।
রুম্পা আলাওলকে অভিসারের ফাঁদ পেতে ডেকে এনে খুন করার ঘটনা বর্ণনা দেয় পুলিশের সামনে। রুম্পা জানায়, আলাওলের সাথে তাদের প্রথম পরিচয় ২০০৭ সালে। তখন সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আলাওল তাদের প্রতিবেশী। একপর্যায়ে তাকে প্রাইভেট পড়াতে শুরু করে সে। পড়ার ফাঁকেই গড়ে ওঠে প্রেম। জীবনের প্রথম প্রেম মন-প্রাণ উজাড় করে দিয়ে আলাওলকে ভালোবাসতে শুরু করে রুম্পা। আলাওলও প্রচÐ ভালোবাসে তাকে। প্রেম গড়ায় বিছানা পর্যন্ত, সবকিছু ফ্রেমবন্দী (রেকর্ড) হয় মোবাইলে। প্রেম আর অভিসার চলে টানা তিন বছর।
এরই মধ্যে ২০১০ সালে রুম্পার বিয়ে ঠিক হয়। স্বামী হাটহাজারীর চৌধুরীহাটের ওমর সাদেক।
স্বামী যেমন তার প্রেমের কথা জানত না। তেমনি আলাওলের কাছেও বিয়ের কথা গোপন রাখে রুম্পা। তাদের অভিসার চলতে থাকে আগের মতো। এমন লুকোচুরি চলে কয়েক বছর। পরে বিয়ের খবর জেনে যায় আলাওল। আলাওল তাকে পালিয়ে যেতে বলে সংসার ছেড়ে। তবে রুম্পা এতে সায় দেয়নি। স্বামীর সংসার আর পরকীয়ার নামে নিষিদ্ধ প্রেম চলতেই থাকে। ততদিনে রুম্পার কোলজুড়ে আসে কন্যা শিশু। একপর্যায়ে তাদের এই প্রেমের সম্পর্ক ধরা পড়ে স্বামী সাদেকের হাতে। ঘটনা বিস্তারিত জেনে রুম্পাকে তালাক দেন স্বামী। ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই যেদিন সাদেক রুম্পাকে তালাক দেয় সেদিনই ওমান প্রবাসী রাউজানের ইকবাল হোসেনকে বিয়ে করে রুম্পা।
রুম্পা জানায়, একপর্যায়ে আলাওলের নিষিদ্ধ প্রেম তাকে বিষিয়ে তোলে। এ কারণে ডিভোর্সের পরই ফের বিয়ে করে সে। সে পালাতে চায় আলাওলের খপ্পর থেকে। মুক্তি চায় অভিশপ্ত সেই প্রেম থেকে। আবারও সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চায় সে। এবার স্বামী ইকবালকে নিয়ে নতুন জীবন, নতুন সংসার ভালোই চলছিল তার। কিন্তু দৃশ্যপটে আবারও সেই আলাওল চলে আসে। এবার সে তার কাছে থাকা প্রেম আর অভিসারের ভিডিও বাজারে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয় এবং তাকে বাধ্য করে আগের মতো তার আহŸানে সাড়া দিতে।
এভাবে চলতে চলতে একপর্যায়ে বিষয়টি ধরা পড়ে স্বামী ইকবালের কাছে। কিন্তু সবকিছুই অস্বীকার করে রুম্পা। এরই মধ্যে স্বামী চলে যায় ওমান। এ সময় তাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। অসুস্থ হয়ে হঠাৎ স্বামী ফিরে এলে সে সংযত হয়। এড়িয়ে চলতে থাকে আলাওলকে। কিন্তু আলাওল কোনো ধরনের বাধাই মানে না। তার অব্যাহত হুমকি সাথে স্বামীর সন্দেহাতুর চোখের পীড়াপীড়িতে একপর্যায়ে স্বামী ইকবালকে সব খুলে বলে রুম্পা। স্বামী ইকবাল ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সিদ্ধান্ত নেয় নিষিদ্ধ ও অভিশপ্ত এই প্রেমের গল্প শেষ করার।
২২ মার্চ রুম্পা ফোন করে আলাওলকে। আসতে বলে সৈয়দপাড়াস্থ শহীদনগর চারতলা মোড়ে। প্রেমের টানে চলে আসে আলাওল। রুম্পা দরজা খুলতেই আলাওল দেখে বাসায় সে একা না। স্বামী ইকবালসহ আরো কয়েকজন। রুম্পা জানায়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওই খালি বাসাটি ভাড়া নেয়ার কথা বলে তারা সেখানে অবস্থান করে। আলাওল আসতেই প্রথমে ইকবাল ও তার দুই ভাই আলাওলের হাত-পা বেঁধে ফেলে। ঘটনায় আকস্মিকতায় হতবিহŸল হয়ে পড়ে আলাওল। আর তখনই ইকবালের দুই ভাই তৈয়ব ও হেলাল গলায় রশি পেঁচিয়ে দুই দিক থেকে টান দেয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। এরপর হাত-পা বাঁধা লাশটি ওই বাসার বাথরুমে রেখে তারা সবাই সটকে পড়ে। রুম্পা জানায়, আলাওলের হাত-পা বেঁধে ফেলার পরও সে কোনো চিৎকার করেনি। তার ধারণা ছিল তাকে ভয় দেখানোর জন্য এটা করা হচ্ছে। তবে তাকে খুন করার সময় রুম্পা ঘর থেকে বেরিয়ে যান বলে দাবি করেন পুলিশের কাছে। রুম্পা বলেন, খুন করে তার স্বামী ও দেবররা তাকে জানান সব শেষ করে দিয়েছি।
হত্যাকাÐের রহস্য উদঘাটন নিয়ে গতকাল বায়েজিদ থানা চত্বরে প্রেস ব্রিফিং করেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মো: আব্দুল ওয়ারীশ। তিনি বলেন, সমাজে চলমান নৈতিক অবক্ষয়ের বড় দৃষ্টান্ত এ ঘটনা। প্রথমে প্রেম এরপর পরকীয়া এবং অবশেষে ফাঁদ পেতে খুন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আলাওলকে। তিনি বলেন, আলাওলের সাবেক প্রেমিকা স্বীকার করেছেন বাধ্য হয়ে সে আলাওলকে হত্যা করেছে। তার দাবি আলাওলের কারণে একের পর এক তার সংসার ভেঙে যাচ্ছিল।
থানার ওসি মো: মহসিন জানান, হত্যাকাÐের পর রুম্পা ও ইকবাল প্রথমে নগরীর হামজারবাগ এলাকায় তাদের বাসায় যায়। পরে রাউজান উপজেলার হিংলায় চলে যায়। সেখান থেকে তাদের গেফতারের পর আলাউদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয় এবং পরে ভোলার লালমোহন থেকে তৈয়ব ও হেলালকে গ্রেফতার করা হয়। আরেক অভিযুক্ত মাসুদকে গ্রেফতার করা যায়নি। রুম্পা ও তার স্বামী ইকবাল খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিতে রাজি হয়েছে বলে জানান ওসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।