পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অপরাধীদের প্রতারণা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
নিরলসভাবে কাজ করছে : খন্দকার গোলাম ফারুক
সাধারণ পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যখন-তখন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের দৃশ্য গণমাধ্যমে দেখে অপরাধী এবং প্রতারকচক্র অভিনব কৌশলে অপরাধ শুরু করেছে। ভুয়া ডিবি সেজে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সেজে প্রতারণা করছে। ফাঁদে ফেলে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। এই প্রতারকচক্র রাজধানী ঢাকায় এবং এর আশপাশে বিরাট নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। ব্যাংক থেকে মানুষ টাকা উত্তোলন করে সেইসব মানুষকে বেশি টার্গেট করে থাকে এই প্রতারকচক্র। তারা নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে মাইক্রোবাসে মানুষকে তুলে নিয়ে সবকিছু হাতিয়ে নেয়। এমন ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। প্রতারকচক্র ডিবির জ্যাকেট ব্যবহার করায় এখন যাতে তা করতে না পারে সে জন্য ডিবির নতুন জ্যাকেট করা হয়েছে। এখন প্রতারকচক্র এ জ্যাকেটের মনোগ্রাম নকল করতে পারবে না। জ্যাকেটের আদলে জ্যাকেট বানালেও মনোগ্রামের ভেতর কিউআর কোটসহ গোপন নম্বর কখনোই নকল করা যাবে না জানা গেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) খন্দকার গোলাম ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, ডিবি পরিচয় দেয়া প্রতারকচক্র পুলিশের অভিযানে মাঝে মধ্যই ধড়া পড়ছে। এরা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যায়। কিন্তু বেরিয়ে এসে আবার একই অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। ভুয়া ডিবির প্রতারণা ঠেকাতে শুধু গোয়েন্দা পুলিশই নয়। ডিবির পাশাপাশি থানা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থাও নিরলসভাবে কাজ করছে।
এই প্রতারণচক্র সাধারণত ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। সেখানে ব্যবসায়ীসহ লেনদেনকারীর গতিবিধি গভীরে পর্যবেক্ষণ করে। এরপর যেসব জায়গায় ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা নেই এমন নিরিবিলি কিংবা তাদের সুবিধামতো স্থানে লেনদেনকারী ভুক্তভোগীর গতিরোধ করে। এরা নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য কোনো সংস্থার সদস্য বলে পরিচয় দেয়। ভুক্তভোগী কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অজুহাতে তুলে নেয় নিজেদের মাইক্রোবাসে। কখনো কখনো হ্যান্ডকাপও পরানো হয়। মাইক্রোবাসের ভেতরেই ভুক্তভোগীর ওপর চালানো হয় চরম নির্যাতন। পরে তার টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয়া হয় নির্জন কোনো স্থানে। আবার ভুক্তভোগীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি নাটোরের বড়াইগ্রাম এলাকা থেকে হ্যান্ডকাপ পরিহিত অবস্থায় অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, ভুয়া ডিবির প্রতারকচক্রের কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।
গত কয়েক মাসে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার ও পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডিবি পরিচয়ে প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেকেই। এরমধ্যে ভুক্তভোগীর তালিকায় রয়েছেন আমেরিকা ফেরত প্রবাসীও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুয়া ডিবির পরিচয়ে এ ধরনের প্রতারকের অস্তিত্ব শুধু ঢাকাতেই নয়। দেশজুড়েই গড়ে উঠেছে এ চক্রের নেটওয়ার্ক। ডিবি পরিচয়ে প্রতারণা ঠেকাতে গত বছরের মাঝামাঝি ঢাকায় ডিবির জ্যাকেটে আনা হয় পরিবর্তন। নতুন জ্যাকেটে সংযোগ করা হয় ডিবির কুইক রেসপন্স (কিউআর) কোড। মোবাইল অ্যাপসভিত্তিক এ জ্যাকেটে সংযুক্ত করা হয়েছে গোপন নম্বর, গোয়েন্দা পুলিশের মনোগ্রাম ও রঙিন লোগো। এছাড়া নতুন পোশাকে আরো কিছু গোপনীয় ফিচার রয়েছে। কিন্তু এর পরেও ডিবি পরিচয়ে প্রতারণা থামছেই না। প্রায়ই এদের খপ্পরে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
কেস স্ট্যাডি-০১ (এক) : গত ১৩ ডিসেম্বর। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৮টা। রিকশাযোগে মতিঝিল যাচ্ছিলেন একজন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। সিটি সেন্টার পার হতে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই কালো রঙের মাইক্রোবাস তার রিকশার গতিরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তার কাছে অবৈধ জিনিস আছে উল্লেখ করে রিকশা থেকে নেমে গাড়িতে উঠতে বলে। ভুক্তভোগী গাড়িতে উঠতে না চাইলে ঘটনাস্থলেই তাকে নির্যাতন করে গাড়িতে উঠানো হয়। দুই হাতে হাতকড়া পড়ানো হয়। এরপর তার কাছে থাকা ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা, একটি মোবাইল ফোন ও কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। এরপর মতিঝিল শাপলা চত্বর, ধোলাইপাড়, ধলেশ্বরী টোলপ্লাজা ও কুচিয়ামারা ব্রিজ হয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পিডিএল ক্যাম্পের সামনে রাত সাড়ে ৮টার দিকে হ্যান্ডকাপ পরিহিত অবস্থায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর মাইক্রোবাসটি মাওয়ার দিকে চলে যায়।
কেস স্ট্যাডি-০২ (দুই) : গত ১৩ জানুয়ারি। দেশে ফিরেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মো. আরিফ হোসেন। তাকে বহনকারী বিমান রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। রাত পৌনে ২টায় এয়ারপোর্ট থেকে মাইক্রোবাসে যাচ্ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজির নিজের বাড়িতে। মাইক্রোবাসটি সিদ্ধিরগঞ্জের আটি ওয়াবদা কলোনী এলাকায় পৌঁছা মাত্রই পেছন থেকে অনুসরণ করা অপর একটি সাদা মাইক্রোবাস তাদের আটকে দেয়। ওই মাইক্রোবাসের আরোহী প্রতারকরা প্রবাসী আরিফ হোসেনকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তল্লাশির নামে তার মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পরে আরিফ হোসেনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করা হয়। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন স্বজনরাও। এসময় ডিবি পুলিশের জ্যাকেট পরা ৭/৮ জন প্রবাসী আরিফের কাছ থেকে নগদ ৫ হাজার ১২০ ইউএস ডলার, আমেরিকান গ্রীনকার্ড, পাসপোর্ট, আইফোন, ক্রেডিট কার্ডসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে।
কেস স্ট্যাডি-০৩ (তিন) : কেরামত আলী একজন ব্যবসায়ী। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার দড়িগাঁও বাজারে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। গত ১৩ নভেম্বর দুপুরে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাগে করে ৮৫ লাখ টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যাংকে। পথিমধ্যে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন লোক কেরামত আলীর গতিরোধ করে এবং নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়। নির্জন জায়গায় নিয়ে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব টাকা লুট করে পালিয়ে যায়।
প্রথম ঘটনাটির সাথে জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পশ্চিম নাখালপাড়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কালো রঙের নোয়া গাড়িটিও। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই চক্রটি প্রাইভেট কার নিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ঘোরাফেরা করে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে আসা, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বের হওয়া এবং মানি এক্সচেঞ্জের ব্যক্তিদের টার্গেট করে। চক্রের প্রধান পলাতক শহীদুল ইসলাম মাঝির বিরুদ্ধে সারাদেশে ১৬টি মামলা রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীতে প্রায়ই র্যাব-ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত বেশ কিছু সদস্য সম্পৃক্ত। বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের অপরাধীরা ধরা পড়েছে। সম্প্রতি গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট এলাকায় মাইক্রোবাসে ডিবি পরিচয়ে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে চারজনকে গ্রেফতার করে পল্টন থানা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডিবি লেখা জ্যাকেট, হ্যান্ডকাপ, ওয়াকিটকি, চাকু, খেলনা পিস্তল, পুলিশ লেখাযুক্ত হোল্ডার লাইট, চ্যানেল আই লেখাযুক্ত কাগজ, পুলিশ লেখাযুক্ত কাগজ, গাড়ির দু’টি নকল নম্বর প্লেট ও মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিলকুশার এক ব্যবসায়ী বলেন, সব দিক ঠিক না রেখে এমনিতেই ব্যবসা করা কঠিন। এরপর আবার ভুয়া ডিবির অত্যাচার। তিনি বলেন, ভুয়াদের আচরণে বোঝার উপায় নেই তারা ভুয়া। এছাড়া ভুক্তভোগীদের কি কখনো আসল-নকল যাচাইয়ের সুযোগ দেয়া হয়।
বেশ কিছু চক্র বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ব্যাংকের গ্রাহকসহ সাধারণ ব্যক্তিদের টার্গেট করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতারকদের গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। তারপরও সাধারণ মানুষ এমন অপরাধীদের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। এ ধরনের অপরাধীরা জামিনে বের হয়ে পুনরায় একই কর্মকাÐে জড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে আকবর হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, একবার অপরাধ করলে তার জামিন হতে পারে। কিন্তু একাধিকবার একই অপরাধে কেউ গ্রেফতার হলে তার যাতে জামিন না হয় এমন একটা আইন করা এখন সময়ের দাবি। এছাড়া এ ধরনের অপরাধীদের টেলিভিশন ও পত্রিকায় এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা দরকার যাতে করে সবাই তাদের চিনতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় ছিনতাইকারী অথবা ডাকাত চক্রের সোর্স রয়েছে। স¤প্রতি ব্যাংকে যারা বড় বড় লেনদেন করছেন তাদের টার্গেট করে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করে টাকা লুট করছে ভুয়া ডিবি পরিচয়ের ডাকাত দল। এরা খেলনা পিস্তল ও হাতকড়া ব্যবহার করছে। এতে আসল ডিবি পুলিশের ভাবম‚র্তি ক্ষুণœœ হচ্ছে।
তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও টাকা লেনদের ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। এছাড়াও বেশি টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।