যেভাবে ৫০০
ক্লাব ফুটবলে গোলের প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে। এবার সেই লিওনেল মেসি উঠে গেলেন আরেক উচ্চতায়। বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ৫০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মেসি।
ইমরান মাহমুদ : টেনিসে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়- এই প্রজন্মের পরে কারা? সেই রেশ ধরেই রজার ফেদেরার, সেরেনা উলিয়ামসদের মত তারকারা যখনই ত্রিশ পেরুলেন তখন থেকেই শুরু এই ধরনের গুঞ্জন। কিন্তু বোদ্ধাদের ভাবনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বয়স যতই বাড়ছে ততই যেন শাণিত হচ্ছে তাদের ব্যাট। এবরের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেই দেখুন। পুরুষ ও নারী এককে যে চারজন ফাইনালে উঠলেন এর তিনজনের বয়সই পঁয়ত্রিশোর্ধো! ৩৫ বছর বয়সেও এখনো কোর্টে বীরদর্পে রাজত্ব করছেন সেরেনা। বড় বোন ভেসাসকেই বা বাদ দেবেন কিভাবে। উইলিয়ামস বড় বোন যখন প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে উঠলেন তখন কি কখনো কল্পনাও করতে পেরেছিলেন যে ১৪ বছর পরেও তাকে দেখা যাবে একই আসরের ফাইনালে! শেষ বার যখন কোন গ্র্যান্ড সø্যামের ফাইনালে খেলেন সেটাও তো ৮ বছর আগে! আরো আশ্চর্যেও বিষয় হল ফাইনালে আবারো মুখোমুখি দুই বোন!
২০০৩ সালে যেবার প্রথম ও একমাত্র অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে উঠলেন তখন ছোট বোনের কাছে হেরে স^প্নের সমাধি ঘটেছিল সাতটি গ্র্যান্ড সø্যামের মালিক ভেনাসের। চৌদ্দ বছর পর নিয়তি আবারো তাদের দাঁড় করালো একই মঞ্চে।
কিংবা রজার ফেদেরারের চমকটাও বা কম কিসে? চোটের সাথে যুদ্ধ করে ১৭তম বাছাই হিসেবে ৩৫ বছর বয়সে এসে যে তিনি ফাইনাল খেলবেন সেটাই বা কজনের ভাবনায় ছিল। এরপরও তা সম্ভব হয়েছে হয়তো তিনি ফেদেরার বলেই। রেকর্ড ১৭টি গ্র্যান্ড সø্যাম যার নামের পাশে তাকে নিয়ে এ ধরনের বাজি ধরাই যায়। অস্ট্রেলিয়ার কেন রোজওয়ালের পর সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে কোনো গ্র্যান্ড সø্যামের ফাইনালে ওঠেন সুইস ম্যাস্ট্রো। ১৯৭৪ সালে রোজওয়াল ইউএস ওপেনের ফাইনালে খেলেছিলেন ৩৯ বছর বয়সে। ক্যারিয়ারে পঞ্চম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের জন্য আগামী রোববার কোর্টে নামবেন সপ্তদশ বাছাই ফেদেরার। সর্বশেষ ২০১০ সালে তিনি প্রতিযোগিতাটির শিরোপা জিতেছিলেন।
তবে এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে চমকের শুরু কিন্তু আরো আগে থেকে। প্রায় এক যুগ ধরে যে মেলবোর্ন পার্ক শাসন করছেন নোভাক জোকোভিচ। এবারও তার হাতেই বছরের প্রথম গ্র্যান্ড সø্যামের শিরোপা দেখছিল অনেকেই। কিন্তু তাদের সবাইকে চমকে দিলেন উজবেকিস্তানের এক অখ্যত যুবকÑ ডেনিস ইস্তোমিন। র্যাংকিংয়ের ১১৭ নম্বরে থাকা এ খেলোয়াড় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় করে দিলেন জোকোভিচকে! রেকর্ড সপ্তম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের স্বপ্নও ভেঙে চুর হয় সার্বিয়ান তারকার। ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন জোকোভিচের জন্য মেলবোর্ন পার্কে হার একেবারেই অপরিচিত। ২০১১ সাল থেকে মেলবোর্নে ৪১ ম্যাচ খেলে সার্ব তারকা এ নিয়ে দ্বিতীয় বার পেলেন হারের তিক্ত স্বাদ। টানা সাতটি শিরোপা জিতে যেখানে ইতিহাস গড়তে এসেছিলেন, সেখানে তাঁকে বিদায় নিতে হলো দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই।
১২ বারের গ্র্যান্ড সø্যাম চ্যাম্পিয়ন জোকোভিচের বিপক্ষে উজবেক প্রতিপক্ষ তীব্র লড়াই করেন শুরু থেকেই। র্যাঙ্কিংয়ের ১১৭ নম্বর খেলোয়াড়ের কাছে ৪ ঘণ্টা ও ৫০ মিনিটের লড়াইয়ে ৭-৬ (১০/৮), ৫-৭, ২-৬, ৭-৬ (৭/৫), ৬-৪ সেটে হেরে যান বিশ্বের ২ নম্বর টেনিস তারকা। রয় এমারসনকে পেছনে ফেলার স্বপ্নটা তাই অন্তত আরও এক বছর পিছিয়ে দিতে হল ১২টি গ্র্যান্ড সø্যাম জয়ী জোকোভিচকে।
ডেনিস ইস্তোমিন। নামটা খুব পরিচিত নয় টেনিস দুনিয়ায়। ৩০ বছর বয়সী উজবেকিস্তানের এই টেনিস খেলোয়াড় পেশাদারি টেনিসে শিরোপাই জিতেছেন মাত্র একবার। আর গ্র্যান্ড সø্যামে সাফল্য? ইউএস ওপেন ও উইম্বলডনে একবার চতুর্থ রাউন্ডে পা দিয়েছিলেন, এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে দুবার তৃতীয় রাউন্ডে খেলেছিলেন তিনি। ২০১০ ও ২০১৪ সালের সে দুটো ম্যাচে ইস্তোমিন হেরেছিলেন এই জোকোভিচের কাছেই। এবার তৃতীয় নয় দ্বিতীয় রাউন্ডেই দেখা হয়ে গেল দুজনের। এর আগে এই দুজন পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছিলেন। একটা সেটও জিততে পারেননি ইস্তোমিন। ২০১৪ সালে শেষ সেটে ৫টি গেম জেতাই ছিল তাঁর সেরা সাফল্য। আজ সেই গল্প যে বদলে যাচ্ছে সেটি জানিয়ে দিলেন প্রথম সেটেই।
২০০৮ সালের উইম্বলডনের পর এই প্রথম কোনো গ্র্যান্ড সø্যামের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিলেন। প্রিয় টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তো ২০০৬ সালে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়া পর চতুর্থ রাউন্ডের আগে কখনোই ফেরেননি ‘জোকার’। সাত বছরের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো র্যাঙ্কিংয়ে একশর বাইরে থাকা প্রতিপক্ষের কাছে হারের লজ্জায় ডুবলেন জোকোভিচ। ২৯ বছর বয়সী এই তারকা ২০১৬ সালের অলিম্পিকে হেরেছিলেন র্যাঙ্কিংয়ে ১৪৫তম স্থানে থাকা হুয়ান মার্তিন দেল পোত্রোর কাছে।
এবারের আসরে উজবেকিস্তানের স্তোমিন সরাসরি সুযোগ পাননি এই টুর্নামেন্টে। অংশগ্রহণের জন্য তাকে ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে আসতে হয়েছে। আর তার কাছেই বাজেভাবে হেরে বসলেন। সম্প্রতি সময়টা অবশ্য ভালো যাচ্ছিল না সাবেক নম্বর ওয়ান তারকার। গত মৌসুমের শেষ দিকে এসে নিজের শীর্ষস্থানটিও হারিয়েছেন অ্যান্ডি মারের কাছে। তাই বলে ১১৭ নম্বর বাছাইয়ের কাছে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নেওয়া!
চমকের এখানেই শেষ না। চতুর্থ রাউন্ডে এসে পতনের মিছিলে যোগ হয় নাম্বার ওয়ান মারে ও নারী এককে আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন এঞ্জেলিক কারবরারের নামও! এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন যেন তারকা পতনের মিছিল। ড্র’র আগে যে ৩২ জন খেলোয়াড়কে বাছাইয়ের তালিকায় রাখা হয়েছিল, তাঁর ২১ জনই বিদায় নেন চতুর্খ রাউন্ড থেকেই! হারের মিছিলে আছেন মার্টিন সিলিচ, টমাস বারডিচ, ডেভিড ফেরার, স্যাম কুয়েরির মতো বাছাই খেলোয়াড়েরাও। তবে সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দেন দ্বিতীয় রাউন্ডে দ্বিতীয় বাছাই নোভাক জোকোভিচের বিদায়।
প্রথমবারের মতো র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থেকে কোনো গ্র্যান্ড সø্যাম খেলতে এসেছিলেন অ্যান্ডি মারে। তবে ব্রিটিশ এই তারকাকে বিদায় নিতে হয়েছে চতুর্থ রাউন্ড থেকেই। তাও আবার বিশ্ব র্যাঙ্কিয়ের ৫০ নম্বর খেলোয়াড় অখ্যাত মিশা স্ভেরেভের কাছে হেরে। ২০০৬ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর কোনো গ্র্যান্ড সø্যামে এর চেয়ে কম র্যাঙ্কিংয়ের কোনো খেলোয়াড়ের কাছে হারেননি দুটি উইম্বলডন ও একটি ইউএস ওপেন জেতা মারে। মারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের আক্ষেপটা আরো বড়। এর আগে টুর্নামেন্টে পাঁচবার ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারেননি। সবশেষ গতবার জোকোভিচের কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয় তার।
সম্প্রতি দারুণ ফর্মে থাকায় তার শিরোপা জয়ের প্রত্যাশায় ছিল ভক্তরা। কিন্তু শেষ আটে যাওয়ার আগেই ছিটকে পড়তে হয়েছে স্কটিশ এই তারকাকে। র্যাঙ্কিংয়ে ৫০ নম্বরে থাকা জেভেরেভ এর আগে সর্বোচ্চ তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত গিয়েছিলেন কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যামে। সেটিও সেই ২০০৮ সালের উইম্বলডনে। এমনকি দ্বৈত ক্যারিয়ারেও কখনো শেষ আটের স্বাদ পাওয়া হয়নি তাঁর।
আসরের প্রথম থেকেই তাই অনেক প্রশ্নের জবাবই মিলছিল না। এরপরও শেষদিকে যে এত রোমাঞ্চ জমা পড়েছিলো কে জানতো? শুধু বর্তমান টেনিসেরই নয়, যারা শেষ ধাপে এসে পৌঁছেছেন তাদের নাম উচ্চারিত হয় কিংবদন্তিদের নামের পাশে। নারী এককে সেরেনা উইলিয়ামস, ভেনাস উইলিয়ামস, রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল- এই নামগুলোই কি রোমাঞ্চ ছড়ায় না? তার চাইতে বড় খবর, নারী এককে ফাইনালের মঞ্চটা। যে ম্যাচে মুখোমুখি দুই উইলিয়ামস পরিবারেরই দুই বোন।
ফাইনালে প্রতিপক্ষের অপেক্ষায় থাকা রজার ফেদেরার যদি নাদালকে পেয়ে যান তাহলে হয়তো ইতিহাস মারে-কারবার-জোকোভিচদের ব্যর্থতা ভুলে জমজমাট ফাইনালকেই মনে রাখবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।