Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

এগিয়ে চলছে বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের উন্নয়ন

| প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


চট্টগ্রামে ঝটিকা সফরে অগ্রগতি দেখলেন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সচিব
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামের মীরসরাই ও আনোয়ারায় এগিয়ে চলছে বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের (এসইজেড) উন্নয়ন কাজ। এর পাশাপাশি চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজও চলছে।
এসইজেড চালুর মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সোনালী দ্বার উন্মোচিত হবে। আর এর মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শিল্প শহরে পরিণত হবে চট্টগ্রামের ওই দু’টি উপজেলা।
দেশের সবচেয়ে বড় এসইজেড হচ্ছে মিরসরাইতে। প্রায় ৮ হাজার একর জমিতে এসইজেড প্রতিষ্ঠায় প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১০ লাখ লোকের। অন্যদিকে, সমুদ্র তীরবর্তী আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন করতে ব্যয় করা হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম শিল্পাঞ্চলে পরিণত হবে। কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
এসব উন্নয়ন প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি দেখতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) হেলিকপ্টারে ঝটিকা সফর করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারের এগার সচিব। উচ্চ পর্যায়ের এ প্রতিনিধি দলটি এসব উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানা গেছে। বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের ভার নিজের হাতে তুলে নেয়ার ঘোষণা দেন। সে প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন চলছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নে অসংখ্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরভিত্তিক বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে গড়ে তোলা হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। প্রাথমিক পর্যায়ে মিরসরাইতে একটি ও আনোয়ারাতে দু’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।
বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে। চট্টগ্রামসহ পুরো দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে চীনের সহযোগিতায় বেসরকারি উদ্যোগে একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে চলছে আরও একটি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ।
এসব উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল এ অঞ্চল সফর করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ ছাড়াও এ দলে ছিলেন বেজার চেয়ারম্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি মন্ত্রণালয়ের সচিব।
প্রতিনিধি দলটি প্রথমে মিরসরাইয়ের বিশেষ অর্থনৈতিক জোন পরিদর্শন করেন। এরপর তারা যান আনোয়রা উপজেলার গহিরায়। সেখানে ইকোনমিক জোনের কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন তারা। আনোয়ারায় ভূমি উন্নয়ন কাজ করছে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। তারা চায়না হারবারের কার্যালয়ও পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু চায়না হারবারের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন। পরে তারা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ির উদ্দেশে আনোয়ারা ত্যাগ করেন।   
জানা যায়, আনোয়ারায় ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক জোনের জন্য ২৯১ একর খাস জমি প্রতীকী মূল্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে হস্তান্তর করেছেন জেলা প্রশাসক। আনোয়ারার গহিরায় ৬১১ দশমিক ৪৭ একর জমির ওপর অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হবে। সমুদ্রবন্দরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের কেন্দ্রভূমি হবে এটি।
বেজা সূত্র জানায়, দেশের উদীয়মান ও রফতানিমুখী জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ইলেকট্রনিকস পণ্যসামগ্রী, ফার্নেস ও সিমেন্ট শিল্পকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এতে ৩৭১টি শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হবে। এরমধ্যে ২৫০টিই জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বরাদ্দ থাকবে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯ কিলোমিটার, শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার এবং শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরত্বে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবস্থান। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫৩ হাজার ৪২০ জনের কর্মসংস্থান হবে।
বেজার তত্ত¡াবধানে বাস্তবায়নাধীন দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল মিরসরাইয়ে ১০টি মৌজায় মোট ৭ হাজার ১৩৭ দশমিক ৪৮২৪ একর খাস জমি ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ শেষে মাটি সমান, প্রকল্প কার্যালয় তৈরিসহ নানা কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭ কিলোমিটার দূরের অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক হাজার ২২২টি কারখানার প্লট থাকবে। এ অঞ্চলে পোশাক কারখানা, টেক্সটাইল, অটোমোবাইল, অটোমোবাইল পার্টস তৈরি এবং শিপ বিল্ডিংয়ের মতো প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উপযুক্ত স্থান বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
উচ্চ পর্যায়ের পরিদর্শন দল চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেল, স›দ্বীপের ঠেংগারচর ছাড়াও ফেনীর সোনাগাজীতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণ কাজও পরিদর্শন করেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। পরিদর্শনকালে কর্মকর্তারা  কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। তারা এ সময় বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন ও তাৎক্ষণিক কিছু সমাধান দেন।
মীরসরাই জোনে প্রশাসনিক ভবন উদ্বোধন
মীরসরাই (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ইকোনোমিক জোনের ৫ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন উদ্বোধন করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ইকোনোমিক উক্ত প্রশাসনিক ভবন উদ্বোধন করেন বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব।  এসময় বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর সঞ্চালনায় এক সুধী সমাবেশে  প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ ও বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের উক্ত অর্থনৈতিক এলাকায় কর্মরত দপ্তরগুলোর কাজের অগ্রগতির বিবরণ জেনে তাদের বিভিন্ন সমস্যা তাৎক্ষণিক সমাধান প্রদান করেন। এছাড়া দ্রæত অবশিষ্ট কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাবার পরামর্শ প্রদান করেন। এসময় বক্তব্য প্রদানকালে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এই উন্নয়নের যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকাকে ভোট দিন। উন্নয়নের মহাসড়কে নৌকার কোন বিকল্প নেই বলে সকল মিরসরাইবাসীকে নৌকার সপক্ষে থেকে এই মহা উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাবার আহŸান জানান।
আনোয়ারায় প্রতিনিধিদল
আনোয়ারা উপজেলা সংবাদদাতা :
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিদ্যুত, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ সরকারের পদস্থ ব্যক্তিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার সময় তাঁরা উপজেলার কালাবিবি দীঘির মোড় এলাকায় উপস্থিত হয়ে এলাকা পরিদর্শন ও শিল্প অঞ্চল সম্পর্কে খোঁজ নেন। ওই সময় প্রতিমন্ত্রী অর্থনৈতিক অঞ্চল সম্পর্কে চায়না হারবার কোম্পানীর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন।
পরিদর্শনকালে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র সচিব মেছবাহ উল আলম, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ -বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায়, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী, বিদ্যুত বিভাগের সচিব আহমদ কায়কাউস, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ইসতিয়াক আহমদ, বেজা প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ, বেজা নির্বাহী বোর্ডের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আইয়ুব, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) দৌলতুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল জলিল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মাসুকুর রহমান প্রমুখ।



 

Show all comments
  • সোলায়মান ১০ মার্চ, ২০১৭, ১২:৫৫ এএম says : 1
    নির্ধারিত সময় এবং নির্ধারিত ব্যয়ের মধ্যে যেন কাজগুলো পরিপূর্ণ শেষ করা হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ