পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : ধর্মঘটের নামে চট্টগ্রামে চরম নৈরাজ্য চালিয়েছে পরিবহন শ্রমিকেরা। রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন ভাঙচুর ও যাত্রীদের লাঞ্ছিত করেছে তারা। হামলা চালিয়েছে সাংবাদিক ও পুলিশের উপর।
গতকাল (বুধবার) দিনভর মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কে অবস্থান নিয়ে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে শ্রমিকেরা। এতে করে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয় লোকজনকে। বেপরোয়া ভাঙচুর, সড়ক অবরোধসহ নৈরাজ্য সৃষ্টির পরও পুলিশ ছিল নীরব দর্শক।
ধর্মঘটে নৈরাজ্যের কারণে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরীর শিল্পকারখানায় শ্রমিকের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। স্কুল-কলেজে যেতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। দিনভর হরতালের আবহ বিরাজ করে নগরীতে। অচলাবস্থা নেমে আসে সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে।
গতকাল ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও মোড় পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দেয় শ্রমিকেরা। নগরীর ইপিজেড থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত প্রধান সড়কের অন্তত ২০টি পয়েন্টে সড়কে ব্যারিকেড দেয়া হয়। অন্যান্য সড়কেও শ্রমিকরা অবরোধ সৃষ্টি করে। শ্রমিকদের বাধার মুখে মহানগরী যানবাহনশূন্য হয়ে পড়ে। এতে চরম বিপাকে পড়েন অফিসমুখী লোকজন। চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলের হাজার হাজার শ্রমিক কর্মস্থলে যেতে পারেনি। সকালে আগ্রাবাদ থেকে ইপিজেড পর্যন্ত সড়কে টেম্পো চলাচল শুরু হলে পরিবহন শ্রমিকেরা বাধা দেয়। এতে করে পরিবহন শ্রমিকদের সাথে ইপিজেড শ্রমিকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি টেম্পো ও অটোরিকশা।
সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে যমুনা টেলিভিশনের রিপোর্টার ও ক্যামেরাপারসন হামলার শিকার হন। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডে ওয়াসার পাইপ লাইনের জন্য আনা সরঞ্জাম দিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় শ্রমিকরা। স্কুল-কলেমুখী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও চরম বিপাকে পড়ে। এসএসসি পরীক্ষার্থীরা সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেনি।
মহানগরীর কোথাও ব্যক্তিগত যানবাহন, টেম্পো ও অটোরিকশা চলতে দেয়নি শ্রমিকরা। অনেক এলাকায় রিকশা চলাচলেও তারা বাধা দেয়। তাদের আক্রমণের হাত থেকে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, বিদেশ ফেরত যাত্রীবাহী অটোরিকশাও বাদ যায়নি। সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব মোড়ে পরিবহন শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে যাত্রীদের ব্যক্তিগত গাড়ি থেকেও নামিয়ে দিচ্ছেন। রিকশা চলাচলেও বাধা দেয় তারা।
এদিকে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বহনকারী বাস চলাচল না করায় তারা কাজে যোগ দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা। নগরীর কুসুমবাগ এলাকার বাসিন্দা তাসলিমা বেগম বলেন, আমার কারখানা অক্সিজেন এলাকায়। সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত জিইসি মোড়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু গাড়ি না আসায় যেতে পারিনি। কালুরঘাটের একটি কারখানার স্টোর ম্যানেজার মো. কাশেমী বলেন, চকবাজারের বাসা থেকে হেঁটে বহদ্দারহাট মোড় পর্যন্ত গিয়ে কারখানায় যাওয়ার মতো কোনো যানবাহন পাননি। এরপর বাসায় ফিরে আসেন।
নগরীর বাদামতলি মোড়েও সকাল সাড়ে ৭টা থেকে অপেক্ষায় ছিলেন শত শত পোশাককর্মী। তাদের সবার গন্তব্য ছিল চট্টগ্রাম ইপিজেড। কিন্তু সকাল ৮টার পরও কোনো গাড়ি না আসায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাদামতলি মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দারাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। অবরোধ চলাকালে পরিবহন শ্রমিকরা কাছাকাছি অবস্থান নিলে উত্তেজনা দেখা দেয়। ডবলমুরিং থানার ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম জানান, গাড়ি না আসায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে বুঝিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। যেসব শ্রমিক কাজে যেতে পারেননি, শিল্প পুলিশের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাদের ছুটির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান ওসি মহিউদ্দিন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেওয়ানহাট মোড়ে পরিবহন শ্রমিকদের পুরো সড়ক দখল করে রাখতে দেখা যায়। সেখান দিয়ে রিকশা ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছিল না। বিমানযাত্রীদের বহনকারী একটি অটোরিকশা ওই পথে গিয়ে ভাঙচুরের শিকার হয়। নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলার অভ্যন্তরীণ রুটের বাস চলাচলও ধর্মঘটের কারণে বন্ধ ছিল। বেলা ১১টার পর টার্মিনাল থেকে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনে ঢিল ছুড়তে দেখা যায় পরিবহন শ্রমিকদের। লালখানবাজারে এক চালক শ্রমিকদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন বলেও জানা গেছে। নগরীর বাদুরতলা এলাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এসময় সিএনজি চালককেও তারা মারধর করেন।
বিকেলে ঢাকা থেকে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা এলেও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। নগরীর বিভিন্ন সড়কে হাতেগোনা কিছু গণপরিবহন দেখা গেছে সন্ধ্যার সময়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।