Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্দলীয় সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বিএনপি

সরকার দেশপ্রেমিকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে

| প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : সরকার নিজের স্বার্থ হাসিল করতে সুপরিকল্পিভাবে দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রকামীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আজকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বিভেদ সৃষ্টি করার। সরকার সুপরিকল্পিতভাবে দেশপ্রেমিকদের মধ্যে, গণতন্ত্রকামীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়ে তারা ফল লাভ করতে চায়। এটাকে পরাজিত করতে হবে।
আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন এবং বিএনপি বলেছে যে, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন এদেশে হবে না। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে।
রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের উদ্যোগে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১১তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১/১১-এর যে অবৈধ ও অনৈতিক সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে তারা একটা নীল নকশা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়, প্রথম আঘাত এনেছিল তারেক রহমানের ওপর। কেন? কারণ তারেক রহমান হচ্ছে সেই প্রতীক বা সেই প্রতিনিধি, যিনি স্বাধীন, সার্বভৌম, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতীকীতে পরিণত হয়েছেন। তিনি যে সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন, সেটাকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য এই আঘাতহানা হয়েছিল।
আমি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা, এরশাদের ক্ষমতা দখল করা, তারেক রহমান সাহেবের ওপর আক্রমণ করা এবং ১/১১-এর অভ্যুত্থানÑ এটাকে আলাদা করে দেখি না। আমরা মনে করি, এটা একটা জায়গার একটি নীল-নকশার, একটা চক্রান্তের অংশ। সেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে, বাংলাদেশ যাতে নিজের পায়ের উপরে মাথা উঁচু করে উঠে দাঁড়াতে না, পারে, সেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে, স্বাধীনতার যে পতাকা তা যেন অনমিত থাকে। সেই জন্য তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২০০৭ সাল থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চলমান আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমরা সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। ইতোমধ্যে আমাদের অনেক নেতা-কর্মীর জীবন গেছে, আমাদের ছাত্র ভাইদের অনেকে চলে গেছে আমাদের কাছ থেকে, অনেকে গুম হয়ে গেছে, নিখোঁজ হয়ে গেছে, পঙ্গু হয়ে গেছে, এরকম অসংখ্য। এই যে ত্যাগ, এই ত্যাগের বিনিময়ে আমাদেরকে আমাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যে পথ দেখিয়েছেন, যে ডাক দিয়েছেন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে, এখানে আমাদের সকলকে এক হতে হবে। যে নেতা সুদূর হাজার মাইল দূরে নির্বাসিত হয়ে রয়েছেন, তাকে ফিরিয়ে আনতে হলে, দেশের মানুষকে মুক্ত করতে হলে আজকে আমাদের কোনো বিভেদ নয় এবং ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে এবং একমাত্র জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই স্বৈরাচারী সরকারকে পরাজিত করতে হবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ  হোসেন বলেন, সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো ভোট ছাড়া আবার ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করছে। তারা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে বিভ্রান্ত  করার জন্য নানারকম কথা-বার্তা বলছে। একদিকে আমাদের নিবন্ধন বাতিল করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। আমরা বলতে চাই, বিএনপি সবচাইতে জনপ্রিয় ও সর্ববৃহৎ দল, যদি এই দলের এই পর্যায় চলে যায় দেশ, যে সেখানে বিএনপির নিবন্ধন থাকবে না। আমার বিশ্বাস সেই পর্যায় দেশ গেলে কারো নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না।
গণমাধ্যমে সরকার একটা অপপ্রচার চালায় যে, এইতো বিএনপি ভেঙে গেছে। আজকেও তারা অপপ্রচার করছে বিএনপি নির্বাচনে যাবে, ৭০ সিট, ৮০ সিট সমঝোতা হচ্ছে। আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগেও সরকার গণমাধ্যমের মাধ্যমে অপপ্রচার করেছিল যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে না যান তাহলে বিএনপির মধ্যে অনেকেই প্রস্তুত আছে তাকে ছাড়া নির্বাচনে চলে যাবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো বিএনপির নেতৃবৃন্দ তো দূরের কথা, তৃনমূলের একজন কর্মী পর্যন্ত নির্বাচন করে নাই, দেশের জনগণ অংশগ্রহণ করে নাই। আমরা বলতে চাই, এবারো সরকার একই অপপ্রচার করে ভালো ফলাফল পাবে না। আগামী নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। নেতা-কর্মীদের সরকারের অপপ্রচারের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহŸান জানান স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি কোনো আসন ভাগাভাগির নির্বাচন চায় না। জনগণের ভোটাধিকার চায়। আমরা চাই একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। খালেদা জিয়া ব্যতীত কোনো নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না, হতে দেয়া হবে না। ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচন হতে দেইনি। রকিবউদ্দিন শুধু ফলাফল ষোষণা করেছে।
তিনি সরকার প্রধানের উদ্দেশে বলেন, আপনি কারো করুণায় ক্ষমতায় থাকতে পারেন। কিন্তু  দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। এ দেশ রক্তের বিনিময়ে কেনা। কারো দান বা করুণায় নয়।
গয়েশ্বর বলেন, বিএনপির নেতৃত্বের শূন্যতার সম্ভাবনা কম। কারণ তারেক রহমান আছে। আগামী দিনে তিনি দলের নেতৃত্ব দিবেন। তার নেতৃত্বই কাল। যা শেখ হাসিনার অযোগ্যতা।
তিনি দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনে বিএনপিকে কিছু আসন দিয়ে আগামী নির্বাচনে যাবে বিএনপি। বা খালেদা জিয়ার সাজা হলেও কোনো সমস্যা নেই। এমন কথা বলে অসময়ে নেতাকর্মীদেরকে হতাশ করবেন না। কারণ জনগণ বিএনপির সাথে ও খালেদা জিয়ার সাথে আছে। এসময় দলের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দকে খালেদা জিয়ার মতো একই সুরে কথা বলার আহŸান জানান গয়েশ্বর।
ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেনÑ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামরুজ্জামান রতন, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম আলিম, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুর রশিদ মামুন, এজমল হোসেন, আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, মনিরুল ইসলাম, ইখতিয়ার রহমান কবির, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজিদ আরেফিন, বিএম নাজিম মাহমুদ, রাজিব আহসান পাপপু, মিনহাজুল ইসলাম ভুইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার, সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়ক হাফিজুর রহমানসহ ছাত্রদলের হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ