Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জয়-পরাজয়ের প্যারামিটার হয়ে দাঁড়াবে তরুণ প্রজন্মের ৩৮ হাজার নতুন ভোটার

| প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটার নিয়ে টেনশন বাড়ছে মেয়র প্রার্থীদের। বিশেষ করে ‘তরুণ প্রজন্ম’র প্রায় ৩৮ হাজার নতুন ভোটারের রায় কুসিকে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ের প্যারামিটার হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনরা। মেয়র পদে রাজনৈতিক দলের প্রতীকের এ নির্বাচনে নতুন ভোটারদের মধ্যে কী পরিমাণ ভোটার আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে পছন্দ করে আর কারা রাজনীতি নিয়ে ভাবছেন না এমন পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও নগরের বিশিষ্টজনরা মনে করছেন এসব নতুন ভোটারের বেশির ভাগই বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে নাগরিক সুবিধার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে এমন প্রার্থীকেই আগামীদিনের নগরকর্তা নির্বাচিত করবে। তবে তরুণ প্রজন্মের নতুন ভোটারদের মন জয় করতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর ওয়ার্ড পর্যায়ে দায়িত্ব দেয়া নেতাকর্মীরা পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। পাশাপাশি দুই প্রার্থীও দলীয় প্রতীকের প্রতি নতুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে কৌশলী হয়ে উঠেছেন।
কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচন নিয়ে। আর মাত্র ২০ দিন পর ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে কুসিক নির্বাচন। দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচন নিয়ে ফেব্রæয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে নগরী। মনোনয়ন নিয়ে দৌড়-ঝাঁপের পালা, দলীয়ভাবে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া, মান-অভিমান, ক্ষোভ প্রশমিত করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কুমিল্লামুখী হওয়া, মনোনয়নপত্র জমা দেয়া, যাচাই-বাছাই, আপিল শুনানি, বৈধ হওয়া মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীদের গণসংযোগ, ভোটারদের সাথে শুভেচ্ছা-কুশল বিনিময় আর মেয়র প্রার্থীদের ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের বৈঠক, নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা তৈরিসহ নির্বাচনের এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে নগরীতে। এমন উৎসবের মাঝেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী সীমা ও বিএনপির সাক্কুর পিছু ছাড়ছে না টেনশন।  ভোটের মাঠে নির্বাচনী দৌড়-ঝাঁপে সীমা-সাক্কুর পূর্বঅভিজ্ঞতা থাকলেও এবারের কুসিক নির্বাচনকে বেশ কঠিনভাবেই দেখছেন দুই প্রার্থী। এবার জাসদ থেকে মেয়র পদে আরেক নারী প্রার্থী শিরিন আক্তারকে নিয়ে তারা ভাবছেন না। কেননা শিরিন কুসিকের গত নির্বাচনেও অংশ নিয়ে জামানত হারিয়েছেন। এছাড়া এবারে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগের সীমা ও বিএনপির সাক্কু দু’জনই এ নির্বাচনে দলীয় হেভিওয়েট প্রার্থী। দুই দলের নেতাকর্মীরাই মরিয়া হয়ে উঠেছেন দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে হারিয়ে সাক্কু নবগঠিত সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। এবার বিজিত ওই প্রার্থীর কন্যাই সাক্কুর অন্যতম প্রতিদ্ব›দ্বী। তার ওপর এবার দলীয় প্রতীকের নির্বাচন। আর তাই এবারের নির্বাচনে বড় হয়ে দেখা দেবে দলীয় প্রতীকের বিষয়টি। গত নির্বাচনে কুসিকের ভোটার ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৭৪ জন। এবারে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জনে। এবার ৩৮ হাজার ৩৯২ জন বাড়তি ভোটার এই প্রথমবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে। তরুণ প্রজন্মের ৩৮ হাজারের বেশি ভোটার জীবনের প্রথম ভোট দিতে কেন্দ্রমুখী হবেন এটাই স্বাভাবিক। তরুণ প্রজন্মের এসব নতুন ভোটার খুশি মনেই ভোট দেবেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে। কিন্তু তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে টেনশনে পড়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কেননা ৩৮ হাজার নতুন ভোটারের সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে পারে সব হিসাব-নিকাশ। আর তাই দল ও প্রার্থীদের কাছে নতুন ভোটারের কদর অনেক বেশি হয়ে দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নতুন ভোটারদের ভোট টানার লক্ষ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে নতুন ভোটারদের ভোট পেতে সরাসরি তাদের সঙ্গে দেখা, তাদের অভিভাবকদের অনুরোধ এবং দলের ছাত্র-যুব নেতাদের মাঠে নামিয়েছেন প্রতিদ্ব›দ্বী দুই প্রার্থীর নির্বাচনী কর্মকৌশল নির্ধারকরা।  
নগরীর বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, কুসিক নির্বাচনে কে মেয়র পদে নির্বাচিত হবেন তা তরুণ প্রজন্মের ৩৮ হাজার নতুন ভোটারের ওপরও অনেকটা নির্ভর করছে। বিশিষ্টজনদের মতে, নতুন ভোটারদের বেশির ভাগই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়াও তরুণ চাকরিজীবী, নববধূও রয়েছেন। তাদের কাছে দলীয় প্রতীকের বিষয়টি যেমন গুরুত্বের তেমনি হেভিওয়েট দুই প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর আফজল কন্যা সীমা ও সাবেক মেয়র সাক্কুর ব্যক্তি ইমেজের বিষয়টিও কম গুরুত্বের নয়। তারা নতুন ভোটার। তাই আগামীদিনে যে প্রার্থী তরুণ প্রজন্মের সুবিধার দিকগুলো নিয়ে কথা বলবেন, বাস্তবায়নের আশ্বাস দেবেন, নাগরিক সুবিধার প্রতিফলনের জায়গাটি সমৃদ্ধ করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ হবেন এমন প্রার্থীই নতুন ভোটারের ভোট টানতে পারবেন। এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের প্যারামিটারও বলা যায় এসব নতুন ভোটারদের।
এদিকে অনুসন্ধান করে জানা যায়, এবারের কুসিক নির্বাচনে বাড়তি ৩৮ হাজার ভোটারই হলো তরুণ প্রজন্মের। যাদের অধিকাংশই আধুনিক, রুচিশীল এবং তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত। এ ধরনের নতুন ভোটারদের অনেকেই জানান, নগরীতে সিটি কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রিত আগের পৌরপার্ক (নগর শিশু উদ্যান) ছাড়া ভালো মানের কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। নেই খেলাধুলার মাঠ। নেই দম ফেলার মতো খোলা জায়গা। তরুণ-কিশোররা ঈদগাহে খেলাধুলার চর্চা করে। প্রাচীন শহর নগরে রূপ পেয়েছে। কিন্তু নাগরিক সুবিধার ছিটেফোঁটা নেই। নতুন ও আগামী প্রজন্মের জন্য এসবের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া চলছে স্বাচ্ছন্দ্য নাগরিক জীবন গঠনে এবং পাড়া- মহল্লায় সন্ত্রাস, মাদকের ভয়াবহতা রোধে যে প্রার্থী প্রতিশ্রæতিতে আবদ্ধ হবেন তিনিই তরুণ প্রজন্মের ভোট টানতে পারবেন। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ