Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় জাগরণের অনন্য নেতা মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান

| প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এ জেড এম শামসুল আলম : মাওলানা হযরত মুহাম্মদ আবদুল মান্নানের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো দৈনিক ইনকিলাব। পাকিস্তান সৃষ্টিতে দৈনিক আজাদের যে ভূমিকা ছিল, বাংলাদেশ সৃষ্টিতে দৈনিক ইত্তেফাক যে মূল্যবান অবদান রেখেছে বাংলাদেশে ইসলামী চিন্তা-চেতনা সংহতকরণে দৈনিক ইনকিলাবের অবদান অনুরূপ। মুসলিম চেতনাবোধে উদ্বুদ্ধ দৈনিক সংবাদপত্রের মালিকানা এবং ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের দুজন মাওলানা অনন্য অবদান রেখেছেন। একজন হলেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আকরাম খাঁ। দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন ইনকিলাব প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল মান্নান।
বাংলাদেশ সৃষ্টির পর ইসলামী চেতনাভিত্তিক ইনকিলাবের ন্যায় পত্রিকার সফলতা ছিল প্রায় অসম্ভব এবং অপ্রত্যাশিত। মাওলানা আবদুল মান্নান এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। সর্বগ্রাসী হতাশার দিগন্তে ইসলামী চেতনাসম্পন্নদের নিকট মাওলানা আবদুল মান্নান উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক।
দৈনিক ইনকিলাবের মাধ্যমে দ্বীনি চেতনাসম্পন্নদের আশা-আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন ও কল্পনা বিমূর্ত হয়ে উঠে। যে কাজ সম্পাদন করা ও সাফল্য অর্জন করা লাখ লাখ পাশ্চাত্য শিক্ষিত ইসলামী চেতনাসম্পন্নদের পক্ষে সম্ভব হয়নি, সে কাজের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন মাওলানা আবদুল মান্নান।
রাজনৈতিক সাফল্য
বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে সফলতম ব্যক্তিত্ব হলেন মাওলানা আবদুল মান্নান। তিনি এক সময় ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের সেক্রেটারি জেনারেল যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফিল্ড মার্শাল মুহাম্মদ আইয়ুব খাঁন।
বাংলাদেশ সৃষ্টির পর মাদ্রাসা শিক্ষিতদের মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম মন্ত্রিত্বের আসন অলংকৃত করেছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন মাওলানা আবদুল মান্নান। ১৯৮৭-৮৮ সালের বন্যার তা-বে বিধ্বস্ত বাংলার ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ছিলেন মাওলানা আবদুল মান্নান।  মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় মন্ত্রী।
অক্টোবর ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত মাওলানা এম এ মান্নান ছিলেন ইস্ট পাকিস্তানের মুসলিম লীগের সেক্রেটারি জেনারেল। তখন ইষ্ট-পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিচারপতি আবদুল জব্বার খাঁন। তিনি পাকিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনীত হওয়ার পর ফকির আবদুল মান্নান ইষ্ট পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
মাওলানা এম এ মান্নানের পর ময়মনসিংহের  ফখরুদ্দিন আহমেদ ইষ্ট পাকিস্তান মুসলিম লীগের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের (মন্ত্রণালয়ের) দায়িত্বে নিয়োজিত পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ছিলেন।
১৯৬৫ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৬৮ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মাওলানা এম এ মান্নান পাকিস্তান এডভাইজরি কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডলজির সদস্য ছিলেন। এ এডভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যদের পদ ছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং পাকিস্তান সরকারের কেন্দ্রীয় সচিবদের সমপদমর্যাদার।
আরবি ভাষায় দক্ষতা
মাওলানা আবদুল মান্নান আরবি ভাষায় অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং সাবলীল ভঙ্গিতে আরব দেশীয়দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন। শুধু সাধারণ আরব নয়, আরব দেশীয় রাজা-বাদশাহ, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের একটি প্রধান কারণ হলো মাওলানা আবদুল মান্নানের উন্নত আরবি ভাষাজ্ঞান।
আরবিতে পারদর্শিতার জন্য তার পক্ষে তাফসীর এবং হাদিছ শাস্ত্রে গভীর প্রজ্ঞার অধিকারী হওয়া সহজ হয়েছে। তিনি সিয়াহ্ সিত্তার ওপরে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে দেশের সেরা হাদিছ বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন।
প্রথম জীবনে মাওলানা আবদুল মান্নান ছিলেন ফরিদগঞ্জ থানার ইসলামপুর আলিয়া মাদ্রাসার হাদিসের শিক্ষক এবং পরবর্তীতে ঐ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। তিনি হাদিছের অধ্যাপনা করতেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সফল। পরবর্তী জীবনে অন্যান্য মাদ্রাসা সফরকালে তিনি যে মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন এ বিষয়টি আনন্দের সঙ্গে উল্লেখ করতেন এবং মাদ্রাসায় হাদিছের ক্লাস নেয়ার প্রস্তাব করতেন।
হাটহাজারী মাদ্রাসা ভিজিটকালে ঐ মাদ্রাসায় হাদিছের যে কোনো অংশের ওপর দারুস দিতে তিনি ইচ্ছা ও সম্মতি জ্ঞাপন করেন। সময়ের অভাবে তা সম্ভব হয়নি।
দানশীলতা
মাওলানা আবদুল মান্নান একজন দীর্ঘ হস্তবিশিষ্ট উদার প্রাণ ব্যক্তি। মাদ্রাসা এবং বিপদগ্রস্তদের জন্য তিনি একজন অকুণ্ঠ দাতা। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও তার দানশীলতা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। দিল্লীর লাল কেল্লার নিকটে শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবীর মাজার জিয়ারতে গিয়েছিলেন মাওলানা আব্দুল মান্নান। শাহ্ ওয়ালীউল্লাহর মাজার সংলগ্ন রয়েছে বহুসংখ্যক অলী, কামেল ও বুজর্গের মাজার। ঐ মাজার জিয়ারতকালে মাজারসংলগ্ন মাদ্রাসা পরিদর্শনের সময় মাওলানা মান্নান কয়েকশ’ ডলার দান করেন, যদিও সফরের সময় দানশীলতার প্রতি তেমন উৎসাহ দেয়া হয় না।
ইসলামপুর আলিয়া মাদ্রাসা
মাওলানা মান্নানের পৈতৃক গ্রাম ইসলামপুরের পূর্ব নাম ছিল দেবীপুর। তারই প্রচেষ্টায় দেবীপুর নাম পরিবর্তিত হয়ে নতুন নামকরণ হয় ইসলামপুর। ফরিদগঞ্জ থানায় ইসলামপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত আলিয়া মাদ্রাসাটি উন্নয়নে মাওলানা মান্নানের ব্যক্তিগত আগ্রহ ও উদ্যম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মাদ্রাসার জন্য তিনি তার পৈতৃক জমি ও পৈতৃক ভবনও দান করেন। ভবনটি মাদ্রাসার অতিথি ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আঙ্গিনায় রয়েছে তার পিতা মাওলানা ইয়াছিনের কবর। মুহাম্মদ আব্দুল মান্নানের জ্যেষ্ঠ-ভ্রাতা মাওলানা আব্দুস সালাম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ
মাদ্রাসাসংলগ্ন মসজিদ উন্নয়নেও মাওলানা আবদুল মান্নান গভীর উৎসাহ নেন। মাওলানা মান্নানের পিতা শাহ্ ইয়াছিন ছিলেন একজন আলেম ও বুজর্গ। মাওলানা মান্নানের মাতুলালয় ছিল ইসলামপুর থানার কেরওয়া পল্লীতে। তার মাতামহ ছিলেন শাহ্ সুফী আব্দুল মজিদ। ইসলামপুর আলিয়া মাদ্রাসার নামকরণ করা হয়েছে মাওলানা আবদুল মান্নানের মাতামহ শাহ্ সুফী আবদুুল মজিদের নামে। শাহ্ সুফি আবদুুল মজিদ ছিলেন ফুরফুরার স্বনামধন্য অলী এ কামেল আবু জাফর সিদ্দিক (র.)-এর খলিফা।
মাদ্রাসা শিক্ষিত আলেমের সাফল্য
দুনিয়াদারীর মাপকাঠিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সফলতম মাদ্রাসা শিক্ষিত আলেম হলেন মাওলানা আবদুুল মান্নান। ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, বারিধারাতে আমার জানামতে দু’জন মাদ্রাসা শিক্ষিতের ব্যক্তিগত ভবন আছে। একজন মাওলানা আবদুল মান্নান। আরেকজন হলেন বহু ভক্তজনের মনের অধিনায়ক আটরশির মরহুম পীর সাহেব হুজুর কেবলা হাসমত উল্লাহ্ (র:)।
ইসলামপুর ইসলামী মিশন
মাওলানা মান্নানের আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় ইসলামপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় বিরাট ইসলামী মিশন। এর পরিচালয়নায় রয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। এর জন্য ভূমি ও অর্থ সংগ্রহে বিশেষ অবদান রেখেছেন মাওলানা আব্দুল মান্নান। ইসলামপুর মসজিদ স্থাপনে মাওলানা আবদুল মান্নান অতি উৎসাহী। তার হাত অবারিত। হৃদয় উদার।
গাউছুল আজম মসজিদ নির্মাণ
বাংলাদেশের সর্বত্র মসজিদ নির্মাণে উৎসাহ প্রদান, অর্থ সংগ্রহে বুদ্ধি-পরামর্শ ও অন্যান্য বিষয়ে সদা সক্রিয় সহায়তা দান মাওলানা মান্নানের একটি সহজাত প্রবণতা। মসজিদ স্থাপনে বা সম্প্রসারণে সহায়তা করা মাওলানা মান্নান ব্যক্তিগত কাজের মতই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। ঢাকা শহরে গাউছুল আজম মসজিদ মাওলানা আবদুুল মান্নানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি।
এই মনোরম সুরম্য মসজিদটি স্থাপত্যকলার এক অপরূপ নিদর্শন। এর জন্য অর্থ সংগ্রহ করা, জমি বরাদ্দ ও নকশা প্রণয়ন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে মাওলানা মান্নানের মেধা ও প্রজ্ঞা নিয়োজিত হয়েছিল। গাউছুল আজম মসজিদটি শুধু মসজিদই নয় স্থাপত্য কর্ম হিসেবে বহু শতাব্দী পর্যন্ত স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
লেখক : সাবেক সচিব, গবেষক



 

Show all comments
  • সোহরাব ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ২:১৪ এএম says : 0
    জাতির এই ক্রান্তিকালে তার মত নেতার খুব প্রয়োজন ছিলো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাওলানা আবদুল মান্নান
আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->