চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীম
\ শেষ কিস্তি \
কার বয়স কত তা মৃত্যুদূত খেয়াল করেন না। কার বয়স কম না বেশি সে জন্য মৃত্যুর কোনো পরোয়া নেই। কখনো ছোট আগে মরে, আর বৃদ্ধ লোক মরে পরে। আবার কখনো বয়সে বেশি ব্যক্তিও আগে মরে যায়। তাই লেখাপড়ার বয়স হয়নি, বুঝার বয়স হয়নি, নামাজ পড়ার বয়স হয়নি, হজ করার বয়স হয়নি ইত্যাকার বাহানা বাতুলতা মাত্র।
যেসব বোন বাহানা জুড়ে দিয়ে থাকে যে, এখনো পর্দা করার বয়স হয়নি তাদের উদ্দেশ্যে ইসলামী চিন্তাবিদগণ বলেছেন যে, হে বোন! অন্যায় ও পাপকাজের রেসে না নেমে যারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে দ্রুতলয়ে তাঁর পানে অগ্রসর হচ্ছে আপনি তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামুন। কারণ, আল্লাহ বলেছেন- “তোমরা তোমাদের প্রভুর ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রতিযোগিতা করো, যে জান্নাতের ব্যাপ্তি মহাকাশ ও পৃথিবীর চাইতেও প্রশস্ত। তাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে যারা আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবাহকের প্রতি বিশ্বাস রাখে।’ [সূরা আল হাদীদ, ৫৭ : ২১]
মনে রাখতে হবে যে, কোনোক্রমেই আল্লাহকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তাহলে এই দুনিয়া ও পরকালে আল্লাহও ভুলে যাবেন। বান্দার ওপর থেকে তাঁর দয়া, মায়া, মমতার দৃষ্টি তুলে নেবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘ওদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে যায়। যার ফলে আল্লাহও তাদেরকে তাদের নিজেদের কথা ভুলিয়ে দেন।’ [সূরা আল হাশর, ৫৯ : ১৯]
প্রতিটি মানুষের উচিত নিজ পাপের বোঝা ভারি না করে অল্প বয়স থেকেই আল্লাহর বিধান ও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হিজাব করা শুরু করা। কেননা, আল্লাহ প্রতিটি মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হিসেব নেবেন। তাই এখনো বয়স হয়নি, সময় হয়নি এমন অজুহাত অবান্তর। মূলত এক মুহূর্ত বেঁচে থাকার গ্যারান্টি আমাদের কারো কাছেই নেই। এ প্রসঙ্গে এক শিল্পী বড় মিষ্টি করে গেয়েছেন- ‘এক সেকেন্ডের নাই ভরসা কোন আশাতে বাঁধলাম ঘর/ সবাই বলে আপন আপন ভাইবা দেখি সবাই পর।’
একাদশ অজুহাত : যারা পর্দা পালনে আগ্রহী নয়, তাদের আরেকটি অজুহাত হলো- ‘হিজাব বা পরিপূর্ণ পর্দা করলে লোকজন আমার গায়ে মৌলবাদী, জঙ্গি প্রভৃতি বিশেষণসহ বিভিন্ন ইসলামিক দলের তকমা লাগিয়ে দেবে।’
জবাব : যেসব তরুণী মৌলবাদী, জঙ্গিসহ নানা অভিযোগকে বাহানা হিসেবে ধরে নিয়ে পর্দা হতে দূরে থাকেন তাদের উদ্দেশ্যে ইসলামদরদি বিশেষজ্ঞগণের বক্তব্য হলো- হে বোন! ইসলামে কোনো দলাদলি নেই। কুরআন মাজিদে শুধু দুটি দলের কথা উল্লেখ রয়েছে। একটিকে বলা হয়েছে আল্লাহর দল। আল্লাহর আদেশের আনুগত্য এবং তিনি যা করতে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকার কারণে এই দলটিকে তিনি চূড়ান্ত বিজয় দান করবেন। আরেকটি দল হচ্ছে, অভিশপ্ত শয়তানের দল। এরা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে।
হে বোন! আপনি যদি আল্লাহর আদেশের অনুসরণ করেন তাহলে মনে রাখবেন তাঁর আদেশসমূহের মধ্যে হিজাবও একটি। আর এমনটি হতে পারলে তো আপনিও সেই সাফল্য লাভকারী দলের একজন গর্বিত সদস্য। কিন্তু যদি আপনি পরিপূর্ণ পর্দা না করেন, আল্লাহর বিধিনিষেধ না মানেন। উল্টো নিজ সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়ান, তাহ লে আপনি শয়তানের মিছিলে সামিল হলেন। আপনি তখন গলা মেলালেন শয়তানের সঙ্গী-সাথি, ভন্ডমুনাফিক ও অবিশ্বাসী-কাফেরদের সাথে। যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ।
মূলত যারা শয়তানের ধোঁকার জালে একবার পড়ে যায়, তারা হাবাগোবা বোকা হয়ে যায়। তখন তাদের কাছে আল্লাহ ও তাঁর নবীর কথা ঘেন্না লাগে। সে টেরও পায় না যে, কিভাবে আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, আর ধীরে ধীরে শয়তানের গুহায় প্রবেশ করছে?
হিজাব শুধু নারীর নিরাপত্তা রক্ষাকবচই নয়, এটি একটি উচ্চ পর্যায়ের ইবাদত। কোনো লোকের মতামত বা ব্যক্তিগত পছন্দ, কোনো দলের পরিচিতির সাথে এর দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে যারা শয়তানের দলের পথ ও মতে চলতে চায় শয়তান নারীদেহকে তাদের চোখে আকর্ষণীয় মোহনীয়ভাবে তুলে ধরে। তাই নারীর চুলের স্টাইল, আঁটসাঁট পোশাক তার অবয়বকেই স্পষ্ট করে মেলে ধরে। এভাবে ক্রমান্বয়ে আমরা সন্ধি পাতছি অভিশপ্ত শয়তানের সাথে। যতদিন না অনুশোচনা করছি, প্রতিটি দিন আমরা ভাগীদার হচ্ছি আল্লাহর অভিশাপ আর ক্রোধের। প্রতিমুহূর্তে আমরা কবরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মৃত্যুদূত আমাদের আত্মাকে হরণ করার জন্য সদাপ্রস্তুত।
লেখক: ভাষ্যকার, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন; বিভাগীয় প্রধান(হাদীস), আল ফাতাহ পাবলিকেশন্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।