Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদালতে মুসলিম নিষেধাজ্ঞা স্থগিত আপিল করবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার

| প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের একটি আদালত মুসলিম অধ্যুষিত সাত দেশের নাগরিকদের উপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে, প্রথমবারের মত যা দেশজুড়ে কার্যকর হবে। গত শুক্রবার ওই আদেশ দেয় হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সরকারের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এখতিয়ার নেই; সরকারি আইনজীবীদের এ দাবির পরিপ্রক্ষিতে ফেডারেল জজ জেমস রবার্ট ওই আদেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্রমুখী অভিবাসন সীমিত করতে ২৭ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। তবে সরকার বিচারকের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে, তারা মনে করে  ট্রাম্পের দেয়া ওই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আইনগত ও যথার্থ। হোয়াইট হাউজ থেকে আরও বলা হয়েছে, আদালতের এই রায় কার্যকর বন্ধ করতে জরুরি ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইন মন্ত্রণালয়। ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর গত সপ্তাহে তিনি মুসলিম প্রধান ৭টি দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন নির্বাহী আদেশে। এ নিষেধাজ্ঞাকে বিশ্লেষকরা দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধের অংশ হিসেবে। এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে, বৃটেনে ও বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রতিবাদ হয়েছে। বৃটিশ পার্লামেন্টে কড়া বিতর্ক হয়েছে। দাবি উঠেছে, বৃটেনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারি সফর বাতিলের জন্য। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন তার অবস্থানে অনড়। ট্রাম্পের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার প্রত্যাহার আদেশ দেয়া বিচারককে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিয়োগ দেন নি। বিচারক জেমস রবার্টকে নিয়োগ দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তার দেয়া নির্দেশের পর যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও সীমান্ত প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংস্থা বিমানসংস্থাগুলোকে বলেছে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় আটকে পড়া ভ্রমণকারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। বিচারকের শুক্রবারের ওই নির্দেশের ফলে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সঙ্গে কাজ শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখন ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিমানবন্দরে যেসব মানুষ আটকে পড়েছেন তাদের অনেকের ভাগ্য খুলে যেতে পারে। তবে যদি সরকারের আপিলে তাৎক্ষণিক কোনো রায় আসে তাহলে পরিস্থিতি ভিন্নও হতে পারে। কিন্তু বিচারক জেমস রবার্টসের দেয়া রায় তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। কারণ, এটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে বেশি সাংবিধানিক। ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শুধু ওয়াশিংটনেই স্থগিত করেন নি বিচারক জেমস রবার্ট। তিনি এ প্রত্যাহার আদেশ পুরো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দিয়েছেন। তিনি এমন রায় দেয়ার ফলে উল্লাস করেছেন ওয়াশিংটনের গভর্নর জে ইন্সলি। তিনি এটাকে তার রাজ্যের জন্য বিজয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো ব্যক্তি এমনকি প্রেসিডেন্টও আইনের ঊর্ধ্বে নন। রাজ্যের এটর্নি জেনারেল বব ফার্গুসন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত যে নির্বাহীআদেশ দিয়েছেন তা বিচারকের রায়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থগিত হয়ে গেছে। তিনি আশা করেন, কেন্দ্রীয় সরকার এ রায়ের প্রতি সম্মান দেখাবে। উল্লেখ্য, বিচারক জেমস রবার্ট ওয়াশিংটনের সিয়াটলে তার দায়িত্ব পালন করেন। তার আদালতে অভিবাসীদের এ ইস্যুটিকে তুলে ধরে ওয়াশিংটন ও পরে মিনেসোটা রাজ্য। ওয়াশিংটন থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে রাজ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী ও রাষ্ট্রীয় তহবিলে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। কারণ, এসব ছাত্রছাত্রী ও ফ্যাকাল্টির লোকজন বিদেশে গিয়ে আটকে পড়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২৭ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৭টি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এগুলো হলো ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন। এসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৯০ দিন কোনো ভিসা দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সিরিয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা অনির্দিষ্টকালের জন্য বলবৎ করা হয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের একজন আইনজীবীকে বিচারকপতি জেমস রবার্ট জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাতে ওয়াশিংটনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি রকম ক্ষতির শিকার হচ্ছে সে সম্পর্কে জানতে পান। একই সঙ্গে এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পিছনে মূল কারণ হিসেবে বলা হয় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলা। সব কিছু শুনে বিচারপতি জেমস রবার্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল তাতে ভ্রমণ নিষিদ্ধ তালিকার সাতটি দেশের কোনো মানুষ জড়িত ছিলেন না। ফলে তিনি ওই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন। সঙ্গে সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী গ্রুপগুলো তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল সেন্টারের স্টাফ এটর্নি নিকোলাস ইসপিরিতু বলেছেন, ট্রাম্পের আদেশের মধ্যে সাংবিধানিক মারাত্মক সমস্যা রয়েছে। এ আদেশের মাধ্যমে তাই প্রকাশ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মুখপাত্র এরিক ফেরেরো বলেছেন, আদালতের এই রায় স্বল্প সময়ের জন্য স্বস্তি দিয়েছে। এখন কংগ্রেসের উচিত হবে পদক্ষেপ নিয়ে এই বেআইনি নিষেধাজ্ঞা আটকে দেয়া। এ বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি রাজ্য আদালতে গিয়েছে। বোস্টনে ডিস্ট্রিক্ট জজ নাথান গর্টনের আদালতে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ আনে নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলো। সেখানে মৌখিক বক্তব্য শুনে বিচারক তার সংশয়ের কথা প্রকাশ করেন। ওদিকে ভার্জিনিয়ার আলেক্সান্দ্রিয়ায় ডিস্ট্রিক্ট জজ লিওনি ব্রিংকেমা কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ওইসব মানুষের তালিকা দিতে যাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না অথবা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। ওদিকে ট্রাম্পের আদেশকে অসাংবিধানিক দাবি করে গত শুক্রবার হাওয়াইয়ে একটি মামলা হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ওই আদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। ওদিকে বিভিন্ন রাজ্যে বিমানবন্দরে আটকে পড়া মানুষ পড়েছেন ভয়াবহ সঙ্কটে। জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে আটকে পড়া বেশ কিছু মুসল্লিকে শুক্রবার খোলা স্থানেই জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ