Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খুলনার গতিহীন চাঞ্চল্য মামলা তদন্তে পিবিআই

| প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : জঙ্গি হামলা, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হওয়া খুলনার আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর গতিহীন (মামলা) বিশেষ অপরাধের শিকড় খুঁজে বের করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে বহু বছর আগে দায়ের হওয়া এসব মামলার আলামত নষ্ট হওয়া, স্বাক্ষী সংকট ও লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকাসহ নানা জটিলতায় তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্তও হচ্ছে সংস্থাটি। আবার, ল্যাব ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শক না থাকায় তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়ে ঢাকার মুখাপেক্ষী থাকতে হয় তাদের। রয়েছে জনবল সংকটও।
পিবিআই খুলনার সুত্র জানিয়েছে, নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকায় কাদিয়ানী মসজিদে হামলা হয় ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর। ঘটনাস্থলে নিহত হন নূর উদ্দিন (৩৩) ও জাহাঙ্গীর হোসেন (২৪)। আহত হয় ১০/১২জন। ঘটনার পরদিন পুলিশ বাদি হয়ে মামলা হয় কোতয়ালী থানায়। এ ঘটনায় পরদিন খুলনার সদর থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল খায়ের মাতব্বর বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। সেই থেকে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি মিলে মোট ৮ জন কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেও শেষ নামাতে পারেন নি। সর্বশেষ, ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর আদালতের মাধ্যমে মামলাটি তদন্তভার পেয়েছেন পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক সরদার বাবর আলী। পরে ১৩জন স্বাক্ষীর জবানবন্দিসহ পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক খন্দকার মিরাজ বিল্লাহকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জেএমবি নেতা মুফতি হান্নানের ভাই মাওলানা মো. ওবাইদুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহকে দু’দিনের রিমান্ডে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পিবিআই। এখন মূলরহস্য উদ্ঘাটনে আশার আলো দেখছে পিবিআই। তদন্ত শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক সরদার বাবর আলী। তিনি জানান, এ মামলার অন্যতম আসামি জেএমবি নেতা মুফতি হান্নান, তার ভাই মাওলানা ওবায়েদুর রহমানসহ বড় বড় জঙ্গি নেতারা। তিনি বলেন, ঘটনার ওই বছর রাজশাহীতেও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। দু’টি ঘটনার কোন সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা এখন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, দাকোপে গ্রীণ হাউজিং এন্ড এনার্জী লিমিটেডের ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৭টাকা আত্মসাতে ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর মামলা হয়। গ্রীন হাউজ এনার্জী কোম্পানীর ব্রাঞ্চ ম্যানেজার প্রনব কুমার গ্রাহকের প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা আত্মসাত করেন। মামলাটিতে প্রথমে দাকোপ থানার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এস আই জাফর আলী এবং পরে ওসি জিএম নজরুল ইসলাম পৃথক তদন্তে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাননি মর্তে প্রতিবেদন দেন। বাদির নারাজীর প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটির তদন্ত করে আসামির অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করে, মামলাটির বিচার কার্য্য শুরুর পথে।
এ ছাড়াও দৌলতপুর থানায় ২০১৫ সালে আলোচিত হত্যা মামলার এজাহার নামীয় তিন আসামির নাম বাদ দেয় পুলিশ। মামলার বাদির নারাজীর প্রেক্ষিতে পিবিআই তদন্তের পর তাদের সম্পৃক্ততার সত্যতা পেয়ে এনায়েত হোসেন, মো. সেলিম ও মো. ইকবাল হোসেনসহ এজাহারের ১নং আসামি এমদাদ হোসেন কালুর বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করে। ডুমুরিয়াতে সৈয়দ আমজাদ হোসেন হত্যাকাÐেও জড়িত আসামিদের নাম চার্জশীট থেকে বাদ দেয় পুলিশ। বাদি নারাজী দেয়ার পর তদন্তে আসামিদের জড়িত থাকার প্রমান পায় পিবিআই।
সূত্রটি বলছে, অধিকাংশ মামলাগুলোতে পুলিশী তদন্তে অর্থের বিনিময়ে আসামিদের বাদ দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। যেগুলো পরবর্তিতে পিবিআই তদন্তে আসামিদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সূত্রটি আরও জানান, ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে খুলনায় কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত জেলা ও মহানগরী মিলে ২৩৫টি সিআর ও ৭০টি জিআর মোট ৩০৫টি মামলা হাতে নিয়েছেন তারা। এরমধ্যে ২৬টি জিআর ও ১৭৬টি সিআর মামলা নিষ্পত্তি করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এ ছাড়াও তদন্তাধীন রয়েছে ৪৪টি জিআর ও ৫৯টি সিআর মামলা। আমেরিকার এফবিআই’র (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) আদলে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ পুলিশের স্বতন্ত্র পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) বিভাগীয় সদর খুলনায় কার্যক্রম চলছে।
পিবিআই’র খুলনা ইউনিট প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিনের গতিহীন মামলা, চাঞ্চল্যকর হত্যাকাÐ, অস্ত্র আইন ও তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা মামলা নিয়ে এ পর্যন্ত বেশী কাজ করেছে পিবিআই। তবে পুরাতন মামলাগুলো তদন্ত করতে গিয়ে সাক্ষী না পাওয়া, ঘটনার আলমত নষ্ট হয়ে যাওয়া, বাদিদের অনাগ্রহসহ বিভিন্ন কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি; মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন দ্রæত সম্ভব দিয়ে দেয়ার। খুলনায় কোন ল্যাব না থাকা ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শক না থাকার কারণে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে হয় ঢাকায়। কনস্টেবল সংকট রয়েছে। ফলে সেগুলোর মতামতসহ প্রতিবেদন আসতে সময়ক্ষেপন হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ