Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত যুদ্ধ জাহাজ ও সাবমেরিন টাগ রূপসা নদীতে ভাসান হচ্ছে কাল

| প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দেশে নির্মিত বড় মাপের দুটি যুদ্ধ জাহাজের দ্বিতীয়টি এবং চীন থেকে সদ্য সংগৃহীত দুটি সাবমিরনের জন্য নির্মিত টাগ আগামীকাল খুলনা শিপইয়ার্ডের সিøপওয়ে থেকে রূপসা নদীতে ভাসান হচ্ছে। আনুআঙ্গিক কাজসহ পরীক্ষামূলক পরিচালন সম্পন্ন করে এসব যুদ্ধ জাহাজ ও টাগ হস্তান্তরের পরে তা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হবে। নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদÑ ওএসপি, এনডিসি, পিএসসি-বিএন বুধবার সকালে খুলনা শিপইয়ার্ডের সবুজ চত্বরে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে নবনির্মিত লার্জ পেট্রোল ক্রাফট-এলপিসি ও সাবমেরিন-টাগ দুটি লাঞ্চিং করবেন। খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর কে কামরুল হাসান (এল), এনজিপি, এনডিসি, পিএসসি-বিএন-এর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজারবৃন্ধসহ উর্ধতন সামরিকÑবেসামরিক কর্মকর্তাগণও উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫-এর ৬ সেপ্টেম্বর খুলনা শিপইয়ার্ডে ‘কিল-লে’র মাধ্যমে যে দুটি এলপিসি’র নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছিলেন আগামীকাল তার দ্বিতীয়টি রূপসা নদীতে ভাসান হচ্ছে। গত নভেম্বরে প্রথম যুদ্ধ জাহাজটি লঞ্চিং শেষে তার পরীক্ষামূলক পরিচালন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শিপইয়ার্ডটি এসব যুদ্ধ জাহাজ ও সাবমেরিন টাগ-এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করছে। নৌ-বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড এর আগে চীনা কারিগরি সহায়তায় সাফল্যজনকভাবে আরো ৫টি পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে।
দেশের সমুদ্র বিরোধ নিস্পত্তিসহ সীমানা নির্ধারণের পরে ‘বøু ইকনমি’র দ্বার অবরিত হওয়ায় বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর ভূমিকা ও গুরুত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে সরকার নৌ-বাহিনীকে যুগপোযোগী করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে লার্জ পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণ ও সাবমেরিন সংগ্রহ তারই অংশ। একটি ত্রিমাত্রিক নৌ-বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সমর বহরে চীন থেকে সংগ্রহ করা দুটি সাবমেরিন যুক্ত হয়েছে। ঐসব সাবমেরিনকে সমুদ্র উপক‚ল থেকে পোতাশ্রয়ে আনা নেয়ার লক্ষে দুটি সাবমেরিন টাগ-এর নির্মাণ কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মাণাধীন দুটি টাগ-এর প্রথমটি গত অক্টোবরে রূপসা নদীতে ভাসানোর পরে তার চূড়ান্ত পরীক্ষামূলক পরিচালন চলছে। দ্বিতীয়টি আগামীকাল নৌ-বাহিনী প্রধান লঞ্চিং করবেন।
জাপানের নৌ-জরিপ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ক্লাস এনকেকে’র তত্ত¡াবধানে চীনা কারিগরি সহায়তায় নির্মিত দুটি যুদ্ধজাহাজে অত্যাধুনিক নৌ-সরঞ্জাম ছাড়াও ১টি করে ৭৯.২০ মিলিমিটার ও ৩০ মিলিমিটারের বিমান বিধ্বংশী কামান সংযোজন করা হচ্ছে। টর্পোডো ও মাইনসমৃদ্ধ যুদ্ধ জাহাজ দুটি সাফল্যজনকভাবে নির্মাণের মাধ্যমে খুলনা শিপইয়ার্ড সমরশিল্পে উপমহাদেশের বিশেষ অবস্থান করে নিচ্ছে। এসব যুদ্ধজাহাজ থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে সমুদ্র থেকে আকাশে ও ভ‚মিতে শত্রæর লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানা সম্ভব। এছাড়াও যুদ্ধজাহাজ দুটিতে ১টি করে ট্র্যাকিং রাডার, দুটি করে নেভিগেশন রাডার ও  ১টি হাল মাউন্টেড সোনারসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংযোজন করা হচ্ছে।
প্রতিটি যুদ্ধজাহাজে চীনের তৈরি ৭ হাজার ৬৪০ অশ্ব শক্তির ২টি করে মূলইঞ্জিন ছাড়াও অমেরিকার ‘ক্যাটার পীলার’ কোম্পানির ১৬৫ কিলোওয়াটের ২টি করে জেনারেটর ইঞ্জিনও থাকছে। অত্যাধুনিক এসব সমর নৌযান ৬৭৮ মেটিক টন পানি অপসারণ করে ঘণ্টায় প্রায় ৪৭ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলতে সক্ষম।
প্রায় ২১০ ফুট দৈর্ঘ ও ৩০ ফুট প্রস্থ এবং প্রায় ১৪ ফুট গভীরতার এসব যুদ্ধজাহাজ ঘণ্টায় প্রায় ২৫ নটিক্যাল মাইল বা প্রায় ৪৭ কিলোমিটার বেগে গভীর সমুদ্রসহ উপক‚লীয় নৌপথ অতিক্রমে সক্ষম। বহরে যুক্ত হলে তা দেশের সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালনে আরো সহায়তা করবে।
সাবমেরিন টাগ দুটির নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে রয়েছে বিশ্বখ্যাত নৌ-জরিপ প্রতিষ্ঠান-‘ব্যুরো অব ভেরিটাস’। প্রায় ১০৫ ফুট দৈর্ঘ ও ৩৮ মিটার প্রস্থ এসব সাবমেরিন টাগ পূর্ণ লোডে ঘণ্টায় ১২ নটিক্যাল মাইল বেগে সামনে ও ১১ নটিক্যাল মাইল বেগে পেছনে চলতে সক্ষম। নৌযানগুলোতে ২ হাজার ৫শ’ অশ্ব শক্তির আমেরিকার ‘কামিন্স’ ব্রান্ডের ২টি করে মূল ইঞ্জিন ছাড়াও দুটি জেনারেটরও সংযূক্ত থাকছে।
খুলনা শিপইয়ার্ড ইতোমধ্যে নৌ-নির্মাণ শিল্পে তার যে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে, দুটি লার্জ পেট্রোল ক্রাফট ও সাবমেরিন টাগ নির্মাণের মাধ্যমে তা আরো টেকসই হতে যাচ্ছে। ১৯৯৯-এর অক্টোবরে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার লোকসান ও দায় দেনাসহ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে সর্বকালের সর্বোচ্চ প্রায় ৬৫ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে। যা এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্তরিকতা, সততা দক্ষতার পরিচায়ক বলে মনে করছেন ওয়াকিফহাল মহল। খুলনা শিপইয়ার্ড বিগত দিনে ৭১৯টি নতুন নৌযান নির্মাণ ছাড়াও আরো ২ হাজার ২শ’ ১৯টি মাঝারি ও বড় মাপের নৌযানের মেরামত কাজ সাফল্যজনক ভাবে সম্পন্ন করেছে। নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক টার্নওভার ১৬ কোটি টাকা থেকে গত অর্থবছর ৪৪০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। গতবছর খুলনা শিপইয়ার্ড ভ্যাটসহ বিভিন্ন কর বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রায় ৩০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে।



 

Show all comments
  • Rofiq ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১১:৩৫ এএম says : 0
    It's a very good news for our country .
    Total Reply(0) Reply
  • এস, আনোয়ার ২০ মার্চ, ২০১৭, ৯:৫৯ পিএম says : 2
    খুলনা শীপ-ইয়ার্ডে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বের সেরা সবগুলিকে চ্যালেঞ্জ করার মতো সর্বাধুনিক এমন কি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন তৈয়ার করা হোক। আর সেগুলো দেখে ভারত যেন আরো উন্মাদ হয়ে বিশ্ব দরবারে ন্যাংটা হয়ে নাচতে শুরু করে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা শিপইয়ার্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ