Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নরসিংদী পলিটেকনিক একাডেমির ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের হস্তচালিত মোবাইল চার্জার আবিষ্কার

| প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : ‘বিশ্বটাকে দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় করে’। এই যুগান্তকারী পংক্তিটি যিনি রচনা করে ছিলেন তিনি বাঙালী ও বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। প্রাজ্ঞজনদের মতে কবি নজরুলের এই বিস্ময়কর সংকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে আজকের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির মাধ্যমে। বর্তমান বিশ্বে মোবাইল ফোন হচ্ছে বিজ্ঞানের এক বিষ্ময়কর আবিস্কার। মোবাইল ফোনের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া মোবাইল ফোন চার্জ দেয়া কঠিন। বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশ বাংলাদেশে মোবাইল চার্জ দেয়া বহু ক্ষেত্রেই কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে স্মার্টফোনগুলো দিনে কয়েকবার চার্জ দিতে হয়। দেশের গ্রামগুলোতে স্মার্টফোন চালানো একেবারেই কঠিন। দিনের পর দিন বিদ্যুৎহীন থাকে গ্রামগুলো। অচল হয়ে পড়ে হাজার হাজার মোবাইল সেট। এমনই এক সংকটময় মুহূর্তে নরসিংদীর পলিটেকনিক একাডেমী ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছে হস্তচালিত মোবাইল চার্জার। একাডেমীর ইলেকট্রনিক বিভাগের সপ্তম পর্বের ছাত্র আরমান মিয়া ও রহমত উল্লাহ যৌথভাবে এই হস্তচালিত মোবাইল চার্জারটি উদ্ভাবন করেছে। ক্ষুদে বিজ্ঞানীগণ তাদের বর্ণনায় বলেছেন, একটি পুলি, একটি কাঠের তৈরী বেজ, একটি ‘১২ভি ডিসি মটর’, বেল, ৬টি ক্যাপাসিটর, ৭৪০৫ আইসি রেগুলেটর, হিট সিং, পিসিবি বোর্ড ও ক্যাবল সমন্বয়ে তৈরী করা হয়েছে এই চার্জারটি।
চার্জারটির গঠন প্রণালীতে বলা হয়েছে, একটি পুলি ও একটি ১২ ভি ডিসি মটরকে বেলের সাহায্যে সংযুক্ত করে ১২ভি ডিসি মটরের আউটপুট হিসেবে দুটি ক্যাপাসিটর ও একটি রেগুলেটরকে কন্ট্রোলার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরপর একটি পুলি দিয়ে ফিতার সাহায্যে ১২ভি ডিসি মটরটি ঘুরানো হয়। মটরের ইনপুটে দেয়া যান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে মটর হতে আউটপুট হিসেবে পাওয়া যায় ডিসি এনার্জি। এই ডিসি এনার্জিকে ১০০০ মাইক্রো ফ্যারাড ক্যাপাসিটরের মাধ্যমে স্টোর করা হয় এবং স্টোরকৃত এনার্জি রেগুলেটর ৭৮০৫-’র মাধ্যমে নির্দিষ্ট ৫ভি ডিসি এনার্জিতে পরিণত করা হয়। এরপর এই ভোল্টেজকে ১০০ ফ্যারাড ক্যাপাসিটরের মাধ্যমে ফিল্টার করে ইউএসবি সার্কিটে নিয়ে আসা হয়। এই হস্তচালিত চার্জারের উপকারীতা সম্পর্কে বলেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে, দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়ায়, লোডশেডিং অবস্থায় এই চার্জার ব্যবহার করা যাবে। শুধু তাই নয় অন্ধকারে এ থেকে বাল্ব জ্বালানোও সম্ভব হবে। এই চার্জারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৪৪ ভোল্টের ডিসি এনার্জিও উৎপন্ন করা সম্ভব। এই হস্তচালিত মোবাইল চার্জারটি অতি স্বল্প খরচে তৈরী করা যাবে এবং স্বল্প মূল্যে বাজারজাত করাও সম্ভব হবে। এই হস্তচালিত মোবাইল চার্জারটি স¤প্রতি নরসিংদী জেলা প্রশাসন আয়োজিত ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় প্রদর্শন করা হয়। শত শত মানুষ চার্জারটি দেখে বুঝে উদ্ভাবক ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা এ ক্ষেত্রে আরো বেশী বেশী গবেষণার মাধ্যমে চার্জারটির মান উন্নয়নের পরামর্শ দেন।
নরসিংদী পলিটেকনিক একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক একএম শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার একাডেমীর ছাত্ররা গবেষণা ও উদ্ভাবনে আগ্রহী। কিন্তু একাডেমীর সীমাবদ্ধতার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার যদি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্ভাবনী শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে চায় দেশ ও জাতির স্বার্থে সরকারকে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষণাসহ গবেষণার ক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। আর তা হলেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেধাবী ছাত্ররা তাদের উদ্ভাবনী কাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নরসিংদী

১১ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ