Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী আমেজে উৎসবমুখর কুমিল্লা নগরী

| প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : দীর্ঘ আট বছর পর কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মতো একটি বড় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নৌকা ও বিএনপিধানের শীষের ভোটযুদ্ধ নির্বাচনী পরিবেশকে করে তুলছে উৎসবমুখর। গতকাল বুধবার সকালে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর তাদের কর্মী-সমর্থকরা উল্লসিত হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মুখে নৌকা আর ধানের শীষের শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে  গোটা টাউনহল মাঠ। আর কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মিছিল নিয়ে ফিরে যান নিজ নিজ ওয়ার্ডে। প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাদের প্রচারণায় নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হয় নগরীর সর্বত্র।  
সকাল ৯টা। তখনো চৈত্রের সূর্যের তেজ গায়ে জ্বালাপোড়া তুলেনি মানুষজনের। রিকশা, অটো, ছোট ছোট অন্যান্য যান আর কর্মব্যস্ত মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে। সময় গড়িয়ে সকাল সাড়ে ৯টা। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে প্রবেশ করছে কুমিল্লার ঐতিহাসিক টাউনহল মাঠে। সকাল ১০টার মধ্যে টাউনহলের বাইরে জনসমুদ্র সৃষ্টি হয়। বড় কোনো সমাবেশ নয়। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের দিনক্ষণ ঘিরেই প্রার্থী, কর্মী, সমর্থকদের এক বিশাল মিলনমেলা সৃষ্টি হয় কুমিল্লা টাউনহলের ভেতর বাইরে। লোকজনের ভিড় সামলাতে হিমশিম পোহান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা শুধুমাত্র প্রার্থী ও দু’জন করে সমর্থককে মিলনায়তনে প্রবেশের সুযোগ দেন। আর বাইরে অপেক্ষায় থাকেন প্রার্থীর অন্যান্য কর্মী সমর্থকরা। ধীরে ধীরে টাউনহল মাঠে আরও জড়ো হন হাজারো সাধারণ মানুষ। কোন প্রার্থী কী প্রতীক পেয়েছেন তা জানতে যেন তর সইছে না কর্মী, সমর্থক আর উৎসুক লোকজনের। গতকাল বুধবার কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ঘিরে টাউনহল প্রাঙ্গণে এরকম দৃশ্য জানান দেয় কুমিল্লা এখন নির্বাচনী আমেজে উৎসবের নগরী।
যেভাবে শুরু প্রতীক বরাদ্দ
কুমিল্লা নগরীর টাউনহল মিলনায়তনে গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হয় কুসিক নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডল প্রতীক বরাদ্দের আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা যা করতে পারবে এবং যা পারবে না এবিষয়ে নির্বাচনী আচরণবিধির বিভিন্ন ধারা তুলে ধরেন। এরপর ৫ মেয়র প্রার্থী, ৯টি সংরক্ষিত আসনে ৪০ জন নারী কাউন্সিলর এবং ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের ১১৪জন কাউন্সিলরের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ কার্যক্রম শুরু হয়।
সীমা ও সাক্কু যেভাবে প্রতীক গ্রহণ করলেন
এই প্রথমবারের মতো মেয়র পদে রাজনৈতিক প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জেএসডি, পিডিপি ও একজন স্বতন্ত্রসহ ৫ মেয়র প্রার্থী এবারের সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন। প্রতীক নেয়ার জন্য সকাল দশটায় কুমিল্লা টাউনহল মিলনায়তনে আসেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা। সঙ্গে ছিলেন তার পিতা বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আফজল খান, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আলহাজ্ব ওমর ফারুক, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জোবেদা খাতুন পারুল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন ও আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন। তারপর দশটা দশ মিনিটে মিলনায়তনে প্রবেশ করেন সাবেক মেয়র বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুর হক সাক্কু। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, ছাত্রদলের সহসভাপতি সাজ্জাদুল কবীর, সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মুজাহিদ চৌধুরীসহ তৃণমূল নেতারা। সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হয় প্রতীক বরাদ্দের পালা। প্রথমে রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার হাতে তুলে দেন দলীয় প্রতীক নৌকা। পিতা আফজল খানকে সাথে নিয়ে নৌকা প্রতীক গ্রহণ করেন সীমা। তারপর রিটার্নিং কর্মকর্তা বিএনপির প্রার্থী মনিরুল সাক্কুর হাতে তুলে দেন দলীয় প্রতীক ধানের শীষ।    
নৌকা পেয়ে সীমার প্রতিক্রিয়া
দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়ে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, আওয়ামী লীগের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক নৌকায় ওঠেছে। কুমিল্লা জুড়ে নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ সুন্দর রয়েছে। প্রতিক্রিয়া শেষে নেতা-কর্মী, সমর্থকদের মুখে নৌকা-নৌকা শ্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে টাউনহল প্রাঙ্গণ। পরে সীমা দলীয় নেতাদের নিয়ে টাউনহল ছেড়ে প্রচারণার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন।
ধানের শীষ পেয়ে সাক্কু যা বললেন
ধানের শীষ প্রতীক পাবার পর টাউনহল মিলনায়তনের বাইরে আসেন বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। এসময় তাঁর চারপাশে কর্মী-সমর্থকরা ফসলি মাঠ থেকে তুলে আনা ধানের শীষ মুঠোবন্দি করে সাক্কুর পক্ষে শ্লোগান দেয়। গণতন্ত্র রক্ষার প্রতীক ধানের শীষ, ধানের শীষ। এরপর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় সাক্কু বলেন, ‘প্রতীক পেয়েছি। ধানের শীষ গণতন্ত্র রক্ষার প্রতীক।  আগামীদিনের আধুনিক কুমিল্লা গড়ার প্রতীক। গত পাঁচ বছরে নগরীর সবকিছুতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। নগরবাসী ধানের শীষ প্রতীককে জয়ী করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আমাকে আবার মেয়র নির্বাচিত করবেন বলে আমি আশাবাদী।’ এদিকে প্রতীক পেয়ে বেলা সোয়া এগারটায় টাউনহল থেকে বেরিয়ে নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময়ে নেমে পড়েন বিএনপি প্রার্থী সাক্কু। দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে ছোটরা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর একপর্যায়ে ইনকিলাবকে সাক্কু বলেন, ‘এ নির্বাচন নিয়ে ধানের শীষের পক্ষে নগরীর মানুষের মাঝে গণজোয়ার ও আবেগের সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লা বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সুশীল সমাজ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মেহনতি মানুষ ধানের শীষের পক্ষে তাদের সমর্থন প্রকাশ করছেন। নগরবাসী আমার হৃদয়ের স্পন্দন। আমি এবং ধানের শীষ নগরবাসীর কাছে এক অভিন্ন প্রতীক বলে মনে করি। নগর উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে নগরবাসী ধানের শীষকে বিজয়ী করবে। আমরা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই।’     
এদিকে রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডল প্রার্থীদেরকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাতে আহŸান জানিয়েছেন। পোস্টার, ব্যানার তৈরিতে এবং মাইক ব্যবহারে বিধিবিধান না মানলে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে বলেও তিনি প্রার্থীদের সতর্ক করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ