পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টিকে থাকতে মানুষ যাপিত জীবনে খরচ কমিয়ে দিয়েছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, মাছ- গোশত খাওয়া, বিনোদন, স্বাদ-আহ্লাদ কমিয়ে দিয়েছে। পণ্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির ঢেউ সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, জন্মদিন, খাতনা, বিয়েশাদি, মেজবান, নানামুখী উৎসব-অনুষ্ঠানে লেগেছে। মানুষ এখন আর জমকালো অনুষ্ঠান, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম বেশি জাঁকজমকপূর্ণ ও বেশি লোকসমাগত করছে না। মানুষ এখন বিয়ে আয়োজনের ব্যয় সংকুচিত করে ফেলছেন। সামাজিক-পারিবারিক আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণ সীমাবদ্ধ রাখছেন। কেউ কেউ গিফট দেয়ার সংগতি না থাকায় সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকছে।
বৈদেশিক মুদ্রার ঊর্ধ্বগতি এবং সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বেশিরভাগ মানুষের জীবন নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যয় সংকোচনে লোডশেডিং, সরকারি ব্যয় কমানো, সপ্তাহে একদিন শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন করার চিন্তাভাবনাসহ সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। তারপরও হুহু করে বাড়ছে পণ্যের দাম। এ অবস্থায় নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নির্ধারিত আয়ের মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কেউ ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন; কেউ খাবার কমিয়ে দিয়ে আয়-ব্যয়ের মধ্যের সমন্বয় রাখার চেষ্টা করছে। দেশের এই অর্থনৈতিক সঙ্কট ও মূল্যস্ফীতির ঢেউ সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান (জন্মদিন, খাতনা ইত্যাদি), বিয়েশাদি, চট্টগ্রামের মেজবান, নানামুখী উৎসব-অনুষ্ঠানে লেগেছে। মানুষ এখন আর জমকালো অনুষ্ঠান, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম বেশি জাঁকজমকপূর্ণ ও লোকসমাগত করছে না। মানুষ এখন বিয়ে আয়োজনের ব্যয় সংকুচিত করে ফেলছেন। নিরুপায় হয়ে সামাজিক-পারিবারিক, আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলছেন। যারা ধনাঢ্যদের মধ্যেও অনেকেই ব্যয় সংকোচনের নীতি অবলম্বন করছেন। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সর্বোত্রই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। মানুষ এখন আর আগের মতো অনুষ্ঠানাদিতে ‘এলাহি আয়োজনের’ বদলে খরচ কমাতে সীমিত আয়োজন করছে।
রাজধানীর বেশ বিভিন্ন পেশাজীবীর কয়েকজনের প্রত্যাহিক জীবন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলে তারা প্রায় সকলেই জানান, সংসারের খরচ কমিয়ে টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর বেড়েছে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। স্কুল, বাজার, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস, নৌযান অর্থাৎ জ্বালানি তেলনির্ভর সব যানবাহনে বেড়েছে ভাড়া। তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে অন্যান্য নিত্যপণ্যে। বাধ্য হয়েই কেউ শখ আহ্লাদের পেছনে ব্যয় কমাচ্ছে, কেউ সন্তানদের পেছনে ব্যয় কমাচ্ছে, কেউ ঘোরাঘুরি বাদ দিচ্ছে, কেউ আড্ডায় কম যাচ্ছে, কেউবা কম খাচ্ছেন।
করোনা-পরবর্তী বিশ্বে যখন নিত্যপণ্য ও জ্বালানির দামে ঊর্ধ্বগতি, এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা পৃথিবীকেই ফেলে দিয়েছে বিরাট অনিশ্চয়তার মধ্যে। আর তারই ঢেউ যেমন বাংলাদেশে লেগেছে; সে সঙ্গে সরকারের কিছু ভুলনীতির কারণে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা। দেশে দেশে মুদ্রার দরপতনে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়া, তার সঙ্গে বেড়ে যাওয়া খরচের সঙ্গে যখন নাভিশ্বাস, সে সময় জ্বালানি তেলের দামে দিল লাফ। সারের দাম বৃদ্ধিসহ সব পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতি।
বিভিন্ন পেশাজীবীদের কারোই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা নেই। দ্রব্যমূল্য নিয়ে কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সংসারে সদস্য ৪ থেকে ৫ জন মানুষ। এখন খাওয়া কমিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় কী? আগে সপ্তাহে তিন দিন মাছ খাওয়া হতো, এখন সেটা এক দিন করতে হচ্ছে। ন্যূনতম পোশাক দিয়ে চলতে হবে। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান অংশগ্রহণ বাদ দিতে হচ্ছে।
সারাদেশের ইনকিলাবের ব্যুরো অফিস, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংবাদদাতারা জানান, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্নবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষ ব্যয় সংকোচন কৌশল নিয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের জাঁকজমক কমে গেছে। আগের মতো বৃহৎ আয়োজনের বিয়ের অনুষ্ঠান কমে এসেছে। কিছুদিন আগেও ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার এবং হোটেল-মোটেলে বিয়েশাদিসহ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বুকিং পাওয়া যেত না; এখন প্রায় খালি যাচ্ছে কমিউনিটি সেন্টার।
জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, এমনিতেই মানুষ ব্যয়ের চাপে আছে, তার ওপর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে সামনে এসেছে। করোনার সময়ে অনেকের আয় কমেছে; ধারদেনা করে চলার চেষ্টা করেছে। মানুষ যখন একটু ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়া নতুন করে বড় ধাক্কা দিচ্ছে। পারিপার্শ্বিক অনেক ব্যয় কাটছাঁট করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, অর্থনৈতিক মন্দায় কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে গিয়ে চট্টগ্রামে সামাজিক ও কর্পোরেট অনুষ্ঠান কমে যাচ্ছে। টান পড়েছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, কমিউনিটি সেন্টারের আয়ে। এতে হোটেল, রেস্তোরাঁ কর্মীদের মধ্যে চাকরি হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যয় সাশ্রয় করতে গিয়ে কর্পোরেট হাউসগুলো আগের মতো জমকালো অনুষ্ঠান, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজন থেকে সরে আসছেন। সীমিত আকারে হচ্ছে এসব অনুষ্ঠান। আবার বিয়েশাদির মতো সামাজিক অনুষ্ঠানেও এখন ব্যয় সংকোচনের নীতি চলছে। ফলে জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান কমে এসেছে। কিছুদিন আগেও ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার এবং হোটেল-মোটেলে বিয়েশাদিসহ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বুকিং পাওয়া যেত না। এখন প্রায় খালি যাচ্ছে কমিউনিটি সেন্টার, হোটেল, রেস্তোরাঁ।
নগরীর আগ্রাবাদের স্থায়ী বাসিন্দা ব্যবসায়ী রুহুল আমিন ধুমধাম করে বড় দুই ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এবার ছোট মেয়ের বিয়েতে ঘটে ছন্দপতন। তিনি জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন মন্দাভাব। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হিড়িক পড়েছে। এ অবস্থায় কৃচ্ছ্রতা সাধনের কোনো বিকল্প নেই। আর এ কারণে ইচ্ছা থাকলেও কন্যার বিয়েতে ধুমধাম করছেন না। তিনদিনের বদলে একদিনেই শেষ হচ্ছে বিয়ের অনুষ্ঠান। তাতে অতিথির সংখ্যাও সীমিত করা হয়েছে। তার মতো অনেকে এখন বিয়েশাদির অনুষ্ঠান এভাবে সীমিত পরিসরে সারছেন। অভিজাত কমিউনিটি সেন্টারের বদলে অনেকে হোটেল, রেস্তোরাঁয় স্বল্পসংখ্যক অতিথির উপস্থিতিতে এসব সামাজিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে।
নগরীর লাভলেইন এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজার জানান, কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে গিয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান কমে গেছে। এতে কমিউনিটি সেন্টার ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আগে এক মাস পর্যন্ত আগাম বুকিং থাকত। এখন সে অবস্থা নেই। বিয়েশাদির অনুষ্ঠান হলেও নেই আগের মতো ধুমধাম আয়োজন। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি তরফে আলোকসজ্জা করতে বারণ করা হয়েছে। এ নির্দেশনা মানার ফলে কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে নেই আলোর বন্যা। অর্থনীতিতে মন্দার কারণে কমিউনিটি সেন্টারগুলোর অনুষ্ঠানেও আগের মতো জৌলুস নেই। হোটেল, রেস্তোরাঁ মালিকরা জানান, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে গ্রাস করছে গোটা নগরী। এর ফলে আগের মতো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়ার প্রবণতা কমে আসছে।
নগরীর আগ্রাবাদের অভিজাত রেস্টুরেন্ট এমব্রোসিয়ার একজন কর্মকর্তা জানান, গত এক মাস ধরে বিয়েশাদি, সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন কমে গেছে। কিছু অনুষ্ঠান হলেও তাতে অতিথির সংখ্যা কম। বিয়েশাদির অনুষ্ঠানে সীমিত সংখ্যক অতিথি আসছেন। অনেকে আবার খাবারের মেন্যুতেও পরিবর্তন আনছেন। কর্পোরেট হাউসগুলোর অনুষ্ঠানও এখন হাতেগোনা। এস আলম গ্রুপের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারের নির্দেশনা মেনে সর্বক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা সাধন করা হচ্ছে। আর এ কারণে আগের মতো ব্যয়বহুল অনুষ্ঠান তেমন একটা হচ্ছে না।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বড় ধাক্কায় পড়ে গেছে নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত মানুষ। সর্বত্র বিরূপ প্রভাব। এমন ক্ষেত্র নেই যেখানে দাম বাড়েনি। ঘোষণার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাম বেড়ে গেছে। যে যার মতো করে দাম বাড়িয়ে চলেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশপাশি বেড়ে গেছে সবধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম। থমকে গেছে ব্যক্তি পর্যায়ে নির্মাণকাজ। ভোক্তাদের অভিযোগ আগের মাল মজুদ থাকলেও এখন পরিবহনে ভাড়ার কারণ দেখিয়ে বেশি দাম নেয়া হচ্ছে। অনেকে মালামাল থাকার পর নেই বলছে। অপেক্ষা সামনের কটা দিনের। মালোপাড়া হার্ডওয়ার পট্টির একজন ব্যবসায়ী বলেন, ঢাকায় মাল চেয়ে পায়নি। দাম বাড়বে অপেক্ষা করতে বলেছে। থমকে গেছে মধ্যবিত্তের স্বপ্নের ঘর করা। রাজশাহীর বড় বাজার সাহেব বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী রাজীব বলেন, গত ঈদের সময় যে থ্রিপিস বিক্রি করেছি পাঁচশ’ টাকায়। এখন ঢাকা থেকে বলা হচ্ছে সাতশ’ টাকার নিচে বেচা যাবে না। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে তর্ক হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাপড়টুকু নাগালের বাইরে বলে যাচ্ছে। তিনি জানান, বাজারে ভিড় কমে গেছে। ব্যবসা মন্দা শুরু হয়েছে। করোনার পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা বিফলে। কমে গেছে সামাজিক অনুষ্ঠান। বিয়েশাদি, জন্মদিন, দোয়া মাহফিলের আয়োজন হয়ে পড়েছে সংকুচিত। ছোট-বড় কনভেনশন সেন্টারগুলোর লোকজনের সাথে আলাপকালে জানান তাদের বুকিং নেই বল্লে চলে। বিয়েশাদির আয়োজন হচ্ছে খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে। গায়ে হলুদ, ক্ষির খাওয়ানোসহ বিয়ের নানা অনুষ্ঠান এখন প্রায় নেই। আগে বিয়েতে আয়োজন করা হতো আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশী মিলে কমপক্ষে পাঁচশ’ অতিথির। এখন দু’পক্ষ মিলে ৫০০ জন হয় না। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া পড়শী বাদ। বর পক্ষের আর কনে পক্ষের লোকজন দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ। মধ্যবিত্তের হলুদ বাটো মেহেন্দী বাটোর দিন শেষ। আগে যেখানে জনপ্রতি প্লেট ছিল চারশ’ টাকা। এখন তা দাঁড়িয়েছে সাতশ’ টাকায়। অবশ্য বিত্তবানদের সে বালাই নেই। অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় মন্দা যাচ্ছে কনভেনশন সেন্টারগুলোয়। কপাল পুড়েছে কিছু শিক্ষার্থীর। এরা অনুষ্ঠানের দিন খাবার দাবার পরিবেশনের কাজ করত। কিছু টাকার সাথে বেচে যাওয়া ভালো-মন্দ খাবার জুটতো। জাহিদ নামে একজন শিক্ষার্থী জানালেন, এদিয়ে আমার মেস ভাড়ার টাকাটা উঠে যেত। তার মতো এখন অনেকের হাতশূন্য। ডেকোরেটরের ব্যবসা লাটে ওঠার উপক্রম। বড় বড় হাড়ি আর সসপেন দেখিয়ে বলেন, আগে বিয়ে নিয়ে অনেক আয়োজন হতো। এখন আর সেদিন নেই। অলস বসে আছে বাবুর্চি। তাদের ভীষণ কষ্ট। কুলখানি, দোয়া মাহফিলের আয়োজন কমে গেছে। আগে মারা যাওয়া স্বজনদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোরআনখানী, এলাকার দুস্থ মানুষদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হতো। এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পার্শ¦বর্তী মসজিদে নামাজ শেষে দোয়া মাহফিল করা হয়।
রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বমূল্যে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের। আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ব্যয় সংকোচন করেও সাংসারিক খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগান দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের। এ অবস্থায় আয়ের বিকল্প পথ খুঁজে চলেছেন পরিবারের কর্তা ব্যক্তিরা।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, গত দুই বছরে দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়েছে কয়েক দফা। গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে লাগামহীন। এর সাথে বেড়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। বিশেষ করে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি সর্বস্তরের মানুষকে অস্থির করে তুলেছে। সে তুলনায় আয় বাড়েনি। উল্টো কিছুক্ষেত্রে আয় কমেছে। এ অবস্থায় পারিবারিক খরচ মেটাতে ব্যয় সঙ্কোচন করতে হচ্ছে দৈনন্দিন চাহিদার সঙ্গে। সাধ, আহ্লাদ বা আবশ্যক এমন অনেক কিছুই বাদ দিতে হচ্ছে হিসেবের খাতা থেকে। কারণ বর্তমান আয়ে সংসারে প্রায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই জমানো টাকা ভাঙিয়ে পারিবারিক ব্যয়ভার মিটিয়ে কোনোরকমে দিন পার করছে। ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট কমিয়ে দিয়েছে অনেক পরিবার। লেখাপড়ার খরচ মেটাতে না পেরে গ্রামাঞ্চলের অনেক পরিবার থেকে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া চুটিয়ে ফেলছে বাধ্য হয়ে। এসব পরিবারের স্কুলপড়ুয়া ছেলেরাও এখন কর্মের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ছে। এরমধ্যে অধিকাংশই অটোরিকশাকে বেছে নিয়েছে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসারের চাহিদা মেটাতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিরাও প্রতিনিয়তই ছুটে চলেছেন নতুন কিংবা পার্টটাইম কর্মের সন্ধানে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, জ্বালানি তেলের আকষ্মিক ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে খুলনার সামাজিক জীবনে নতুন করে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে আরেক দফায় বেড়েছে নিত্যপণ্যের মূল্য। সাধারণ মানুষ এখন তাদের যাপিত জীবনে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। নানা সামাজিকতা রক্ষায় বাধ্য হয়ে কৃচ্ছ্রতার আশ্রয় নিচ্ছেন। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যয় সংকুচিত করে ফেলছেন। নিরুপায় হয়ে সামাজিক-পারিবারিক, আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলছেন।
হঠাৎ পরিবর্তিত চিত্রটি পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে খুলনার একাধিক কমিউনিটি সেন্টারের কর্ণধার ও পরিচালকদের সাথে কথা বলে। অনুরাগ কমিউনিটি সেন্টারের পরিচালক বেলাল হোসেন জানান, তার কমিউনিটি সেন্টারে ৬শ’ অতিথি বসার ব্যবস্থা রয়েছে। করোনার ধস কাটিয়ে মোটামুটি কেবল যখন ব্যবসা ভালো’র দিকে যাচ্ছিল, তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসাকে মন্দায় নিয়ে গেছে। গত ৪ দিনে তিনটি বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রতিটিতে একশ’ থেকে দেড়শ’ অতিথি এসেছেন। অর্থাৎ, আয়োজকরা ব্যয় কমাতে নিমন্ত্রণ করছেন হিসাব করে। একই রকম কথা বলেছেন স্টার কমিউনিটি সেন্টারের কর্ণধার নাজিম শাহরিয়ার। তিনি বলেন, সরকারের লোডশেডিং নীতির কারণে মোটামুটি রাতে বিয়ের আয়োজন অনেকেই করছেন না। তার কমিউনিটি সেন্টারে দিনে একটা থেকে দুটো বিয়ে হচ্ছে। তবে, আগে যেমন তার এখানে বিয়ের অনুষ্ঠানে ৭শ’ থেকে ৮শ’ অতিথি আসতেন, তা এখন নেমে গেছে দুশ’ থেকে আড়াইশ’-তে। খুলনার আল হেরা ডেকোরেটর-এর মালিক আলহাজ্ব রবিউল ইসলাম বলেন, ডেকোরেট ব্যবসায় দুর্দিন বিরাজ করছে করোনাকাল থেকেই। করোনা কাটিয়ে ওঠার পর বেশ জমজমাট ব্যবসা হচ্ছিল। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর গত ৫ দিন ধরে ব্যবসায় খুবই খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। বুকিং নিতে আসা মানুষেরা রীতিমত যুদ্ধ করার মতো দর-কষাকষি করছেন। বাবুর্চি খরচ, বাজার খরচসহ কতভাবে খরচ কমানো যায়, তাই নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে।
সার্বিকভাবে সারাদেশের মতো খুলনার সমাজ জীবনে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মানুষ চরম ক্ষুব্ধ, চরম হতাশ। দ্রর্মূল্যের বাজারে আগামী দিনগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে পার করবেন, এ নিয়ে গভীর শংকায় রয়েছেন। দ্রব্য
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।