Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনা ও সুনামগঞ্জে ইজতেমা সম্পন্ন মুসলিম উম্মাহর শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা ফেনীতে সোমবার থেকে শুরু

| প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খুলনা ব্যুরো : মহান আল্লাহর নৈকাট্য অর্জন ও জীবনের গুণাহ মাফের ফরিয়াদে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হল খুলনার ইজতেমা। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয়, শেষ হয়েছে ১২টা ৩২ মিনিটে। লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির মোনাজাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুণাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়া ও আখিরাতের বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত চেয়ে দু’হাত তুলে মহান রবের রহমত প্রার্থনা করেন মুসল্লিরা। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের শূরা সাথী মাওলানা মুহাম্মদ ফারুক হুসাইন।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার পর খুলনা জেলা তাবলিগ জামাতে সর্বোবৃহৎ এ ইজতেমার আয়োজন করে। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া তিনদিনের এ ইজতেমা শনিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হয়। খুলনার ইজতেমায় পঁচিশ ভিনদেশী মুসল্লিসহ কয়েক লাখ মুসল্লি আখেরি মোনাজাত চলাকালে ইজতেমা ও আশপাশ এলাকায় ‘আমিন, আমিন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়। ফজরের নামাজের পরপরই খুলনা মহানগরীর ও পার্শ¦বর্তী এলাকা থেকে মুসল্লিরা আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে আসতে শুরু করেন। আর সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা ময়দান ও সামনের মহাসড়ক, বাইপাসসহ অলি-গলি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে আল্লাহর পতি নত হয়ে আখেরি মোনাজাতে মহিলাদের উপস্থিতি ও আকুতি ছিল লক্ষ্যণীয়। ইজতেমা ময়দানে সঙ্গে একত্ব হয়ে খুলনাবাসী মোনাজাতে শরিক হন। এসময় শহরের ব্যস্ততম কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে খুলনা মহানগরী ছিল প্রায় ফাঁকা। মোনাজাত উপলক্ষে গল্লামারী, জিরোপয়েন্ট, রূপসা সেতুর বাইপাস সড়ক ও চারপাশের এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু ছিল বন্ধ।
আগামী ২০১৯ সালে ফের খুলনায় জেলা ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন খুলনা জেলা ইজতেমার সমন্বয়কারী কাজী মোঃ তারেক।
সুনামগঞ্জ জেলা ইজতেমা সম্পন্ন
দিরাই উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল (শনিবার) সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের কুতুবপুর-বৈঠাখালী গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানের মাঠে তিন দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার অংশ জেলা ইজতেমা। ইজেতমায় মোনাজাত করেন কাকরাইল জামে মসজিদের ইমাম ও তাবলীগ জামাতের মুরুব্বী হাফিজ মাওলানা জুবায়ের আহমদ। বৃহস্পতিবার বাদ জোহর থেকে শুরু হওয়া শেষ দিন গতকাল শনিবার পর্যন্ত হেদায়তি বক্তব্য রাখেন মাওলানা আব্দুল মতিন, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মুকিত, মাওলানা রবিউল হক, আলজেরিয়ার শেখ আহমদ, মাওলানা দিলোয়ার হোসেন ও মাওলানা উমর ফারুক প্রমুখ। ইজেতমা অনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা জিম্মাদার শায়েখ মাওলানা আনোয়ার হোসাইন।
বিশ্ব মুসলিমের হেদায়াত কামনা করে বক্তারা বলেন, মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত; তাই এই সংক্ষেপ জীবনের তাগিদে তার পরকালের অনন্ত জীবন বরবাদ করে ফেলছে। জীবনের সকল কাজ করতে কোন বাধা নেই, কিন্তু এর কারণে যদি নিজ ধর্মের কাজগুলো বাদ দিয়ে দেই, তবে এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে দুঃখজনক।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাসহ সর্বস্তরের মানুষ ইজতেমায় আসেন। এছাড়া সারাদেশ থেকে তাবলীগের কাজে আসা দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিদেশি মেহমানরাও উপস্থিত ছিলেন। সবচেয়ে ইজতেমার শেষদিনে আখেরী মোনাজাতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে।
১৬, ১৭, ১৮ ফেব্রæয়ারি ফেনী আঞ্চলিক ইজতেমা
মো ওমর ফারুক ফেনী থেকে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন দেবীপুরে ১৬ ফেব্রæয়ারি তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বিদের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ফেনীতে আঞ্চলিক ইজতেমার ১ম আসর। ইজতেমাকে সামনে রেখে গত ২১ ডিসেম্বর থেকে প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে পুরোদমে। প্রতিদিন ১৪টি দলে বিভক্ত হয়ে তাবলিগ জামাতের মুসল্লিদের সঙ্গে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রস্তুতির কাজে অংশ নিচ্ছেন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণির ৫ শতাধিক মানুষ। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে ইজতেমা ময়দানজুড়ে চলছে চটের প্যান্ডেল নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ। স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে খুঁটির ওপর চট টানানো, লোহার খুঁটি নির্মাণ, মূল মঞ্চ তৈরী, টয়লেট নির্মাণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ, বালু দিয়ে মাঠ সমান করা ইত্যাদি। মুসল্লিদের উপজেলা নির্ধারণ করার জন্য খুঁটি ও খিত্তা তৈরী করা হচ্ছে। তাশকিল কামরা, তাঁবু, পানির লাইন, ভিতরের রাস্তা এবং শব্দ যন্ত্র বসানো হচ্ছে পুরো ময়দানজুড়ে। ইজতেমাকে সফল ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে ময়দান পরিদর্শন করেছেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, জেলা প্রশাসক মোঃ আমিন উল আহসান, ফেনী পৌর মেয়র হাজী আলাউদ্দিনসহ জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। ফেনীতে আগামী ১৬, ১৭ ও ১৮ ফেব্রæয়ারি তাবলিগ জামাতের আয়োজনে ও আহালে সুরার ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিতব্য আঞ্চলিক ইজতেমায় ৫ লক্ষাধিক মুসল্লির মিলনমেলা হবে বলে ধারণা দিয়েছেন তাবলিগ জামাতের ফেনী মারকাজের একজন শীর্ষ স্থানীয় মুরুব্বী। এজন্য তৈরী করা হচ্ছে সাড়ে ৬ লাখ বর্গফুটের মূল প্যান্ডেল। এছাড়া বিদেশী মেহমান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য থাকবে পৃথক পৃথক প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইজতেমায় ৫০ হাজার লোকের থাকার ব্যবস্থা, দেড় লাখ লোক বসে এবং আশপাশে থেকে তিন লাখ লোক বয়ান শোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ