পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার : দূর্বত্তদের হাতে নিহত কথিত পীর ফরহাদ হোসেন চৌধুরী ও তার কাজের মেয়ে রুপালী’র ময়না তদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সাবেক বিএনপি নেতা ও দিনাজপুর বাস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চৌধুরীর প্রথম জানাযা নামাজ গতকাল বিকেল ৪টায় সম্পন্ন হয়েছে দিনাজপুর গোরাশহীদ ময়দানে। পরে বোচাগঞ্জ উপজেলার দৌলা গ্রামে তার দরবার শরীফের সামনে দাফন করা হয়। কাজের মেয়ের দাফন হয় তার গ্রাম পানপাড়া গ্রামে। গত সোমবার সন্ধ্যার পর যে কোন সময়ে দৌলা গ্রামের কাদিয়ানা মোহাম্মদিয়া দরবার শরীফের ভিতর শয়নকক্ষে ফরহাদ চৌধুরী এবং পার্শ্বেই স্টোর রুমে কাজের মেয়ে রুপালীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের দু’জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়েও আঘাত করা হয়েছিল। ফরহাদ চৌধুরী কাদিয়ানী মোহাম্মদি মতবাদে দীক্ষিত করতেন তার ভক্তদের। তিনি কোরআন শরীফ বা ৫ ওয়াক্ত নামাজে বিশ্বাসী ছিলেন না। সকল ধ্যানেই নামাজে বিশ্বাসী এই পীরের ভক্তদের হিন্দু মুসলমান সকলেই ছিল। এ অবস্থায় ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নাকি পূর্ব শক্রতা নাকি জঙ্গি কানেকশন রয়েছে এই হত্যাকা-ের পিছনে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কোন মূল্যবান সামগ্রী খোয়া যাওয়ার কোন আলামত পায়নি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আশপাশের এলাকার লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেল ৫টার দিকে ফরহাদ চৌধুরী নিজে তার কার চালিয়ে দিনাজপুর শহর থেকে সেখানে যায়। সাথে ছিল কাজের মেয়ে রুপালী বেগম। রুপালী বেগম দীর্ঘ দিন ধরেই ফরহাদ চৌধুরীর বাসায় কাজ করতো। গত তিন দিন আগে বৃহস্পতিবার চৌধুরীর আরেক ভক্ত সফিকুলের সাথে রুপালীর বিয়ে হয় দরবার শরীফে। এখানেই একটি কক্ষে বাসর ঘর সাজানো হয়। অতঃপর শনিবার ফরহাদ চৌধুরী রুপালী ও তার সদ্য বিবাহিত স্বামী সফিকুলকে নিয়ে দিনাজপুরে আসে। সূত্রটির মতে ঐ দিনই সফিকুলকে তার বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। একদিন পর সোমবার বিকেলে রুপালীকে নিয়ে ফরহাদ চৌধুরী দৌলা গ্রামে যায়।
কথিত কাদিরিয়া মোহাম্মদিয়া দরবার শরীফের পার্শ্ববর্তী বাড়ি আলম মেম্বারের স্ত্রী জানান, বিকেল ৫টায় তাদেরকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেছেন। সন্ধ্যার পর থেকে এই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। রাত ৮টার চিৎকার শুনে তিনি দৌড়ে যান দরবার শরীফের ভিতরে দেখতে পান ফরহাদের রক্তাক্ত দেহ। এসময় দেখতে পান সেখানে ফরহাদের ভক্ত সুফিয়া বেগম, তার ছেলে জনি আলম ও খাদেম সাইদুল ইসলামকে কান্নাকাটি করতে।
এ ব্যাপারে জনি আলম জানান, তাদের কাছে বাবা (গুরু) হিসেবে পরিচিত ফরহাদ হোসেন চৌধুরী বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে ছিল। বিছানার পার্শ্বে তার মা সুফিয়া বেগম বসে ছিল গুরুর উঠার অপেক্ষায়। এসময় জনি গেল তার মা বলে গুরু ঘুমাচ্ছে। কিন্তু সময় অতিবাহিত হলে তারা গুরুকে ডাকাডাকি করলে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে চিৎকার দেয়। এসময় খাদেম সাইদুল দৌড়ে ঘরে যেয়ে ফরহাদকে মৃত বুঝতে পারে এবং সে কাত হয়ে থাকা গুরুকে বিছানায় চিত করে শুইয়ে দেয়। পরে পাশের ঘরে রুপালীকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। তাদের দু’জনের বুকে অত্যন্ত কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। ফরহাদের ডান হাতের রগও কেটে দেয়া হয়েছে। তবে চাঞ্চল্যকর বিষয় যে সোমবার রাত ১০টার দিকে পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় তখন কিন্তু ঘরের মেঝে বা বিছানায় সেরকম কোন রক্ত দেখতে পাওয়া যায়নি। তবে পার্শ্ববর্তী একজন মহিলা উপস্থিত পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তাদের জানান, হত্যা ঘটনার সময় রাত সাড়ে ৭টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে ৫ জনকে চলে যেতে দেখেছে। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে গুলি করে হত্যা করা হলেও গুলির শব্দ আশেপাশের কেউ পায়নি। এছাড়া দরবারে পীর আসলে সাধারনত ভক্তরা আসতে থাকে। আর সোমবার ছিল তাদের ধ্যান করার দিন। কিন্তু সেদিন কেউই আগে ভাগে আসেনি। এছাড়া হত্যাকা-ের স্থানে রক্ত না থাকা ইত্যাদি বিষয়গুলি পুলিশকে ভাবিয়ে তুলেছে।
দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক ফরহাদ হোসেন চৌধুরী মূলত রাজনীতি থেকে সরে দাড়ান ২০০৪ সালের দিকে। পৌর বিএনপি সভাপতি থাকাকালে তিনি দিনাজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হোন। তার পর থেকেই তিনি প্রথমত তার শহরের বাড়ি দক্ষিণ বালুয়াডাঙ্গায় আধ্যাত্মিক কার্যক্রম শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার ভক্ত বাড়তে থাকে। ২০১০ সালে তিনি গ্রামের বাড়ি দৌলায় দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। পবিত্র কোরআন শরীফ, ৫ ওয়াক্ত নামাজে অবিশ্বাসী এই সাধক বা পীরের তরিকা হচ্ছে ধ্যানের মধ্যেই সকল নামাজ। তার একভক্ত খলিল জানান, গুরু’র তরিকা হচ্ছে সর্বক্ষণ নামাজ তাদের ভাষায় দাইমি সালাত। মূলত সোম ও বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে সকাল পর্যন্ত তার ধ্যান ও মিলাদ করে থাকেন। এসময় তারা ঢোল তবলাও ব্যবহার করতেন। ধ্যানে হিন্দু মুসলমান খ্রিস্টান সকল ধর্মের পুরুষ মহিলা অংশগ্রহণ করতো। গতকাল মঙ্গলবার অনেক হিন্দু পুরুষ মহিলাকে গুরুর জন্য কাঁদতে দেখা গেছে।
এদিকে এই জোড়া খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে জেলা পুলিশ সুপার দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাহফুজ্জামান আশরাফকে প্রধান করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত পূলিশ কমিশনার মঞ্জুরুল কবির ঘটনাস্থল পরির্দ্শন করেছেন। র্যাব, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি জানান, তদন্ত চলছে অচিরেই রহস্য উদঘাটিত হবে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশী কিছু বলা যাবে না।
আজ বিকেল পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি এবং কাউকে আটক করা হয়নি। তবে একটি সূত্র মতে অন্তত ৪ জন ভক্তকে পুলিশ জিঙ্গাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।