Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বঙ্গোপসাগর উপক‚লের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি নিষ্ক্রিয় : নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম

| প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : “গোয়াল পোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়।” প্রবাদটির যথার্থ প্রমাণ পেলে বঙ্গোপসাগর উপক‚লে সুন্দরবন ঘেঁষে বসবাস করা মানুষগুলোর জীবন-জীবিকায়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপক‚লীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের বিশাল জনগোষ্ঠী প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করে। এ তিন জেলার ২২১টি ইউনিয়নের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি তৎপর থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব। তবে এসব এলাকায় সক্রিয় নেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও সতর্ক সংকেত জানান, দুর্যোগকালীন প্রতিরোধ ও পরবর্তীতে প্রতিকারে কার্যকর ব্যবস্থা নেবার সরমঞ্জামাদি নেই ওসব এলাকায়। দুর্যোগ প্রতিরোধ দিবস পালন ও জেলা-উপজেলা সদরে রুটিন সভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ জেলা-উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির কাজও। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আঘাত হানলে তার ক্ষত নিরসনে বছরের পর বছর কেটে যায় ক্ষতিগ্রস্তদের। ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি কার্যকর এবং ওইসব কমিটির হাতে প্রয়োজনীয় সরমঞ্জামাদি দেয়া এখন সময়ের দাবি। সর্বশেষ, গত বছরের মে মাসের শেষদিকে রোয়ানু অল্পপরিসরে আঘাত হেনেছিল উপক‚লীয় অঞ্চলে। এর আগে, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন, সিডর ও আইলা পর্যায়ক্রমে আঘাত হেনেছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বঙ্গোপসাগর উপক‚ল ও সুন্দরবন ঘেঁষা এ তিন জেলায় সাধারণত নদী ভাঙন, কাল বৈশাখী, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ও অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি সর্বনিম্নপর্যায়ে কমিয়ে আনা সম্ভব দুর্যোগ-পূর্ব ও পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে। লজিস্টিক সাপোর্টসহ স্বেচ্ছাসেবী লোকবল প্রস্তুত রাখা, নিম্নচাপ সংক্রান্ত আবহাওয়া দপ্তরের জারিকৃত বুলেটিন শোনা এবং তদানুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ সে অনুযায়ী জনগণকে জানানো, পরামর্শ দেয়া, দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা, তাদের খাদ্য সংস্থানের প্রয়োজন হলে, যথাসম্ভব সেটা করা। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা। দুর্যোগ সংক্রান্ত স্থায়ী আদেশাবলী অনুসরণে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা সদরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে পরিস্থিতির ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখা; সাইক্লোন সেন্টারসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে দুর্যোগ সহজে মোকাবেলা করা যেতে পারে। এ জন্য প্রথমেই প্রয়োজন উপজেলা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সক্রিয়করণ।
খুলনার সর্বদক্ষিণে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. মঞ্জুর আলম নান্নু বলেন, “প্রায় প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এই এলাকার মানুষ। আইলা-সিডরের ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি তারা। ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সক্রিয় করে তাদের হাতে দুর্যোগকালীন প্রয়োজনী যেমন, রেডিও, মাইক-বাঁশি, ছাতা-ওয়াটার প্রæপ পোশাক, জলযান, প্রাথমিক চিকিৎসা সরমঞ্জামাদি দিলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি কমানো যাবে। মনে রাখতে হবে এ এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী আকাশে মেঘ দেখলেও ভয় পায়।”
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জিএম মাকসুদুল আলম বলেন, যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে একবার নদীবাঁধ ভেঙে গেলে; সেটা পুঁজি করে ক্ষমতাসীন-প্রভাবশালীরা বাণিজ্যে মেতে উঠেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সক্রিয় থাকলে সেটা কমবে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও কমবে; ক্ষতিগ্রস্তরাও স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা সেবা পাবে। এজন্য জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন বললেন, “দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো সক্রিয় করতে উদ্যোগ নিয়েছি; গত ১৩ মার্চও সভা করেছি। ১৯ মার্চ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ডিজি আসছেন।” তৃণমূলের দুর্বলতা স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় সরমঞ্জামাদীর অপ্রতুল্যতা রয়েছে। তবে সরকার স্যাটেলাইট সংযোগের রেডিও দেবার পরিকল্পনার কথা শুনছি। উপক‚লীয় জনগোষ্ঠীর সচেতনতা সৃষ্টিতে স্থানীয়দের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় ১৭০টির, সাতক্ষীরায় ৭৪টি ও বাগেরহাটে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরে এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলার জলোচ্ছাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় দক্ষিণ জনপদের উপকূলীয় অঞ্চল। আঘাতে মানচিত্র পরিবর্তন হয়ে যায় সুন্দরবন উপকূলীয় এ তিনটি জেলার। পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারের অভাবেই অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দশ বছর পেরিয়ে গেলেও, দুর্গত এলাকাগুলোতে নির্মাণ করা হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার। সর্বশেষ, গেল বছর ২০ মে উপক‚লে অপেক্ষাকৃত অল্পপরিসরে আঘাত হেনেছিল রোয়ানু। অবশ্য নতুন সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ ও পুরনোগুলো সংস্কারে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানালেন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো চাঙ্গা করতে কাজ করছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরও এবিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ নাজমুল আহসান বলেন, যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি কমানো যায়। সে জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির গুরুত্ব ব্যাপক। খুলনার উপক‚লীয় উপজেলা কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়ার কয়েকটি এলাকায় দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের আগাম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। একই সাথে সচেতনতা সৃষ্টিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বঙ্গোপসাগর

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ