২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
বিশ্ব আজ নূতন জ্বরে আক্রান্ত- জিকা জ্বর। আমেরিকার দেশসমূহে এর ব্যাপকতা দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে সবার।
জিকা ভাইরাস জিকা : চঐঊওঈ হিসাবে ঘোষণা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধি ২০০৫ অনুযায়ী মধ্য আমেরিকার জিকা মহামারীকে চঁনষরপ ঐবধষঃয ঊসবৎমবহপু ড়ভ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈড়হপবৎহ (চঐঊওঈ) হিসাবে ঘোষণা করেছে। যেভাবে জিকা মহামারি ছড়িয়ে পড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করছে, তাতে চঐঊওঈ হিসাবে ঘোষণা অবধারিত ছিল। এই মহামারিতে তিনটি শর্ত পূরণ হয়েছে; এটি একটি নতুন ধরনের রোগ, সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, পর্যটন এবং বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। জিকাকে চঐঊওঈ ঘোষণা করায়, এই মহামারির জনস্বাস্থ্য সমস্যা অন্য এক মাত্রা পেল এবং এই রোগ মোকাবেলায় তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
ছড়িয়ে পড়ছে জিকা ভাইরাস
দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে জিকা ভাইরাস; দক্ষিণ, মধ্য এবং উত্তর আমেরিকার দুটো দেশ কানাডা এবং হাইতি ছাড়া সকল দেশ আক্রান্ত হতে যাচ্ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। ব্রাজিলে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি দেখা দেয়া জিকা এখন আমেরিকার দেশে দেশে মূর্তিমান আতঙ্ক; ছোট মস্তিষ্কের শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় মাবাবারা দিশেহারা। জরুরি অবস্থা জারিসহ নারীদের গর্ভধারণ না করা এবং জিকা পজিটিভ হলে গর্ভপাতের ব্যাপার ঘটছে। আফ্রকায় ইবোলা সংকটের পর আমেরিকার জিকা সংকট বিশ্ব স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আপাতত কোন টিকা নেই বলে প্রতিরোধে মূল নজর দিতে হবে বাহক মশা এডিস নিয়ন্ত্রণে, যা সহজ সাধ্য নয়। সামনে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিকও হুমকির মুখে পড়েছে। দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুন, এডিস মশাকে কামড়াতে দেবেন না, এই মশা শুধু জিকা নয় ডেংগু এবং চিকুংগুনাইয়া রোগও ছড়ায়
জিকা ভাইরাস শঙ্কা : তরশধ ঠরৎঁং ঈড়হপবৎহ
সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে; জ্বরসহ অন্যান্য উপসর্গের পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুদের মস্তিষ্কে সংক্রমণ শঙ্কা ও আতঙ্কের সৃষ্টি করছে; ব্রাজিলের একটি এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছে। আগের বছরগুলোর তুলনায় ২০১৫তে আক্রান্তের যে বৃদ্ধি তা ২০১৬-এর প্রারম্ভেচলমান আছে।
ডেংগু ভাইরাসের গোত্রিয় ভাই ছড়ায়ও ডেংগুর মতোই এডিস মশার মাধ্যমে। সাধারণত এটা মৃদু ঝরনের যে সংক্রমণ করে তাকে জিকা, জিকা রোগ বা জিকা জ্বর বলা হয়। আফ্রিকায় ও এশিয়াতে সেই ১৯৫০ সাল হতে দেখা গেলেও ২০০৭ সাল থেকে এটা মাইক্রোনেশিয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় বিস্তারলাভ করছে। ডেংগু, পীতজ্বর এবং ওয়েস্ট নাইল রোগের মত এই রোগটিকে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হয়, কারণ এটা প্রতিরোধে কোন টিকা নেই, চিকিৎসায় নেই কোন ঔষুধ। এই আরএনএ ভাইরাসটি ১৯৪৭ সালে উগান্ডা জিকা বনের বানর হতে প্রথম সনাক্ত করা হয় এবং ১৯৬৮ সালে নাইজেরিয়াতে প্রথম মানুষের সংক্রমণ ঘটায়। জিকা ১৯৫১ হতে ১৯৮১ এই ত্রিশ বছর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এবং ভারত মালেশিয়াসহ কয়েকটি এশিয়ার দেশ সমূহে সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। সংক্রমণের স্থান হতে ভাইরাসটি ডেনড্রাইটিক কোষ এবং লিম্ফ নোড হয়ে রক্তপ্রবাহে মিশে যায় বলে ধারণা করা হয়।
দিনে কামড়ানো মশা, এডিসের নানা প্রজাতিতে জিকা শনাক্ত করা গেছে, মশায় এদের সুপ্তিকাল ১০ দিন এবং এরা মূলত বানর এবং মানুষে সংক্রমণ করে থাকে। এই ভাইরাসটি দুটো ভ্রুণের অ্যামনিওটিক ফ্লুইডে পাওয়া যাওয়ায় ধারণা করা হয় যে এরা প্লাসেনটা অতিক্রম করে এবং গর্ভস্থ ভ্রুণের মস্তিষ্কে সংক্রমণ সম্ভব। এমনকি যৌন মিলনেও জিকা ছড়াতে পারে বলে নজির পাওয়া গেছে।
সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে, সামান্য মাথা ধরা, ম্যাকুলোপ্যাপিউলার, জ্বর, গা ম্যাজ ম্যাজ, চোখের প্রদাহ এবং জোড়ায় ব্যথা। তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যে জিকা আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের ভ্রুণের মাইক্রোএনকেফালী বা ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক হতে পারে, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মস্তিষ্কের সেরিব্লাম ও ব্রেনস্টেম। আগের বছর ২০১৩ ও ২০১৪ এর তুলনায় ২০১৫ সালে ক্ষুদ্র ব্রেন আশাঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে; যথাক্রমে ১৪৭ ও ১৬৭-এর জায়গায় ২০১৫ তে ২৭৭২টি। ঊঁৎড়ঢ়বধহ ঈবহঃবৎ ভড়ৎ উরংবধংব চৎবাবহঃরড়হ ধহফ ঈড়হঃৎড়ষ ২০১৫ সালে মাইক্রোএনকেফালীর সাথে গুলেনবেরী সিনড্রোমের সম্ভাব্য সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করেছে। ল্যানসেট ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত জার্নালে ১৩৪টি ক্ষুদ্রমস্তিষ্কের সাথে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করেছে। এখনও ২১৬৫টি কেস তদন্তাধীন আছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেও কিছু রোগী পাওয়া যাচ্ছে তবে সেগুলো আমদানি করা, স্থানীয় ভাবে সংক্রমণ হয়নি।
জিকা ভাইরাস সংক্রমণ আমাদের দেশে হয় না, তা বুকে হাত দিয়ে বলা যাবে না; পূবর্কালে যে ভারতে হয়েছে বলে বলা হচ্ছে তার অংশ আমরাও ছিলাম; আমাদের দেশেও জ্বর, ৎধংয, জোড়া ব্যথা নিয়ে রোগী পাওয়া যায় যেগুলো ডেংগু নিগেটিভ পরীক্ষায় আমরা শুধু ডেংগু হয় নাই বলে সিদ্ধান্ত দেই; জিকার তো খোঁজ-খবর করি না। আমাদের দেশেও শিশুরা ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মায়, তারও কারণ হিসেবে জিকাকে আমরা সন্দেহ করি না। জিকা এখনও আমাদের দেশে সনাক্ত হয়নি, কিন্তু এ রোগটিকে নজরদারিতে আনা দরকার, ডেংগুর পাশাপাশি জিকাকেও ভাবা উচিৎ; গুলেন বেরি সিনড্রোমের জন্যও তা প্রযোজ্য।
ষ ডা. শাহজাদা সেলিম
এমবিবিএস, এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম), এমএসিই (ইউএসএ)
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ।
কমফোর্ট ডক্টর’স চেম্বার, ১৬৫-১৬৬, গ্রীনরেধাড, ঢাকা, ফোন ঃ ৮১২৪৯৯০, ৮১২৯৬৬৭, ০১৭৩১৯৫৬০৩৩, ০১৫৫২৪৬৮৩৭৭, ০১৯১৯০০০০২২
বসধরষ: ংবষরসংযধযলধফধ@মসধরষ.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।