পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডজন সিদ্ধান্তের কোনোটি চূড়ান্ত হয়নি : প্রস্তাবিত কমিটি অন্ধকারেই
এখনো এক নেতার এক পদে বহুজন : ঢাকা থেকে যায় তৃণমূল কমিটি
আফজাল বারী : গত বছরের এই দিনে দলের কাউন্সিল করেছিলো বিএনপি। পরিবর্তনের যুগে সময় উপযোগী কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। প্রশংসিতও হয় সর্বমহলে। নানামুখী আঘাতে বিপর্যস্ত সংগঠনটি শনির দশা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে- এমন আশায় বুক বেঁধেছিলো দলটির নেতাকর্মীরা। শুধু নেতা-কর্মীই নয়, দলটির শুভাকাক্সক্ষী, শুভানুধ্যায়ীদের আশাও একই ছিলো। দেশ-বিদেশে সর্বত্রই। কিন্তু আশারতরী কিনারে ভিরাতে পারেনি দলটির কর্ণধার ও সহযোগীরা। ফলে আশা যাচ্ছে হতাশার অরণ্যে।
এদিকে চলতি ইস্যু সামাল দিতে না দিতেই হাজির হচ্ছে আরো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কোনটি জাতীয় ইস্যু, আবার কোনোটি রাজনৈতিক। দলটির অবস্থা এখন এমনতর যে ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’। সব মিলে বিএনপি বড় চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে।
খোলা-মেলা সমালোচক ডা. জাফরুল্লাহ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উদ্দেশ্যে ৩ হাজার শব্দের খোলা চিঠিতে উল্লেখ করেনÑ আপনার হাতে সময় নয় মাস। তার ইশারা ছিলো বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মামলা ও রায়ের দিকে। সে চিঠি ছিলো গত ২২ আগস্টের। চিঠির বয়স প্রায় ৭ মাস।
ডা. জাফরুল্লাহ দলের উপদেষ্টা নন, তবে শুভাকাক্সক্ষী। তার উপদেশগুলোর অধিকাংশ ইতিবাচক। বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার প্রতি গুরুত্ব ছিলো তার। হাতেগুনা ২/১টি ছাড়া তার আবেদনের কোনটিই পাত্তা পায়নি দলটির হাইকমান্ডের কাছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে সরকার পতনের এক দফা টার্গেট নিয়ে চলছিলো বিএনপি। এ লক্ষ্যে সে বছর আন্দোলনও করেছিল। কিন্তু ফলাফল ঘরে উঠেনি। এর পরের বছর পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া আবারও দীর্ঘমেয়াদে রাজপথে নামে দলটি। সেবারও সফলতার দেখা মিলেনি। সঙ্গত কারণে ভীত শক্তিশালী করে অর্থাৎ সংগঠন মজবুত করে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের জাতীয় কাউন্সিলও করে। কাউন্সিলে দলকে শক্তিশালী করতে এক নেতার এক পদের বিধান রেখে খসড়া গঠনতন্ত্র অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রণালয় ভিত্তিক ২৬টি উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। দলের সদস্য ফি ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা, মাসিক চাঁদা ৬ মাস না দিলে পদ স্থগিত, এক বছর না দিলে পদ বাতিল, টানা ২ বছর চাঁদা না দিলে তার প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত, ৩ বছর না দিলে প্রাথমিক সদস্য পদ বাতিল করাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয় কাউন্সিলে। এছাড়া স্বল্পসময়ের মধ্যে তৃণমূল বিএনপিকে শক্তিশালী করতে নেয়া হয় নানামুখী পদক্ষেপ। অঙ্গ দলগুলোকে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
কাউন্সিলের সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৬ আগস্ট বিএনপির ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের ৭৩ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। এখনও স্থায়ী কমিটির ৩টি পদ ফাঁকা আছে। ছাত্র ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও যুব বিষয়ক সম্পাদক এখনও ঠিক করতে পারেনি। এছাড়া জাতীয় কাউন্সিলের এক বছরেও দলীয় গঠনতন্ত্র বই আকারে প্রকাশ করতে পারেনি বিএনপি। কবে নাগাদ প্রকাশ হবে তা দলের কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। গঠনতন্ত্র প্রকাশ না হওয়ায় বিএনপির নির্বাহী কমিটি কতো সদস্যবিশিষ্ট, নতুন কী সংশোধনী আনা হলোÑ এসব ব্যাপারে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও আছেন অন্ধকারে। কার্যত গঠনতন্ত্র ছাড়াই চলছে বিএনপি। এছাড়া নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ার পরেও এক নেতার এক পদের বিধান কার্যকর করতে পারেনি দলটি। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ৬১ নেতা একাধিক পদ ধরে রেখেছিলেন। ‘এক নেতার এক পদ’ বিধানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ৩৪ জন নেতা একাধিক পদ ছেড়ে দেন। ১৫ জন মৌখিকভাবে পদ ছাড়ার ঘোষণা দিলেও এখন তারা উল্টোসুরে কথা বলছেন। তারা এখন নতুন করে ওই পদের জন্য তৎপরতা শুরু করেছেন। বাকি ১২ জন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে পাত্তাই দেননি।
কাউন্সিলে বিষয়ভিত্তিক অর্থ ও পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি, আইন-শৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, গবেষণা, শিল্প ও বাণিজ্য, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, নারী ও শিশু, যুব উন্নয়ন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ, যোগাযোগ ও গণপরিবহন, এনার্জি ও খনিজ সম্পদ, মানবাধিকার, বন্যানিয়ন্ত্রণ, মুক্তিযুদ্ধ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মুক্তিযুদ্ধ, ক্ষুদ্রঋণ, সুশাসন ও জনপ্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জাতীয় সংহতি ও এথনিক মাইনোরিটি নামে ২৬টি উপ-কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ছিল। এক একটি কমিটিতে ১২ জন সদস্য রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখনও এই কমিটি গঠন হয়নি। আর সহসা হওয়ার সম্ভাবনাও কম। এছাড়া মাসিক চাঁদার বিষয়ে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সে সবও বাস্তবায়ন হয়নি বললেই চলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে ৭৫ সাংগঠনিক জেলার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দ্রæত শেষ করতে বিএনপি চেয়ারপার্সন সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিলেও তা এগুচ্ছে একাবেরই মন্থরগতিতে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জেলা কমিটি গঠন সম্ভব হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও এক নেতা একাধিক পদে থাকার আগ্রহের কারণে অন্য কমিটিগুলো গঠন বিলম্ব হচ্ছে। আর বিএনপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগে ভাগ করার সব সিদ্ধান্ত নেয়ার পরেও তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। এছাড়া জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, শ্রমিক দল ও জাসাসের কমিটি দেয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়েছে আংশিক কমিটি। এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য যে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সুপার ফাইভ বা সেভেনের নেতারা তেমন কার্যকরী ভূমিকা নিচ্ছেন না। ফলে বেঁধে দেয়া সময় পার হওয়ার পরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতার মন্তব্য, পরের ঘরে ধাক্কা দেয়ার কথা চিন্তা করার ফুসরতই পাচ্ছে না দলটি। অর্থাৎ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার চেয়ে এখন ঘর গোছানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির। সংগঠন শক্তিশালী করার সব কাজই চলছে। কিন্তু এর গতি খুবই মন্থর। গতি বাড়ানোর বিষয়টিকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে আলাপকালে দলের ভেতরে-বাইরের নেতারকর্মী ও শুভাকাক্সিক্ষদের মন্তব্য।
বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাÐ দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ইনকিলাবকে বলেন, তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ পুরোদমে চলছে। ক্ষমতাসীন দলের বাধাসহ কিছু জটিলতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। তারপরও কাজ চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব ইউনিটের কমিটি গঠন শেষ করা সম্ভব হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।