পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প ২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৩ সালে শেষ হবার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি। দু’বার সময় বাড়ানোর পর আবারো নতুন করে সময় বাড়িয়ে তা ২০১৭ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। সেই সাথে নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ৪৪৬ কোটি ২০ লাখ টাকা বাড়িয়ে নতুন ব্যয় ধরা হয়েছে, ১ হাজার ২১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রকল্পের অনুমোদনকালে এর মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সংশোধনীর ফলে তেজগাঁও -পান্থপথ লিংক রোড, এফডিসি গেটের পরিবর্তে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত ৪৫০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৪ শতাংশ বলে বলা হয়েছে। এদিকে ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্প সহনীয় করতে ফ্লাইওভারটিতে নতুন কিছু উপাদান সংযোজন করা হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় সেবাদানকারী বিভিন্ন সংস্থা গ্যাস পাইপ লাইন, পানির লাইন, নর্দমাসহ বিভিন্ন ভূগর্ভস্থ পরিসেবার অবস্থান অক্ষুণœ রেখে ফাউন্ডেশন ডিজাইনে সমন্বয় করা হয়, যার ফলে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে।
রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে ১৯৯৯ সালের ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ডের সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকার ২০টি পয়েন্টে ফ্লাইওভার, বাস-বে, বাস টার্মিনাল, পার্কিং এরিয়া নির্মাণের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল। এর অংশ হিসেবেই মহাখালী ও খিলগাঁয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। একই লক্ষ্য নিয়ে দুই বছরের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছিল। প্রকল্পের কাজ দীর্ঘায়িত হওয়ায় যানজট যেমন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি জনসাধারণের ভোগান্তিও বেড়েছে। ধূলিবালি অব্যবস্থাপনায় দুর্ভোগ-দুর্গতি চরম আকার ধারন করেছে। প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মানুষ আহত হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এখন যেসব প্রসঙ্গ তুলে সময় ও ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে তা নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠা অস্বাভাবিক নয়। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে দফায় দফায় এ প্রকল্পের অর্থ বাড়ানো হয়েছে। সেইসাথে প্রকল্পটি সময়মত শেষ না হওয়ায় সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কয়েক দফা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ইতোপূর্বে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, একজন প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এ প্রকল্পের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকার কারণেই পরিস্থিতি এমনটা হয়েছে। এ কারণেই অর্থ ও সময় বার বার বাড়লেও নীরবে তা মনে নেয়া হয়েছে। অথচ চুক্তিতে আছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বদল, কালো তালিকাভুক্ত করাসহ আর্থিক জরিমানা ও কারাদ-ে দ-িত করা যাবে। সাধারণভাবেও মনে করা হয়, কোন কাজ সময়মত শেষ না হলে তার একটা জবাবদিহিতা থাকে। দেখা যাচ্ছে, কাজের অগ্রগতি নিয়ে কোন মহলেরই কার্যত কোন গরজ নেই। এ অবস্থা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত।
আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে রাজধানীর যানজট নিরসনের কোন বিকল্প নেই। ইতোপূর্বে যেসব ফ্লাইওভার নির্মিত হয়েছে তা থেকে কিছুটা হলেও উপকার পাওয়া গেছে। এটা সঙ্গত বিবেচনা থেকেই বলা যায়, কোন প্রকল্প থেকে উপকার পেতে হলে তার পুরোটা বাস্তবায়িত হতে হয়। বছরের পর বছর যদি প্রকল্প ঝুলে থাকে বা ঝুলিয়ে রাখা হয় তাহলে সময় ও অর্থ ব্যয় দুটোই বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে দুর্নীতির সুযোগও সৃষ্টি হয় যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আলোচ্য ফ্লাইওভার নির্মাণ নিয়ে এযাবৎকাল যা কিছু ঘটেছে তাতে নগরবাসীর ক্ষতি ছাড়া লাভ হয়নি। জনগণের অর্থে জনগণের সুবিধার কথা বলে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে তা থেকে জনগণ যতটা উপকৃত হয়, তার চেয়ে বেশি উপকৃত হয় একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আলোচ্য প্রকল্পও এর বাইরে নয়। প্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবারে একনেকের বৈঠকে সময় না বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ যথাযথভাবে কার্যকর হবে। জনস্বার্থ নিশ্চিত করতে দ্রুতই কাজ শেষ করে প্রকল্পটি সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।