Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

কে হচ্ছেন রাবি ভিসি?

| প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছরুল ইসলাম নাবিল, রাবি থেকে : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান প্রশাসনের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আগামী ২০ মার্চ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষকে নতুনভাবে পরবর্তী সময়ের জন্য দায়িত্ব দেবেন চ্যান্সেলর প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। সেই প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে এরই মধ্যে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক। প্রেসিডেন্ট দলীয় বিবেচনায় কাউকে নিয়োগ দিবেন নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণার মান ও নেতৃত্বদানে ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেবেন সে নিয়ে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ। তবে বর্তমান প্রশাসনের মতো শিক্ষাবান্ধব সৎ যোগ্য ও দক্ষ প্রশাসক চান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে ইচ্ছা মতো নিয়োগ বাণিজ্য করতে পছন্দের প্রার্থীকে প্রশাসনে আনতে উঠে পড়ে লেগেছে স্থানীয় আ’লীগ নেতারা। এ নিয়ে সর্বমহলে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী অভিভাবক কে হচ্ছেন সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সবাই।
বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেয় ২০১২ সালের ২০ মার্চ। তাদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০ মার্চ। এরপর পরবর্তী চার বছরের জন্য বর্তমান ভিসি মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও প্রো-ভিসি চৌধুরী সারওয়ার জাহান পরবর্তীতে আবারও একই পদে থাকতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। তাঁদের দায়িত্বে গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিকভাবে যে উন্নতি হয়েছে তা এরই মধ্যে সরকারের নজর কেড়েছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা, গবেষণাসহ নানা বিষয়ের উন্নয়ন কর্মকাÐে এই প্রশাসন খুবই সফলতা দেখিয়েছে। এই প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক থেকে শুরু করে সব নিয়োগে অনেকাংশে স্বচ্ছতা নিয়ে এসেছে। আগের প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বেশি নিয়োগ দেওয়া ও বিভিন্ন তহবিলের অর্থ শেষ করেছিল। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় দেউলিয়ার পথে গিয়েছিল। এই প্রশাসন দায়িত্ব নিয়ে গত কয়েক বছরে সেই তহবিলের অর্থ ফেরত দেয়াসহ ঢালাও নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রশাসন প্রার্থীদের শিক্ষা জীবনের প্রতিটিতে প্রথম শ্রেণি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করেছে বর্তমান প্রশাসন। তাই এই প্রশাসন আবারও নতুন করে দায়িত্ব পেতে পারেন বলে মনে করেন শিক্ষক-শিক্ষর্থীরা।
অপর একটি সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি প্রফেসর মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন যে সফলতা দেখিয়েছেন তার পুরস্কার হিসেবে বর্তমান সরকার তাকে বাইরের কোন দেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন। আর তা হলে সেক্ষেত্রে সব থেকে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে প্রো-ভিসি প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহানকে ভিসি পদে নতুনভাবে দায়িত্ব দেয়ার।’ এর বাহিরেও একাধিক শিক্ষক ওই পদগুলোতে দায়িত্ব পেতে পারেন বলেও ধারণা সূত্রগুলোর। এরই মধ্যে বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ১০-১২জন শিক্ষক ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক পদে দায়িতও পালন করেছেন। সাবেক একজন ভিসি নতুন করে আবারও এই পদে নিয়োগ পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, বর্তমান প্রশাসনের বাইরে ভিসি বা প্রো-ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম উঠে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক সাদেকুল আরেফিন। তিনি বর্তমানে সমাজকর্ম বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই প্রশাসনের প্রথম তিন বছর ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে তিনি সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকাÐের সঙ্গেও তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই যুক্ত রয়েছেন।
পরবর্তী প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি মো. আবুল কাশেম। তিনি ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হলেও বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রকীব আহমেদ প্রশানের সর্বোচ্চ পদটি পেতে অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহŸায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় হেকেপ প্রজেক্ট শেষ হলে তিনি কয়েক লাখ টাকার হিসেব দিতে পারেননি বলে অভিযোগ আছে।
সাবেক ভিসি (২০০৯-১২) এম আবদুস সোবহান দৌঁড়ঝাপ করছেন নতুন করে আবারও সেই পদটি নিতে। তিনি ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ বিভিন্ন পদে বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে একাধিক নিয়োগ দিয়েছিলেন। নিয়োগে অর্থনৈতিক লেনদেনের অভিযোগে তাকে আদালতের কাঠগড়াতেও দাঁড়াতে হয়েছিল। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু, টিএসসিসিসহ বিভিন্ন স্থায়ী তহবিলের কোটি কোটি টাকা শেষ করেছিলেন আবদুস সোবহান। বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই তহবিলের অর্থ পরিশোধ করেন। দায়িত্ব শেষ করে ভিসির বাসভবন থেকে চলে যাওয়ার সময় সোবহান ওই বাসভবনের অনেক আসবাবপত্রও নিয়ে যান।
ভূতত্ত¡ ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মুশফিক আহমেদও পরবর্তী প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে ‘মরিয়া’ হয়ে উঠেছেন। বর্তমান প্রশাসনে তিনি ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগেও তিনি ও তার স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া এই প্রশাসন থেকে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। তার স্ত্রী মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক হয়েও রাকসুর কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তাদের একাধিক পদে দায়িত্বসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা ক্ষুদ্ধ রয়েছেন।
প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি আনন্দ কুমার সাহা চেষ্টা করছেন পরবর্তীতে প্রশাসনে আসতে। এই অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি থাকা অবস্থায় আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিতে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ আছে দলীয় শিক্ষকদের।
ভূতত্ত¡ ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারও চেষ্টা করছেন দায়িত্ব পেতে। এর আগে তিনি গত প্রশাসনের সময়ে (২০০৯-১৩) ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ওই প্রশাসনে নিয়ম বহিভূতভাবে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এই শিক্ষকের স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তানজিমা ইয়াসমিন ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস (আইবিএসসি)-এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে হেকেপ প্রজেক্টে কয়েক লাখ টাকার হিসাব দিতে পারেন নি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে।
এছাড়াও ফলিত-রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. রোস্তম আলী ও লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এবং শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রণব কুমার পান্ডে, বাংলা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. শফিকুন্নবী সমাদী আগামী প্রশাসনে দায়িত্ব পেতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে জানা গেছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভিসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ