Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মাদক ও ফোনের রমরমা ব্যবসা

| প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


কেরানিগঞ্জ ও কাশিমপুরে বসানো হচ্ছে বডি স্ক্যানার : ১৮ শতাংশ কয়েদি মাদক ব্যবসায় জড়িত -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : কাজে আসছে না জ্যামার
হাসান-উজ-জামান : কারাগারেও থেমে নেই মোবাইল ফোনের ব্যবহার। অবাধে চলছে মাদকের ব্যবসা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের ৬৮টি কারাগারের সব ক’টির চিত্র প্রায় একই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কারাগারের প্রায় ১৮ শতাংশ কয়েদি মাদক ব্যবসায় জড়িত। এদিকে কারাসূত্র জানায়, মাদক প্রবেশ ঠেকাতে জেলখানায় বডি স্ক্যানার বসানো হচ্ছে। অচিরেই ঢাকা ও কাশিমপুর কারাগারে বডি স্ক্যানার স্থাপন করা হচ্ছে। মোবাইল ফোনের ব্যবহার রোধে কারাগারে স্থাপিত জ্যামার ঠিকমতো কাজ করছে না। নেই জ্যামার ব্যবহারে অভিজ্ঞ জনবলও।
অভিযোগ রয়েছে, কয়েদি, জমাদার ও অসাধু কারারক্ষীরা মাদক ব্যবসায় জড়িত। ওই চক্রটিই কারাগারে মোবাইল ফোনের ব্যবসা করে। এক সময়ের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী কারারক্ষী মাদক সম্রাজ্ঞী নাদিরা আক্তার আলো বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলো। তিনি গ্রেফতার পরবর্তী জামিন এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। কিন্তু থেমে নেই তার মতোই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। কারা সূত্র জানায়, এ ধরনের অভিযোগে গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন কারারক্ষীসহ সংশ্লিষ্ট অন্তত ৬০ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মাদক ব্যবসায় জড়িত সেবন ও সরবরাহের অভিযোগে শাস্তি পেতে হয়েছে অনেককে। কারাগারের ভেতরে মাদকের বেচাকেনা রোধে গঠিত বিশেষ টিমও কাজ করছে। টাকায় সব ধরনের নেশাদ্রব্য মিলে কারাগারে। তবে বিশেষ করে ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজার চাহিদা ও সরবরাহ বেশি। বহনে সহজলভ্য এবং কম ঝুঁকির জন্য ইয়াবা ট্যাবলেটের ব্যবহারই সেখানে বেশি বলে জানা গেছে। বাইরের চেয়ে অন্তত ৫ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয় কারাগারে। আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়া বন্দিরা ফেরার সময় নানা কৌশলে মাদকদ্রব্য কারাগারের ভেতরে নিয়ে যায়। মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগীরা আদালত চত্বরে ঘোরাফেরা করে, সুযোগ পেলেই বন্দিদের কাছে মাদকদ্রব্য পৌঁছে দেয়। অনেক সময় আদালতে হাজিরা দিতে আসা হাজতিদের তাদের স্বজনরা যেসব খাবার দেয়, সেগুলোর মধ্যেও লুকিয়ে মাদক কারাগারের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ঢুকছে কারাগারে। অনেক কারারক্ষী নিজেরাই বন্দিদের কাছে মাদক দ্রব্য বিক্রি করে। অথবা বন্দিদের কাছে মাদক সরবরাহের ব্যবস্থা করে।
পরিসংখ্যান উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের কারাগারের প্রায় ১৮ শতাংশ কয়েদি মাদক ব্যবসায় জড়িত। এছাড়া আইনের দুর্বলতার কারণে অবৈধ মাদকের ব্যবসা রোধ করা যাচ্ছে না।
কারা সূত্র জানায়, অতি সম্প্রতি কক্সবাজার কারাগারের এক আসামির পায়ু পথ থেকে ১০৪২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। দু’টি পলিথিনে মুড়িয়ে ওই আসামি সেগুলো বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিয়ে এসেছিলো। আদালত থেকে ফেরার সময় বিশেষ ব্যবস্থায় আসামিরা মাদক নিয়ে প্রবেশ করে। এমনও দেখা গেছে, কেউ কেউ পলিথিনে মুড়িয়ে ট্যাবলেট খেয়ে আসে। পরে টয়লেট করে সেগুলো বের করে। বিশেষ কায়দায় ফলের ভেতরে ইয়াবা ট্যাবলেট ভরে উপরে স্টিকার লাগিয়ে আবার পিঠার ভেতরে ট্যাবলেট ভরেও কারাগারে সরবরাহের পর তা উদ্ধার হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ নানা পদক্ষেপ নিয়েও মাদক বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।
ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তাদের পরিদর্শনকালে অনেক সময় বিভিন্ন সেল থেকে মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার হয়। কখনো কখনো টয়লেটের ভেতর থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় সেট উদ্ধারের খবর মিলেছে। সূত্র জানায়, কারাগারে মোবাইল ফোনের নিয়মিত ব্যবসা চালু আছে। রাতে ঘণ্টা হিসেবে মোবাইল ভাড়া পাওয়া যায়। হাজার টাকার বিনিময়ে সারারাত কথা বলার সুযোগ মিলে। দু’শ’ টাকায় ঘণ্টা।  আবার কয়েকজন বন্দি মিলে নিজেরাই সেট কিনে তা ব্যবহার করছে। অসাধু কারা রক্ষীরা অল্প টাকার সেট বন্দিদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে। আর একটি চক্র মোবাইল ফোনের ব্যবসা করছে।
কারাগারে মাদকের বিস্তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সহকারী কারা মহা-পরিদর্শক (প্রশাসন) মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাদক কিংবা অবৈধ জিনিস কারাগারে  যেভাবে ঢুকছে সেভাবেতো উদ্ধারও হচ্ছে। তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীরাইতো জেলে আসে। তারা সেখানেও খারাপ কিছু করার চেষ্টা করে। মাদকরোধে কারাগারে বডি স্ক্যানার বসানো হচ্ছে। আপাততঃ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানিগঞ্জ) ও কাশিমপুর হাই সিকিউরিটিজ কারাগারে দু’টি স্ক্যানার বসানো হচ্ছে। কারাগারে মোবাইল ফোনের ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় ৫ শিফটে আবার রাতে তিনবার কারারক্ষীদের শিফট পরিবর্তন হয়। কোন অসাধু কারারক্ষীর মাধ্যমে মোবাইল সেট ভেতরে যেতে পারে। আবদুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, মোবাইলের ব্যবহার রোধে কারাগারের জ্যামার অনেক সময় ঠিকমতো কাজ করে না। বিশেষ করে লোড শেডিং থাকলেতো নয়ই। কারা সংশ্লিষ্ট কোন কর্মচারীর বিরুদ্ধে অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিñিদ্র নিরাপত্তার মধ্যেও কারাগারের ভেতরে মাদক দ্রব্যের প্রবেশ হতাশাজনক। এতে করে কারাগারের অপরাধীরা সংশোধনের পরিবর্তে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠবে। সেটাই কিন্তু জাতির জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কারাগার

৭ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ