বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ভোটারদের হাত ছুঁয়ে চলছে সীমা-সাক্কুর বিরামহীন কুশলবিনিময়
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও সাবেক কাউন্সিলর আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে জয়ী করতে কর্মপরিকল্পনা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দুই দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে কেন্দ্রীয় নেতারা চোখ রাখছেন কুসিক নির্বাচনের হালচালে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই দুই-তিন দফা কুমিল্লায় আসলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় দুই নেতা মাত্র একদিন এসেছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেছেন নির্বাচনের মাঠ গোছানোর জন্য কুমিল্লা বিএনপির ঐক্য ও সাক্কুর নির্বাচনী অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা চাচ্ছেন স্থানীয় নেতৃত্বের কোন্দল মিটিয়ে দলের সবাই নৌকার পক্ষে মাঠে নেমে কাজ করুক। আর এমন চাওয়া থেকেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সিটি নির্বাচনের দিকে কড়া দৃষ্টি রেখে ঘন ঘন কুমিল্লায় আসছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সীমা ও বিএনপির সাক্কু রোদ, ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ভোটারদের কাছে টানতে চালাচ্ছেন বিরামহীন গণসংযোগ। ভোটারদের হাত ছুঁয়ে দোয়া চাওয়া আর কুশল বিনিময়ে চলছে ভোটের মাঠে তাদের নিরন্তর পথচলা।
দলীয় প্রতীকের নির্বাচন বলে কথা। নৌকা মানেই আওয়ামী লীগ আর ধানের শীষ বলতে বিএনপি। দেশের বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক দলের প্রতীকের সাথে সারা বিশ্ববাসীই পরিচিত। মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচন ঘিরে সারাদেশসহ প্রবাসী বাঙালিদের দৃষ্টি এখন কুমিল্লার দিকে। তবে নৌকা-ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনের কারণে দুই রাজনৈতিক দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি এখন কুসিকের দিকে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজে নেমেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের কাছে হাইকমান্ডের বার্তা পৌঁছে দেয়াসহ তা বাস্তবায়নের তাগাদা নিয়ে কুমিল্লায় এসেছেন দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। আর নেতাদের ঘিরে ইতিমধ্যে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কর্মী সমাবেশও জমে উঠেছে। আর এসব সমাবেশে পা রাখছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচনকে সামনে রেখেই মূলত এসব কর্মীসমাবেশ আয়োজন করছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশের আয়োজন দলের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলবে, ভুল বুঝাবুঝি দূর হবে এবং ভোটের মাঠে দলীয় প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পক্ষে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অভিন্ন অবস্থান তৈরি হবে। গত সোমবার কুমিল্লায় এসেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। তিনি স্বাচিপের একটি অনুষ্ঠানে এলেও কুসিক নির্বাচনে দলের সবাইকে নৌকার পক্ষে কাজ করার আহŸানসহ বেশকিছু নির্দেশনা দেন। এর আগেও সীমাকে মনোনয়ন দেয়ার পর তিনি কুমিল্লায় এসে আওয়ামী লীগের দুই গ্রæপের নেতাদের সাথে কথা বলেন। সেখানেও উঠে আসে নৌকার প্রার্থীর বিষয়টি। মঙ্গলবার কুমিল্লা নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে যুবলীগ কর্মিসভায় যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহিসহ কেন্দ্রীয় আরও কিছু নেতা উপস্থিত ছিলেন। কর্মিসভা শেষে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে স্থান পায় কুসিক নির্বাচনের বিষয়টি। বৈঠকে যুবলীগের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা জানান, ‘এ মুহূর্তে নির্বাচনী কোনো প্রচারণা চলছে না। কেবল পরিচিতদের সাথে কুশল বিনিময়, দোয়া চাওয়া। আর কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক কাজে কুমিল্লায় আসছেন। ওনারা দলের নেতা-কর্মীদের দলের বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বিষয়ে আলোচনা করছেন। আর যেহেতু সামনে সিটি নির্বাচন, তাই নেতাকর্মীদের কীভাবে মাঠে কাজ করবে এসব বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা কুসিক নির্বাচনের পুরো বিষয়টার উপর নজর রাখছেন।’
অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ইতিমধ্যে কুমিল্লায় না এলেও তারা নির্বাচন নিয়ে তীক্ষè নজর রাখছেন এখানে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লায় বিএনপির মধ্যে কোনো রকম দ্ব›দ্ব-বিরোধ নেই। কুমিল্লা বিএনপি নেতা-কর্মীরা নিজেরাই সুসংগঠিত হয়ে দলীয় প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর জন্য মাঠে নেমে পড়েছে। সাক্কুর ব্যক্তি ইমেজের কারণে কেন্দ্রীয় নেতারা কুমিল্লায় ঘন ঘন আসা-যাওয়া নিয়ে ভাবছেন না। নাসিক নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ ও মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন দুর্বলতার বিষয়গুলো যাতে কুসিকের প্রার্থীর ক্ষেত্রে ফুটে না ওঠে এসব মাথায় রেখে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা দৃষ্টি ফেলেছেন কুমিল্লায়। কেন্দ্রীয় নেতারা কুসিক নির্বাচন বিষয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা, পরামর্শ দিচ্ছেন দলের দায়িত্বশীল নেতাদের। চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা মো. শাহজাহানকে কুসিকের বিষয়টির উপর নজর রাখার জন্যও বলা হয়েছে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কুসিক নির্বাচনে দলীয় কার্যক্রমের বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করছেন। গত দুই মার্চ নজরুল ইসলাম খান ও দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাবেক এমপি শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় দলীয় প্রার্থী সাক্কুর সাথে কুমিল্লার নির্বাচন অফিসে আসেন। এরপর থেকে বিএনপির কোনো কেন্দ্রীয় নেতা কুমিল্লায় পা রাখেননি। এ প্রসঙ্গে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি সুসংগঠিত দল। কুমিল্লায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো দ্ব›দ্ব-বিরোধ নেই। তাই বিরোধ মেটানোর জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কুমিল্লায় আসতে হয় না। কুসিক নির্বাচনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতারা সময়-সময় দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। তারা কুমিল্লার পরিবেশ পরিস্থিতি চিন্তা করে নির্বাচন নিয়ে কর্মপরিকল্পনায় করেছেন। সেই অনুযায়ী আমাদের নেতা-কর্মী সমর্থকরা কাজ করে যাচ্ছে।’ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘নগর উন্নয়নে যে কাজ করেছি এবং যা চলমান রয়েছে তা বিবেচনা করেই ভোটাররা আমাকে ভোট দেবে। আমি আশাবাদী ভোটাররা এবারো আমাকে জয়ী করবে। ব্যক্তি সাক্কু ও ধানের শীষের সাক্কুর মিলন যেখানে ঘটেছে সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা না আসলেও তাঁদের দিক-নির্দেশনা, পরামর্শই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি। আর কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ আসলে অবশ্যই আমরা খুশি হবো।’
এদিকে গত দুইদিন বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও ভোটার ও সাধারণ মানুষের সাথে কুশল বিনিময়, হাত ধরে দোয়া চাওয়ার মতো প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কুসিক নির্বাচনে আলোচিত দুই প্রার্থী বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু ও আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা। মঙ্গলবার ও বুধবার দিনভর নগরীর কান্দিরপাড়, মনোহরপুর, চকবাজার, জজকোর্ট, অশোকতলা এলাকায় ব্যবসায়ি, চাকরিজীবী, আইনজীবী, ক্ষুদ্রদোকানিসহ পথচারি ও সাধারণ মানুষের সাথে কুশল বিনিময় করেন আঞ্জুম সুলতানা সীমা। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ছাতিপট্টি, চকবাজার, মোগলটুলি, পুলিশ লাইন, ঝাউতলা, রেইসকোর্স, কান্দিরপাড় এলাকায় সর্বস্তরের মানুষের সাথে কুশল বিনিময় করে নিজের জন্য দোয়া চান। গতকাল দুপুরে বৃষ্টির মধ্যেও ভোটার ও সাধারণ মানুষের সাথে দুই প্রার্থী কুশল বিনিময় থেমে থাকেনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।