পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : চাকরি দেয়ার নাম করে নিয়ে যাওয়া খুলনার রূপসা মহাবিদ্যালয়ের এইচএসসির ছাত্রী মেহেরুন নেছাকে (২২) গত আড়াই বছরেও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে এখন তার মা ও ভাই পাগল প্রায়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার চাজর্শীটভুক্ত আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে মিথিলকে পুলিশ অজ্ঞাত কারণে গ্রেফতার করছে না। এমনকি এ মামলার এজহারভুক্ত তিন আসামির মধ্যে দুইজনকে বাদ দিয়ে আদালতে একজনের বিরুদ্ধে চাজর্শীট দাখিল করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, রবিউল ইসলাম ভারতে নারী ও শিশু পাচারকারী চক্রের হোতা। তার সাথে পুলিশ প্রশাসনের যোগসাজস রয়েছে। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা আমলে নেন না এবং তাদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে সাহস পান না।
পাচার হওয়া মেহেরুন নেছার মা খাদিজা বেগমের দায়ের করা মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থানার বাসিন্দা ও খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানাধীন নতুন রাস্তার বড় মসজিদ এলাকার ভাড়াটিয়া আজিজ শেখের ছেলে হুমায়ুন শেখ, তার স্ত্রী মিতা বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম (মিথিল) পূর্বপরিচিত হওয়ায় খাদিজার রূপসার ইলাইপুরস্থ বাসাবাড়িতে যাতায়াত করত। সে সুবাদে তার পরিবারের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। রবিউল ও তার মা মিতা বেগম বিভিন্ন সময় খাদিজার মেয়ে মেহেরুন নেছাকে খুলনার বাইরে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি দেবে বলে প্রলোভন দেখায়। এ কথা জানতে পেরে রবিউল ও তার মা মিতা বেগমকে মেহেরুন নেছার চাকরির দেয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দেন খাদিজা। কিন্ত তাতে তারা কোন কর্ণপাত করেননি। খাদিজা রূপসার ইলাইপুরের ‘সাউদান সী ফুডস’র শ্রমিক হিসেবে চাকরি করেন। গত ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অফিসে থাকায় এবং তার স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগে আসামিরা সকাল ১১টার দিকে মেহেরুন নেছাকে নিয়ে যায়। এ সময় এলাকার লোকজন মেহেরুন নেছাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি কোথায় যাইতেছো? তখন মেহেরুন নেছা বলে-‘চাকরির উদ্দেশে রবিউল ও মিতা বেগমের সাথে ঢাকায় যাচ্ছি। এরপর রবিউলদের বাড়িতে গিয়ে আর খুঁজে পাইনি। নিরূপায় হয়ে ঢাকা ও খুলনাসহ সম্ভাব্য বিভিন্নস্থানে মেয়েকে অনেক খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। অবশেষে খাদিজার একমাত্র ছেলে শরিফুল ইসলামের ০১৮৫৮-৮৯৮৪৭২ ও তার ভাগ্নি জামাইয়ের ০১৯৪৮-৯১৩৮৩৫ থেকে রবিউলের ০১৯২৪-৬৬১৬৫৩, তার পিতা হুমায়ুন শেখের ০১৭১৫-১৪৪৬৪৩ ও মিতা বেগমের ০১৯২২-৩৮০৯০৪ মোবাইলে কথা বলে নিশ্চিত হন মেহেরুন নেছাকে তারা ভারতে অথবা মধ্যপ্রাচ্যের যেকোন দেশে বিক্রি করে দিয়েছে। এ ঘটনায় রূপসা থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয় (যার নং-১৩, ১৯-১০-১৪ইং)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র উপ-পুলিশ পরিদর্শক খান এমরান হোসেন ২০১৬ সালের ২৩ জুন রবিউল ইসলাম ওরফে মিথিলকে আসামি করে আদালতে চাজর্শীট দাখিল করেন (যার নং-৬৯)।
অভিযোগ রয়েছে, রবিউল ইসলাম মেহেরুন নেছাকে নিয়ে যাওয়ার এক মাস আগে রূপসা উপজেলার ইলাইপুর গ্রামের আকলিমা ও চম্পা নামের দুইজন নিয়ে যায়। এর মধ্যে চম্পা কৌশলকে করে কিছুদিন পর গ্রামে চলে আসে। সে জানায়, তাদেরকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে একটি বাড়িতে রাখা হয়। সেখানে তাদের মতো আরো অনেক নারী ও শিশু ছিল।
খাদিজা বেগম জানান, গত ২৪ বছর আগে তার সাথে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার আঠারোগাতী গ্রামের জব্বার মোল্লার ছেলে আব্দুল গণি মোল্লা’র সঙ্গে বিয়ে হয়। এরপর তাদের সংসারে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। এরমধ্যে গণি মোল্লা আরো একটি বিয়ে করে। তারপর তিনি ছেলে-মেয়েকে নিয়ে রূপসার ইলাইপুরে চলে আসেন। এখানে তিনি মাছ কোম্পানিতে চাকরি করে ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করান। এর মধ্যে পরিচয় হয় রবিউল ইসলাম মিথিলের সাথে। রবিউল কৌশলে আবার মেয়েকে চাকরি দেয়ার নাম করে নিয়ে গেছে। স্বামী থেকেও নেই মেয়েকে হারিয়েছি। একমাত্র ছেলে বুকে নিয়ে বেঁচে আছি। তিনি বলেন, আল্লাহই জানেন আমার মেয়ের কপালে কি হয়েছে। আমি আমার মেয়েকে চাই-এই বলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।
বাদির আইনজীবী শরিফুজ্জামান বলেন, এই মামলাটিতে তিনজন আসামির নাম উল্লেখ থাকলেও চাজর্শীটে দুইজনের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে চাজর্শীটে অন্তভুক্ত করার জন্য আমরা আদালতের মাধ্যমে মামলাটির পুণঃতদন্তের দাবি জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলাটির তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন। চাজর্শীটভুক্ত আসামিকে গ্রেফতারে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।