Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দলে কোনো দ্বন্দ্ব-বিরোধ থাকবে না সীমা

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কোনো নেতাকে নিয়ে সংশয় নেই  সাক্কু


সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমা বলেছেন, আমরা সবাই জাতির জনকের আদর্শের সৈনিক, জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী এবং আওয়ামী লীগ পরিবারের লোক- এটাই আমাদের বড় পরিচয়। আর এ পরিচয়ের মর্যাদা, সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে এমপি বাহার চাচাসহ সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নিবেদিত হয়ে কাজ করবেন বলে আমি প্রত্যাশা করছি। নৌকা প্রতীকের জয়ের জন্য কুমিল্লা আওয়ামী লীগে কোনো দ্বন্দ্ব-বিরোধ থাকবে না। অন্যদিকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করতে একটি মহল কুমিল্লা বিএনপিতে দ্বন্দ্ব, কোন্দলের বিষয়টি সামনে আনার চেষ্টা করছেন। এক সময় দ্বন্দ্ব ছিল। বর্তমানে কুমিল্লা বিএনপি কোন্দলমুক্ত। পাঁচ বছর আগের হাঁস প্রতীকের নির্বাচন আর এবারের ধানের শীষের নির্বাচন এক নয়। এখানে দলীয় বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। তাই ভোটের মাঠে কুমিল্লা বিএনপির কোনো নেতাকে নিয়ে সংশয়ের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।   
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবারের প্রেক্ষাপট অনেকটা ভিন্ন। নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে দলীয় প্রতীকের এ নির্বাচন দেশের বৃহত্তম দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জ তেমনি ঘরে-বাইরে কোণঠাসা বিএনপির জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর একটি বড় পরীক্ষা বলে মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কুমিল্লার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সিটিতে এ নির্বাচন দুই দলের প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দেখা দেবে। আর এ সিটি নির্বাচন আগামী সংসদ নির্বাচনেও সদরে প্রভাব ফেলবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মরিয়া হয়ে লড়বে ভোটযুদ্ধে। যেহেতু দলীয় প্রতীকের নির্বাচন তাই দলীয় কোন্দল, বিরোধিতা মিটিয়ে দুই দলের প্রার্থীর জন্য নেতাকর্মীদের অবস্থানও থাকবে পরিষ্কার। আর এমন মনোভাব নিয়ে দলের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের সব ধরনের সহযোগিতা পেতে দুই দলের মেয়রপ্রার্থী কাজ শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সোমবার কুমিল্লায় ফিরে রাত ৯টায় সদর আসনের এমপি আওয়ামী লীগ নেতা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সাথে দেখা করে সহযোগিতা ও দোয়া চান মেয়রপ্রার্থী সীমা। এ সময় এমপি বাহার তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডভোকেট আফজল খানের কন্যা সীমাকে দোয়া এবং নির্বাচনে জয়লাভ কামনা করেন। আচরণবিধির কারণে এমপি হাজী বাহার নির্বাচনী কোনো কর্মকা-ে সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও তার নেতা-কর্মীদের সমর্থন ও সহযোগিতা থাকবে বলেও তিনি সীমাকে আশ্বস্ত করেন। মেয়রপ্রার্থী সীমা বলেন, সবে তো দলের মনোনয়ন পেলাম। সকল পর্যায়ের  নেতাকর্মীর সাথে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। সোমবার রাতে সদরের এমপি বাহার চাচার সাথে দেখা করেছি। তিনি আমার পিতৃসমতুল্য। কুমিল্লার মানুষের অভিভাবক। বড় দলের রাজনীতি করলে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু আমার সাথে বাহার চাচার কখনো কোনো বিরোধ ছিল না। তিনি আমাকে নিজের মেয়ের মতো আদর করেন। তার কাছে একবার গিয়েছি। আবার যাবো। দশবার, শতবার যাবো। আমার বিশ্বাস, বাহার চাচা সব রাগ-অভিমান ভুলে দলের স্বার্থে, নৌকার স্বার্থে, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মান রক্ষায় অবশ্যই আসন্ন সিটি নির্বাচনে আমার জয়লাভের ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।
মেয়রপ্রার্থী সীমা আরো বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর মাঠ গোছানোর কাজ শুরু করব। কুমিল্লা আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা হয়েছে। তাদের সহযোগিতা, দোয়া, পরামর্শ চেয়েছি। আর যেহেতু নৌকা প্রতীকের নির্বাচন তাই আমার বিশ্বাস এ নিয়ে দলে কোনো মতবিরোধ, গ্রুপিং এবং কাউকে নিয়ে কোনো ধরনের সংশয় থাকবে না। সীমা বলেন, বিগত সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কয়েকটি নির্বাচনে তিনি অংশ নিয়ে সব ক’টিতেই জয়লাভ করেছেন। উন্নয়ন কর্মকা- ও নাগরিক সেবা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। নগরবাসী আসন্ন সিটি নির্বাচনে তাকে মূল্যায়ন করে মেয়র নির্বাচিত করবেন বলেও তিনি আশা ব্যক্ত করেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।
সাংবাদিকদের সাথে সাক্কুর মতবিনিময়
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে নগরীর নানুয়াদীঘি এলাকায় নিজ বাসভবনে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। এ সময় তিনি বলেন, ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে নগরবাসীর চাপের মুখে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেছি। ওই সময় আমার দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছিল। আমি দল থেকে পদত্যাগ করেই নির্বাচন করেছিলাম। ভোটাররা দলমত নির্বিশেষে একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সাক্কুকে নির্বাচিত করেছিল। এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এটি দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিএনপি আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, বিলুপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান ও নবগঠিত সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালীন নগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নাগরিক সুবিধার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। বিরোধী দলের লোক হয়েও সিটি মেয়রের আসনে বসে নগরবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে গেছি। করের বোঝা নগরবাসীর ওপর চাপিয়ে দেইনি। কুমিল্লা বিএনপির সকল নেতা ঐক্যমতে পৌঁছে এবারের নির্বাচনে আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য সমর্থন দিয়েছে। আর এ বিষয়টি ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) অনুধাবন করতে পেরেছেন বলেই দল থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এর বাইরেও নগরীর সাধারণ মানুষের একটা বড় নীরব সমর্থন রয়েছে আমার ওপর।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মেয়র সাক্কু বলেন, আমার মনোনয়নের ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা বিএনপির সভাপতি রাবেয়া আপার সমর্থন ছিল। সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিনের সমর্থন ছিল। মনোনয়ন দেয়ার সময় তিনি নিজে উপস্থিত থেকে আমার পক্ষে বলেছেন। তিন-চার বছর আগে আমাদের মধ্যে দূরত্ব ছিল। এখন তো আমরা একসঙ্গে দলের হয়ে কাজ করছি। কুমিল্লা বিএনপিতে কোনো দ্বন্দ্ব-বিরোধ নেই। ইয়াছিন ভাই জেলা রাজনীতি করছেন। আমি মহানগর নিয়ে আছি। এ নিয়ে তো কোনো সমস্যা নেই। মনির ভাই (মনিরুল হক চৌধুরী) আমার খুব কাছের। বিগত দিনে তার বিভিন্ন কর্মসূচি আমি আমার লোকজন উপস্থিত থেকে খেটে সফল করে দিয়েছি। তিনি আমাকে অনেক ¯েœহ করেন। একটি পত্রিকা লিখেছে হাজী ইয়াছিনকে নিয়ে নাকি সংশয় রয়েছে। এর আগেও এ পত্রিকায় আমাকে নিয়ে যা-তা লিখেছে। আমি এর বিচার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। সাক্কু বলেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে ভোটের মাঠে বিএনপির কোনো নেতাকে নিয়ে সংশয় নেই। সবাই উদারভাবে এ নির্বাচনে আমার জন্য কাজ করবেন। আর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি গতবারের মতো বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো।



 

Show all comments
  • হান্নান ১ মার্চ, ২০১৭, ২:৪৮ পিএম says : 0
    দ্বন্দ্ব-বিরোধ না থাকলেই ভালো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ