রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
শাহজাদপুরে ৪৭ কর্মসৃজন প্রকল্পে অনিয়ম
সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ থেকে : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পে শ্রমিকের নাম সরকারি কাগজপত্রে আছে, বাস্তবে নেই। স্বল্পসংখ্যক শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পগুলোর কাজ করানো হচ্ছে। বেশির ভাগ প্রকল্পে ভুয়া শ্রমিকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় কর্মসূচির সুফল থেকে প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছেন। কর্মসৃজন প্রকল্পে বরাদ্দ লাখ লাখ টাকা সংশ্লিষ্টরা আত্মসাৎ করছে। ফলে সরকারের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি ভেস্তে যেতে বসেছে। এই আত্মসাৎ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের মেম্বার, চেয়ারম্যান, ব্যাংক কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ট্যাগ অফিসাররা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, সরকার অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে পাঁচ হাজার ২১০ জন শ্রমিকের বিপরীতে চার কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। উপজেলার পোঁতাজিয়া, কৈজুড়ি, জালালপুর, কায়েমপুর, হাবিবুল্লাহনগর, গাড়াদহ, রূপবাটি, নড়িনা, সোনাতনি, খুকনী, পোড়জোনা, বেলতৈল ও গালা ইউনিয়নে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে বরাদ্দ টাকা ৪৭টি প্রকল্পে ভাগ করে দেয়া হয়। প্রকল্পগুলোতে স্বল্পসংখ্যক শ্রমিক দিয়ে লোকদেখানো নামমাত্র কাজ করা হচ্ছে। প্রতিটি প্রকল্প কাজ তদারকির জন্য একজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। ট্যাগ অফিসাররা প্রকল্প কাজ তদারকি না করেই অফিসে বসে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের তৈরি করা ভুয়া মাস্টাররোলে স্বাক্ষর করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলার এক প্রভাবশালী নেতার নিয়ন্ত্রণে গত ৪ ফেব্রæয়ারি থেকে কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা ৪০ কর্মদিবস কাজ করবেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন একজন শ্রমিক মজুরি পাবেন ২০০ টাকা, এর মধ্যে ১৭৫ টাকা নগদ, অবশিষ্ট ২৫ টাকা শ্রমিকের ব্যাংক হিসাব খাতে জমা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে শ্রমিকরা ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা এককালীন তুলে নিতে পারবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নিয়মকানুনের কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চেকে ডান বাম হাতের টিপ স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাংক থেকে লাখ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করছে। ওই নেতার নির্দেশে কর্মসৃজন প্রকল্পের অনিয়ম, দুর্নীতি ও আত্মসাৎ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। এই তহবিলের টাকা দিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, মস্তান, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং কিছু কিছু সাংবাদিককে ম্যানেজ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা প্রকল্পগুলো সরেজমিন তদন্ত এবং ব্যাংক চেকের টিপ স্বাক্ষর পরীক্ষা করলেই দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসবে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, শাহজাদপুর উপজেলার একটি ইউনিয়ন ১৩ নং জালালপুর। এই ইউনিয়নে চলতি ২০১৭ অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পে ১৯২ জন শ্রমিকের অনুক‚লে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। গত ৪ ফ্রেব্রæয়ারি থেকে শুরু হওয়া জালালপুর ওয়াবদা ব্রিজ সংলগ্ন ও সৈয়দপুর বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তায় মাটি ভরাট কাজ চলছে। কয়েকজন মহিলা শ্রমিক রাস্তার টপে মাত্র এক ডালি করে মাটি ফেলছে। সংশ্লিষ্টরা তাদের এভাবেই মাটি ফেলতে বলেছে বলে তারা জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জালালপুর ইউপির কয়েকজন সদস্য জানান, চেয়ারম্যান তাদের বলেছেন, ১৯২টি শ্রমিক কার্ডের ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে নেতার ৩৮টি। বাকি ১৫৪টি শ্রমিক কার্ডের মধ্যে মাত্র ৭৭ জন শ্রমিক মাঠে কাজ করছেন। অবশিষ্ট ৭৭টি শ্রমিক কার্ড কী করা হয়েছে তা একমাত্র চেয়ারম্যানই বলতে পারবেন। অভিযোগ উঠেছে, এই ৭৭টি কার্ডে ভুয়া শ্রমিক অন্তর্ভুক্ত করে চেয়ারম্যান নিজেই টাকা আত্মসাৎ করছেন। মেম্বাররা বলেন, চেয়ারম্যান নিজে ব্যাংক থেকে শ্রমিকদের বিলের টাকা তুলে তাদের কাছে প্রত্যেক শ্রমিকের ১৫ কর্মদিনের বিল বাবদ এক হাজার ৫০০ টাকা করে দিয়েছে। বিলের অবশিষ্ট টাকা ব্যাংকে খরচ হয়েছে বলে চেয়ারম্যান তাদের জানিয়েছেন। এ ঘটনা শুধু জালালপুর ইউনিয়নেই নয়, শাহজাদপুর উপজেলার পোঁতাজিয়া, কৈজুড়ি, কায়েমপুর, হাবিবুল্লাহনগর, গাড়াদহ, রূপবাটি, নড়িনা, সোনাতনি, খুকনী, পোড়জোনা, বেলতৈল ও গালা ইউনিয়ন সরেজমিন ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। গত ১৫ মার্চ দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে জালালপুর ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ১৮ জন মহিলা শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের মধ্যে ঝর্ণা বেগম ও আছিয়া খাতুনসহ কয়েকজন শ্রমিক জানান, তারা আজ পর্যন্ত ১৫ দিন কাজ করেছেন। দৈনিক হাজিরা হিসেবে তাদের ১০০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। বাকি ৭৫ টাকা মেম্বার-চেয়ারম্যান রেখে দিয়েছেন। কর্মসৃজন প্রকল্প তালিকায় শ্রমিকদের নাম আছে, কিন্তু ব্যাংকের পাশবই তাদের কাছে নেই। ফলে শ্রমিকরা নিজেরা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারছে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ব্যাংক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ডান-বাম হাতের টিপ স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাংক থেকে শ্রমিকদের বিলের টাকা উত্তোলন করছে। এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক কৈজুরী শাখার ব্যবস্থাপক শফি আলম গত ১৬ মার্চ বিকালে কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের বিল চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদের তুলে নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, শ্রমিকরা ব্যাংকে আসেনি, সে জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বাররা শ্রমিকদের স্বাক্ষর করা চেক ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছে। এতে কোনো অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। ব্যাংক ম্যানেজার এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। স্থানীয় এমপি মোঃ হাসিবুর রহমান স্বপনের প্রতিনিধি কৈজুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্পের যে টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে তা জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রতিটি ইউনিয়নে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যদি কোনো চেয়ারম্যান কর্মসৃজন প্রকল্পে দুর্নীতি করে থাকেন তাহলে তা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জিন্দার আলী ও প্রজেক্ট কর্মকর্তা আরিফ হোসেনের যোগসাজশেই হয়েছে। তাছাড়া প্রকল্প কাজে অনিয়ম বা দুর্নীতি করা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জিন্দার আলীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনে কর্মসৃজন প্রকল্প বিষয়ে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, পত্রিকায় রিপোর্ট হলে আমাকে অহেতুক ঝামেলা পোহাতে হবে। এতে আপনার কোনো লাভ হবে না। বরং ভালো হয় আপনি অফিসে এসে এককাপ চা খেয়ে যান। এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা আলিমুন রাজীবের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনিয়মের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। নিয়ম মেনে প্রত্যেক শ্রমিকের ব্যাংক হিসাবে টাকা পোস্টিং দেয়া হয়েছে। শ্রমিকরা চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করবে এটাই নিয়ম। কোনো শ্রমিক যদি অন্য কাউকে দিয়ে টাকা উত্তোলন করে, সে ক্ষেত্রে আমার করার কিছু নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।