Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনিয়োগ-শিল্পায়নে দক্ষিণ চট্টগ্রাম

| প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আইয়ুব আলী, চট্টগ্রাম ব্যুরো : কর্ণফুলী টানেলকে ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ব্যাপক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল হচ্ছে। কর্ণফুলীর অপরপ্রান্তে আনোয়ারায় হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন (এসইজেড)। সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সোনালী দ্বার উন্মোচিত হবে। এর মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে বাঁশখালীতে চীনের সহযোগিতায় বেসরকারী উদ্যোগে একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। এসব মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে দক্ষিণ চট্টগ্রাম। বন্দরনগরীর পাশে কর্ণফুলীর ওপারে শিল্পশহর হিসেবে গড়ে উঠবে আনোয়ারা। এসব উন্নয়ন কর্মকাÐকে ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লাখো মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা আনোয়ারায় শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠলে স্থানীয় লোকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প এখন বাস্তবরূপ নিচ্ছে। নদীগর্ভে টানেলের মূল কাজ শুরু না হলেও জমি অধিগ্রহণসহ নানা বিষয়ে এ প্রকল্পের আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হয়েছে। কর্ণফুলী টানেলের মূল ড্রিলিং কাজের জন্য প্রকল্পের দুই তীরে স্থাপন করা হচ্ছে ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ১৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইন। বিদ্যুৎ লাইনের কাজ শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ শুরু হবে টানেলের মূল কাজ। পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে আনোয়ারায় গিয়ে শেষ হবে টানেল। এ টানেলের মাধ্যমে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাথে আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সংযোগ তৈরি হবে। চীন সরকারের সহযোগিতায় এ টানেল নির্মাণের কাজ চলছে।
আনোয়ারায় দুইটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক জোনের জন্য ২৯১ একর খাসজমি প্রতীকী মূল্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। আনোয়ারার গহিরায় ৬১১ দশমিক ৪৭ একর জমির ওপর অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হবে। সমুদ্রবন্দরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের কেন্দ্রভূমি হবে এটি। বেজা সূত্র জানায়, দেশের উদীয়মান ও রফতানিমুখী জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ইলেক্ট্রনিকস পণ্য সামগ্রী, ফার্নেস ও সিমেন্ট শিল্পকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫৩ হাজার ৪২০ জনের কর্মসংস্থান হবে।
চায়না ইকোনমিক জোনের কর্মকাÐের মধ্যে বদলে যেতে শুরু করেছে এলাকার চেহারা। সে সঙ্গে পর্যটন সম্ভাবনায় যুক্ত হচ্ছে পারকি সমুদ্র সৈকত নিয়ে নানা প্রকল্প। কোরিয়ান ইপিজেডে নতুন করে ৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশে বেসরকারি খাতে এটি প্রথম এবং সর্ববৃহৎ ইপিজেড। নানা জটিলতার কারণে এ ইপিজেডে পর্যাপ্ত সংখ্যক কারখানা এখনও গড়ে উঠেনি। তবে আড়াই হাজার একর জমিতে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার উপযোগী করে অসংখ্য শিল্প প্লট তৈরি করা হয়েছে। এখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া বেসরকারীভাবে আনোয়ারা সদরের কাছে সাদ মুছা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ‘সাদ মুছা ইকোনমিক জোন’ নামে আরও একটি প্রকল্প হচ্ছে। গত বছরের ১৯ নভেম্বর সাদ মুছা গ্রæপের প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রকল্পটি লাইসেন্স পেতে যাচ্ছে বলে জানান। এখানে দেশি-বিদেশি ব্যাপক শিল্পায়ন হবে। বদলে যাবে পুরো এলাকার চেহারা। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া আনোয়ারায় রয়েছে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ সার-কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ও বহুজাতিক সার-কারখানা কাফকো। একই এলাকায় রয়েছে ড্যাপ কারখানা।
আনোয়ারায় স্পেশাল ইকোনমিক জোনের অগ্রগতি সম্পর্কে বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী ইনকিলাবকে জানান, আনোয়ারায় ইকোনমিক জোন এলাকায় এখন সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। এরপর ভেতরের কাজ শুরু হবে। এছাড়া আনোয়ারা সদরের কাছে সাদ মুছা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ‘সাদ মুছা ইকোনমিক জোন’ নামে আরেকটি প্রকল্প হচ্ছে। এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর লাইসেন্স দেয়া হবে। তিনি জানান, প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়িত হলে এলাকার চেহারা পাল্টে যাবে। এতে প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। গত ৯ মার্চ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সচিব ওই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন।
বাঁশখালীর গন্ডামারায় এস আলমের উদ্যোগে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। চীনের সহযোগিতায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা হলে সেখানেও বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।  
এছাড়া বোয়ালখালীতে রয়েছে বেশকিছু শিল্প-কারখানা। এফএমসি শিপিং ইয়ার্ড, হক্কানী টেক্সটাইল লিঃ, রিজেন্ট টেক্সটাইল লিঃ, টি কে গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। এছাড়া ছোটখাটো আরও শিল্প-কারখানা রয়েছে। করলডেঙ্গা পাহাড় এলাকায় পর্যটন শিল্প গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। বোয়ালখালীর পূর্ব এলাকা কালুরঘাট থেকে মিলিটারী পুল পর্যন্ত আরাকান সড়কের দু’পাশে ইতোমধ্যে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার কাজ চলছে।
কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জারটেক এলাকায় বেশ কয়েকটি ভারী মাঝারি শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। জুলধা এলাকায় কয়েকটি হালকা মাঝারি শিল্প গড়ে উঠেছে। পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকায় বেশ কয়েকটি লবণ শিল্প রয়েছে। পটিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারী ব্যক্তি মালিকানাধীন অর্ধশত কারখানা রয়েছে। বাঁশখালীতে রয়েছে বিশাল এলাকাজুড়ে ইকোপার্ক- যা দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিনোদনপ্রেমীদের জন্য দর্শনীয় স্থান। এছাড়া চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়ায় হালকা মাঝারি শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা হলে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম একটি শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে।
এছাড়া কেইপিজেডের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে লাইসেন্স না দিয়ে সরকার যদি ২৪৯২ একর ভূমিকে অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা করে প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগকারীদের শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার সুযোগ দিলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের খেটে খাওয়া মানুষকে বিদেশে গিয়ে আর হাঁড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হবে না। কর্ণফুলী নদীতে বহু প্রতিক্ষিত টানেল বাস্তবায়িত হলে ‘ওয়ান টাউন, টু সিটি’ নীতির স্বপ্ন সত্যি হবে। চট্টগ্রাম হবে চীনের সাংহাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ