পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সড়কের উল্টো দিকে গাড়ি না চালানোর সতর্ক বাণী প্রায় প্রতিদিনই ট্রাফিক বিভাগ থেকে শোনা যায়। সাধারণের কেউ কোনো জরুরি প্রয়োজনে উল্টো রাস্তায় চলাচল করলে রাস্তার মোড়ে মোড়ে যারা দায়িত্বে থাকেন তাদের তৎপরতা সেক্ষেত্রে লক্ষণীয়। অথচ খোদ রাজধানীর বনানীতে উল্টো পথে চলা পুলিশের নম্বরবিহীন একটি মিনিবাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। নিহত রিয়াজ উদ্দীন ধানমন্ডির আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল। ঘটনার বিবরণে প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ঘটনার সময়ে বিমানবন্দর থেকে বনানীমুখী গাড়ির চাপ অনেক বেশি ছিল। নৌবাহিনীর সদর দফতরের সামনে থেকে কাকলি পর্যন্ত সড়কটি ছিল গাড়িতে ঠাসা। এ সময়ে পুলিশের নম্বরপ্লেটবিহীন একটি মিনিবাস বনানী কবরস্থান ক্রসিংয়ে এসে উল্টো পথে কাকলির দিকে যেতে থাকে। ঠিক এ সময় কাকলি থেকে বিমানবন্দরমুখী মোটরসাইকেলের সাথে মিনিবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী গুরুতর আহত হন। ঘটনার পর মিনিবাসে থাকা পুলিশ সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে পার্শ¦বর্তী কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা রিয়াজ উদ্দীনকে মৃত ঘোষণা করেন। উল্টো পথে চলার কথা বনানী থানার ওসি স্বীকার করে বলেছেন, হঠাৎ একটি কভার্ডভ্যান মিনিবাসটির সামনে এসে পড়লে সংঘর্ষ এড়াতে মিনিবাসের চালক এ সময়ে ডানদিকে মোড় নেয়, ফলে মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তিনি আরো জানিয়েছেন ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং রিকুইজেশন করা আলোচ্য মিনিবাসটিতে যারা ছিলেন তারা ডিউটি শেষ করে ফিরছিলেন।
এদিকে ছাত্র নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেলে আশপাশ এলাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ঘটনাস্থলে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এসে বিচারের আশ্বাস দিলে ছাত্ররা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনাস্থলে আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মেহেদির মতে পুলিশের গাড়ি উল্টো দিকে কেন আসবে? তাদের তো আইন মানার কথা। উল্টো দিক দিয়ে না এলে আমার ভাই মারা যেত না। সে ওই গাড়িতে থাকা পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করেছে। শুধু তার কথা বলেই নয়, ভাবার রয়েছে Ñ কেন এবং কী কারণে ডিউটি থেকে ফেরার পথে উল্টো দিকে যেতে হলো। কে এর হুকুমদাতা? বাস্তবত, খোদ রাজধানীতে এক ভিন্ন প্রবণতার জন্ম হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, রাস্তার একপাশে মূলত ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে যখন জ্যাম লেগে থাকে, তখন সড়কের অন্যদিক দিয়ে উল্টো পথে এক মহলের যাতায়াত চলতে থাকে। এর আগে এ নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। এভাবে চলার সিদ্ধান্ত কাদের? কে বা কারা এটা ঠিক করেছেন, সেটি জনসাধারণের জানার অধিকার রয়েছে। খোদ রাজধানীতে এ ধরনের অনিয়মের অনেক খেসারত সাধারণের দিতে হচ্ছে। এ হচ্ছে একশ্রেণীর পুলিশ সদস্যের দায়িত্বহীনতা। গত কিছুদিনে একশ্রেণীর পুলিশের দায়িত্বহীনতার বহু নজির স্থাপিত হয়েছে। এমনকি উচ্চ আদালতও এ ব্যাপারে নজর দিয়েছেন। শুধু এক্ষেত্রেই নয়, লক্ষ করলে দেখা যাবে, একশ্রেণীর পুলিশের যানবাহন নিয়মকানুনকে তোয়াক্কা না করেই চলছে। যেহেতু এসব দেখার দায়িত্ব পুলিশেরই, তাই গাড়িতে পুলিশ লাগিয়ে নির্দ্বিধায় এসব করা হচ্ছে। সংগত বিবেচনা হচ্ছে, যাদের আইন মানার কথা তারাই যদি আইন ভাঙেন বা ভাঙার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকেন, তাহলে সাধারণের কাছে কোনো ভালো উদাহরণ থাকবে না। আলোচ্য ক্ষেত্রেও বলা যায়, মিনিবাসটি যখন ট্রাফিক নিয়ম ভেঙেছে তখন যদি সংশ্লিষ্টরা সতর্ক হতো তাহলে হয়তো দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা এড়ানো সম্ভব হতো। সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, দোষ যেন কভার্ড ভ্যানের। উল্টোদিকে চলায় কোনো সমস্যা হয়নি। এটাই মূলত আস্কারা। পুলিশ হলেই তার জন্য সাত খুন মাফ Ñ এ ধরনের ধারণাই হয়তো সমস্যা সৃষ্টি করে থাকতে পারে। সে কারণেই গোটা বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে দেখার সুযোগ রয়েছে।
আইন সকলের জন্যই সমান। ভিআইপি নিরাপত্তার যে নিয়ম রয়েছে, সেখানে উল্টো চলার কোনো বিধান নেই। সড়ক ব্যবস্থাপনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে অবশ্যই ট্রাফিক জ্যামের কোনো বাস্তবতা হয়তো থাকত না। কারো নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে ভাবা কাক্সিক্ষত নয়। আইন না মানার কারণে যে মায়ের বুক খালি হয়েছে, এখন যা কিছুই করা হোক না কেন তা পূরণ করা সম্ভব নয়। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা তদন্তের ও ঘটনার সাথে যুক্তদের শাস্তি প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। এটা যেন কথার কথা না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কেবল একজন চালক নয়, পুরো ব্যাপারটি কাদের অবহেলায় হয়েছে বা হতে পেরেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত অপরিহার্য। বিনা দোষে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রটি নিহত হলো তার পরিবারকে দ্রুতই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। সামগ্রিকভাবে এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আইন ভাঙার প্রবণতা থেকে সংশ্লিষ্টরা বিরত থাকবেন-এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।