নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী, কলম্বো (শ্রীলঙ্কা) থেকে, শ্রীলঙ্কার ৩৩৮’র চ্যালেঞ্জ বরন করে দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে কি দারুণ শুরুই না করেছে বাংলাদেশ? টি’ ব্রেকের ঠিক পূর্বক্ষণে তামীমের ফিরে যাওয়ার পরও ওই ২ ঘণ্টায় স্কোর ৯৫/১। সৌম্য-ইমরুলের বোঝাপড়ায় দ্বিতীয় জুটিতে ৩৫ রানের পার্টনারশিপ। অথচ, দিনের শেষ ১৭ মিনিটে চায়নাম্যান সান্দাকান পেসার লাকমালের এক স্পেলে সেই বাংলাদেশই কি না স্বাগতিকদের মুখে ফুটিয়েছে হাসি! ১৯২/২ থেকে ১৯৮/৫ ৭ বলে ৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ! একটার পর একটা এলোমেলো শট, টেস্ট ব্যাকরণে অক্রিকেটীয় শট বলতে যা বোঝায়, সেই সব অপরিণামদর্শী শটে দিনের শেষটা হয়নি ইনিংসের শুরুর মতো।
গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং পরামর্শক কোচ হিসেবে দলে যোগ দিয়ে, দিন প্রতি ৫শ’ মার্কিন ডলার হারে সম্মানী পেয়েও বড়ই অস্বস্তিতে পড়েছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক টেস্ট ব্যাটসম্যান থিলান সামারাবীরা। সৌম্য থেকে শুরু করে ইমরুল কায়েস, তাইজুল কিংবা সাবিবরের অপরিণামদর্শী শট খেলতে চেয়ে আত্মহুতি, সাকিবের সেই চেনা অক্রিকেটীয় শটে ভীষণ বিরক্ত সামারাবীরা। নেটে শেখাচ্ছেন এক ধরনের, মাঠে দেখছেন অন্যটা। তাতেই চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন সামারাবীরা। এর কোন ব্যাখ্যাই জানা নেই তার ‘এই মুহূর্তে আমার কোনো ধারণাই নেই। আমার মনে হয়, একটি বাজে শট আমাদের সমস্যায় ফেলেছে। ইমরুল কায়েসের আউটটা। আমি স্কিল শেখাতে পারি, কিন্তু টেস্ট খেলতে নেমে সতর্ক থাকা দরকার। মাঠে আরো বেশি অচতুর হতে হবে। ভাগ্য ভালো যে আমরা দিনটি ৫ উইকেটে শেষ করতে পেরেছি। এক সময়ে ধরে নিয়েছিলাম, আমরা বুঝি ৬ উইকেটে শেষ করবো।’
মাত্র ১ রানের জন্য ফিফটি হাতছাড়া করেছেন তামীম, ৪০’র ঘরে এসে ফিরে গেছেন মিডল অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া সাব্বির। ইমরুল লাইফ পেয়েও ইনিংস ক্যারি করতে পারেননি, ফিরে গেছেন ৩৪ এ। টানা ৩য় ফিফটির ইনিংস উপহার দেয়াকে যথেষ্ট মনে করে ৬১তে ফিরে এসেছেন সৌম্য। টপ অর্ডারদের কেউ ইনিংস বড় করতে পারেননি, গল টেস্টে ০ তে লাইফ পেয়ে ইনিংস কিভাবে ১৯৪ পর্যন্ত টেনে নিয়েছেন কুশল মেন্ডিজ, তা দেখে শিখতে পারেনি বাংলাদেশ টপ অর্ডাররা, এমনকি চান্দিমালের ধৈর্য্যশীল ইনিংস থেকে শিখছে না শিষ্যরা, তা ভীষণ পীড়াদায়ক মনে করছেন সামারাবীরাÑ ‘প্রথম পাঁচ নম্বর পজিশনে যারা ব্যাটিং করবে, তাদের কাউকে না কাউকে সেঞ্চুরি করতে হবে। ফিফটিতে খুশি থাকলে, তা যথেষ্ট নয়। গল টেস্টে কি হয়েছে ? ‘নো’ বলে প্রথম বলে বেঁচে যাওয়া কুশল মেন্ডিজ ১৯৪ পর্যন্ত ইনিংস টেনে নিয়েছে। ভালো পিচ পেলে টেস্টে রান করতেই হবে।’
মুশফিক ছাড়া অন্য কেউ টেস্টে ব্যাকরণ মেনে ব্যাট করছে না, তাতে বিরক্ত সামারাবীরা ‘প্রতিপক্ষ কি করছে, কোথায় ফিল্ডার রেখেছে, এসবও দেখে খেলতে হয়। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। এটা ওয়ানডে ক্রিকেট নয়। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে আপনাকে মানসিকভাবে আরও দৃঢ় হতে হবে।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যাটিং পরামর্শকের দায়িত্ব নিয়েছেন ৭ মাস, এই সময়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৭ টেস্ট। কিন্তু উন্নতিটা কোথায়? ব্যাটিংয়ে চেনা বাংলাদেশকেই তো দেখছে সবাই। এমন প্রশ্নে বিব্রত সামারাবীরা কষ্টের হাসিতেও আড়াল করতে পারেননি কিছুই, বলেছেন একটাই কথা ‘সত্যি বলতে কী আমার কোনো ধারণাই নেই। প্রতিবার একই ঘটনা ঘটছে। যখন ধস নামে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।’
প্রতিটি টেস্টেই দেখছেন অপরিণামদর্শী শটে সাকিবকে আউট হতে। তার ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে যথেষ্ট। অথচ গতকাল এসেই টস্টের ঝুঁকিপূর্ণ শট সুইপে বাউন্ডারি মারলেন সাকিব, শট খেলার প্রবনতা থেকে নিবৃত্ত হতে না পারার চরম মাশুল দিতে গেছেন বেঁচে। ১১ রানের মাথায় চায়নাম্যান সান্দকানের বলে ডিপ মিড উইকেটে দেয়া ক্যাচটি থেরাঙ্গা ফেলে দিয়ে বড় বাঁচা বাঁচিয়েছেন তিনি সাকিবকে। সাকিবের মতো একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের এমন প্রবনতা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন সামারাবীরা ‘সত্যি বলতে কী, আমি কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। (এই ব্যাটিং সম্পর্কে) আমার কোনো ধারণাই নেই।’
এই টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যবচ্ছেদে লঙ্কান মিডিয়ার সঙ্গে সিংহলিজ ভাষায় যা বলেছেন,তা আরো ভয়াবহ ‘শেষ আধ ঘণ্টা এবং প্রথম আধ ঘণ্টা সাধারণতঃ দিনের ভয়ঙ্কর পর্ব। অথচ ওটা এমন এক শট ছিল, যাতে আমরা তিন তিনটি উইকেট হারিয়েছি। আমাদের এ ধরণের শট খেলা বন্ধ করা উচিৎ। কি ঘটবে আমরা তা জানি না। যখন কেউ টেস্টে ব্যাটিং করবে, তখন অন্য দলগুলোর ব্যাটসম্যানরা যা করছে তা দেখে সতর্ক হতে হবে।’
পি সারা ওভালে ৬ টেস্টে ৬০৪ রান আছে তার। ২ সেঞ্চুরি ৩ ফিফটিতে গড় ৭৫.০০। সেই ভেন্যুতে এবার এসেছেন শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ দলের কোচ হয়ে। এই ভেন্যুর সঙ্গে যে জড়িয়ে আছে আবেগ, তা প্রকাশ পেলো গতকাল লঙ্কান সাংবাদিকদের কাছে দেয়া সামারাবীরার প্রতিক্রিয়ায় ‘প্রথম ক’দিন আমি ঠিকই অনুভব করেছি। কারণ, এই প্রথম আমি আমার দেশের বিপক্ষে কোচিং করতে এখানে এসেছি। সিরিজ শুরু হওয়ার পর মাথা থেকে তা ঝেড়ে ফেলেছি। এই মাঠে আমার অনেক স্মৃতি, অনেক অভিজ্ঞতা আছে। আছে প্রচুর রান এবং সেঞ্চুরি। যখনই আমি এখানে আসব, তখনই ওসব কথা মনে পড়বে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।